লগইন করুন
খবর শোনাকালে আমি শুনতে পারলাম যে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী নাট্যকার নাজিব মাহমুজকে গোপনে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। যখন সংবাদ শুনছিলাম তখন আমার চিন্তা-ভাবনা তার লিখিত যে সব পুস্তক আমি পড়েছিলাম সে দিকে মোড় নিল এবং আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করলাম। এই স্পষ্ট চতুরতা সত্ত্বেও সে এই সত্য সম্বন্ধে কতই না মূর্খ যে- বাস্তবতা কল্পনার চেয়ে উৎকৃষ্ট। চিরস্থায়ী জীবন ক্ষণস্থায়ী জীবনের চেয়ে উত্তম এবং ঐশী বিধান মানবরচিত বিধানের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও উচ্চতর (স্তরের)।
أَفَمَن يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ أَحَقُّ أَن يُتَّبَعَ أَمَّن لَّا يَهِدِّي إِلَّا أَن يُهْدَىٰ
“যিনি সত্যের দিকে পথ প্রদর্শন করেন তিনি বেশি আনুগত্যের হক্কদার নাকি সে যাকে পথ প্রদর্শন করা না হলে সে পথ পায় না?” (১০-সূরা ইউনুসঃ আয়াত-৩৫)
তার বিস্ময়কর দৃষ্টিগোচর করার, উপস্থাপন করার ও অনুপ্রেরণা দান করার ক্ষমতাকে প্রয়োগ করে তিনি তার কল্পনা থেকে তার নাটক লিখেছেন। যা হোক শেষ পর্যন্ত তিনি শুধুমাত্র গল্পই রচনা করেছেন-সত্যের মাঝে যার কোন ভিত্তি নেই।
তার জীবনী পড়ার পর আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতিকে অনুধাবন করতে পেরে এটাকে আকড়িয়ে ধরেছি। (আর তা হলো) কেউ নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়ে অন্যকে সুখী করতে পারে না। আপনি যখন নিজেই দুঃখী ও শোচনীয় অবস্থায়, তখন আপনি অন্যকে সুখী করবেন এটাকে সঠিক মনে করা যেতে পারে না এবং কখনও স্বাভাবিক মনে করবেন না। কিছু কিছু লেখক প্রতিভাবান লোকদের প্রশংসা করেছেন এ কারণে নয় যে, তারা সুখ-শান্তিকে অনুধাবন করতে পেরেছেন, বরং এ কারণে যে, তারা অন্যের নিকট আলো নিয়ে আসার জন্য নিজেদের অন্তরে আলো জুলতে দিয়েছেন। যা হোক সত্যিকার প্রতিভাবান হলো সে ব্যক্তি, প্রথমে যার অন্তর আলোকিত হয় এবং পরে অন্যদেরকে পথ প্রদর্শন করে। সে সর্বপ্রথমে নিজের জন্য হেদায়েতের ও কল্যাণের একটি ভিত্তি তৈরি করবে এবং পরে অন্যদের জন্য।
আপনি নাজিব মাহফুজের লেখাসমূহে পরকাল ও অদৃশ্য জগৎ সম্বন্ধে কোন ধারণা পাবেন না। যা আপনি পাবেন, যদিও তা কল্পনা, স্বপ্ন ও আবেগের জগৎ তবুও তার রচনাবলি প্রলুব্ধকর ও মুগ্ধকর আর এ কারণে সেগুলো জনপ্রিয় ও সফল হয়েছিল। কিন্তু এ বিশাল রচনা সম্ভারে কোথায় কেউ উচ্চতর উদ্দেশ্য ও মহা সংবাদ খুঁজে পাবে? সত্য বলতে কি, তার বই-পুস্তকে এ সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে- এমনটি আপনি পাবেন না।
كُلًّا نُّمِدُّ هَٰؤُلَاءِ وَهَٰؤُلَاءِ مِنْ عَطَاءِ رَبِّكَ وَمَا كَانَ عَطَاءُ رَبِّكَ مَحْظُورًا
“আমি তোমার প্রভুর দান থেকে এদের ও ওদের প্রত্যেককে প্রদান করি। আর তোমার প্রভুর দান নিষিদ্ধ নয়।” (১৭-সূরা বনি ইসরাঈলঃ আয়াত-২০)
আমি স্বীকার করি যে, নাজিব মাহফুজ যে কাজ করতে শুরু করেছিলেন তা তিনি বুঝেছিলেন, কিন্তু মানুষ সব সময় যা বুঝতে চেয়েছে তা বুঝার জন্য এটা যথেষ্ট নয়। যা প্রয়োজন তা হলো আল্লাহ যা চান তা পূর্ণ করা।
“আল্লাহ চান তোমাদের নিকট (হালাল-হারামের বিধান) স্পষ্টরূপে বর্ণনা করতে। তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতি-নীতি তোমাদেরকে প্রদর্শন করতে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে। আর আল্লাহ হলেন মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞ। আর আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করতে চান অথচ যারা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে তোমরা ভীষণভাবে পথচ্যুত হয়ে যাও।” (৪-সূরা নিসাঃ আয়াত-২৬-২৭)
আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে। তবে জান্নাত বা জাহান্নামের দিকে ধাবিত (অগ্রসর) হচ্ছে বলে অহীর মাধ্যমে যে ব্যক্তি সনাক্ত হয়েছে তার কথা ভিন্ন। ব্যাপারটা ওরকম হওয়াতেই আমি লোকদেরকে তাদের কথা ও কাজ দ্বারা বিচার-বিবেচনা করতে পারি।
“কিন্তু তুমি অবশ্যই তাদের কথার ঢংয়ে তাদেরকে চিনতে পারবে।” (৪৭-সূরা মুহাম্মদ বা কেতালঃ আয়াত-৩০)
বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখলে পশ্চাৎচিন্তা এই হয় যে, যখন কারো অন্তর থাকে বিপথগামী ও মিথ্যায় ভরপুর, তখন যদি সে রাজাও হয় তবে এতে তার কি লাভ হবে? মেধা ও সফলতা যদি কাউকে মুক্তির পথে পরিচালিত না করে তবে তারা কোন শুভ কাজের জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হবে।