লগইন করুন
হে জীবনের প্রতি বিরাগ ব্যক্তি, যার দিন গুজরান কঠিন এবং যিনি জীবনের তিক্ত উত্থান-পতনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি স্মরণ করুন যে, কষ্টের পরেই আরাম আসে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং আপনি যদি খাঁটি ও একনিষ্ঠ হন তবে বিজয় নিকটে।
“(এটা) আল্লাহর ওয়াদা, আল্লাহ তার ওয়াদাকে ভঙ্গ করেন না, কিন্তু অধিকাংশ লোকই তা জানে না।” (৩০-সূরা আর রূমঃ আয়াত-৬)
আপনার সংকট যাই হোক না কেন, তার প্রতিকার আছে এবং আপনার সমস্যা যাই হোক না কেন তার সমাধান আছে।
“সল প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ আল্লাহরই প্রাপ্য, যিনি আমাদের থেকে (সকল) দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছেন।” (৩৫-সূরা ফাতিরঃ আয়াত-৩৪)
হে মানব জাতি! তোমাদের সন্দেহকে ঈমানের দ্বারা এবং তোমাদের ভ্রান্ত চিন্তা-চেতনাকে হেদায়েতের দ্বারা আরোগ্য করার সময় এসে গেছে। সত্যিকার সূর্যোদয়ের উজ্জ্বলতা দেখার জন্য তোমাদের অন্ধকারাচ্ছাদন তোমাদেরকে অবশ্যই দূর করতে হবে। তোমাদেরকে অবশ্যই তুষ্টির মিষ্টতা দিয়ে দুঃখের তিক্ততাকে উচ্ছিন্ন করতে হবে।
হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা যে শুষ্ক মরু পাড়ি দিচ্ছ তা ছাড়িয়ে তোমরা সবুজ চারণ ভূমি ও উর্বর মাটি পাবে। সেখানে সব ধরনের ফল-ফলাদি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়।
হে মানুষ! যে নাকি বিনিদ্র রজনী যাপনের কারণে গভীর রাত পর্যন্ত চিৎকার করছ, (তাকে বলছি,) তুমি স্মরণ কর-
أَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيبٍ
“প্রভাত কি নিকটে নয়?” (১১-সূরা হুদঃ আয়াত-৮১)
হে যার মন দুঃখে-কষ্টে দিশেহারা ধীরে ধীরে কাজে লেগে পড় (কিছুকালের জন্য ধৈর্য ধর) কেননা, অদৃশ্য দিগন্তে তোমার সমস্যার সমাধান ও উপায় আছে। হে যার চোখ আশ্রুতে ভরা! তোমার আঁখিজল সংবরণ কর ও তোমার চক্ষু-পল্লবকে বিশ্রাম দাও অর্থাৎ ঘুমাও। বিশ্রাম কর ও জেনে রাখ যে তোমার সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ রক্ষা করেন ও সাহায্য করেন এবং তোমার প্রতি তার করুণা তোমাকে শান্তি বয়ে এনে দিবে। হে আল্লাহর বান্দা! মনে মনে শান্তিতে থাক। কেননা, স্বর্গীয় বিধান (তকদীর) লিখা হয়ে গেছে এবং সবকিছু সিদ্ধান্ত করা হয়ে গেছে। এবং জেনে রাখ যে তোমার পুরস্কার তার নিকট নিশ্চিত আছে। যিনি তাকে হতাশ করেন না, যে তাকে সন্তুষ্ট করতে চায়।
শান্তিতে থাকুন। কারণ, অভাবের পর সম্পদ আসে, পিপাসার পর পানীয় আসে, বিচ্ছেদের পর আনন্দময় মিলন ঘটে এবং অনিদ্রার পর গভীর ঘুম আসে।
“তুমি জান না, হয়তো আল্লাহ এর পরে নতুন কিছু ঘটাবেন।” (৬৫-সূরা আত তালাক্ঃ আয়াত-১)
ওহে, তোমরা যারা দেশে দেশে অত্যাচারিত আছ; ক্ষুধা, যাতনা, অসুস্থতা ও দারিদ্রতায় ভুগছ একথা জেনে আনন্দ কর যে, তোমরা শীঘ্রই খাদ্য পেয়ে পরিতৃপ্ত হবে এবং তোমরা সুখী হবে ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে।
وَاللَّيْلِ إِذْ أَدْبَرَ - وَالصُّبْحِ إِذَا أَسْفَرَ
রাত্রি অবসানকালের শপথ এবং প্রভাত আলোকিত হওয়াকালীন সময়ের শপথ।” (৭৪-সূরা আল মুদদাছছিরঃ আয়াত ৩৩-৩৪)
প্রত্যেক মুসলমানকে তার প্রভুর সম্বন্ধে অবশ্যই সুধারণা পোষণ করতে হবে এবং অবশ্যই তার দয়ার জন্য ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে। কেননা, যে সত্তার এ ক্ষমতা আছে যে, তিনি কোন কিছুকে ‘হও’ বলেন তা আমনি হয়ে যায়। তিনি তার অঙ্গীকার অনুযায়ী বিশ্বাস স্থাপনের উপযুক্ত ক্ষেত্র। তিনি ছাড়া কেউ কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না এবং তিনি ছাড়া অন্য কেউ মন্দকে দূর করতে পারে না। কেননা প্রতিটি কাজের জ্ঞান তার আছে এবং তিনি প্রতি মুহুর্তেই শান্তি বয়ে আনেন। তিনি রাতের পর প্রভাতকে আনয়ন করেন এবং শুষ্কতার পর বৃষ্টি আনেন। তিনি এজন্য দান করেন যেন তার শুকরিয়া আদায় করা হয়। (সব কিছু জানা সত্বেও) কে ধৈর্যশীল তা তিনি (প্রমাণসহ) জানার জন্য পরীক্ষা করেন। অতএব, মুসলমানের সর্বাপেক্ষা লাভজনক কাজ হলো তার প্রভুর সাথে তার সম্পর্ককে শক্তিশালী করা এবং তার নিকট আরো বেশি ঘনঘন প্রার্থনা করা।
وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِن فَضْلِهِ
“এবং আল্লাহর নিকট তার অনুগ্রহ প্রার্থনা কর।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-৩২)
دْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً
“তোমাদের প্রতিপালককে বিনীতভাবে ও গোপনে আহবান কর।” (৭-সূরা আল আরাফঃ আয়াত-৫৫)
আলা ইবনে হাফরামি (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে এক মরুভূমির মাঝে নিরুপায় ও অসহায় অবস্থায় পতিত হন। তাদের পানির সরবরাহ ফুরিয়ে গিয়েছিল এবং তারা মৃত্যুর সীমানায় পৌছে গিয়েছিলেন। আলী (রাঃ) তার সর্বশ্রোতা ও তার নিকট প্রার্থনাকারীর প্রার্থনায় সাড়া দানকারী প্রভুকে ডেকে বললেন, ‘হে সর্বোচ্চ সত্তা! হে সর্বাপেক্ষা মহান সত্তা! হে সবচেয়ে বিজ্ঞ সত্তা! এবং হে সর্বাপেক্ষা বদান্য সহনশীল সত্তা’। সে মুহুর্তেই মুষলধারে বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। তারা পান করলেন, অযু-গোসল করলেন ও তাদের পশুগুলোকে পান করালেন।
“এবং তারা হতাশ হয়ে যাবার পর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তার অনুগ্রহকে ছড়িয়ে দেন। আর তিনি হলেন অভিভাবক ও প্রশংসনীয়।” (৪২-সূরা আশ শুরাঃ আয়াত-২৮)