লগইন করুন
সুখ যদি সত্যিকার হয় তবে এটা অবশ্যই (উপস্থিতির দিক থেকে) স্থায়ী এবং (আকারে) পূর্ণ। সদা বিরাজমান বলতে আমি বুঝাতে চাই যে, এটা কখনও দুশ্চিন্তা দ্বারা বিঘ্নিত করা উচিত নয়। আর এটা দুনিয়া আখেরাত উভয়ের জন্যই বিদ্যমান থাকা উচিত। যখন এটা সমস্যা ও দুশ্চিন্তা দ্বারা নষ্ট হয়ে না যায় বা কমে না যায় তখন এর পূর্ণতা বুঝা যায়।
ইরাকের এক সময়ের রাজা আন্নু’মান ইবনুল মুনজির একসময় মদ্যপান করার জন্য একটি গাছের নিচে বসেছিল। তিনি আদী ইবনে যায়েদকে এসে তাকে উপদেশ দেয়ার জন্য ডাকলেন। আদী বলল, হে বাদশা! আপনি কি জানেন এ গাছ কী বলে? রাজা বলল, “না, এটা কী বলে?” আদী উত্তর দিলেন (এটা বলে)
رُبَّ رَكبٍ قَد أَناخوا حَولَنا ٭ يَشرَبونَ الخَمرَ بِالماءِ الزُلال
ثُمَّ صَارُوا لَعِبَ الدَّهرِبِهِمْ ٭ وَكَذاكَ الدَهرُ حالاً بَعدَ حَالْ
ভাবার্থঃ “আমার আশে পাশে কত লোকইনা আরাম তালাশ করল, বিশুদ্ধ পানির সাথে মদ মিশিয়ে পান করার জন্য। অতএব তাদের অবস্থা এমন শোচনীয় হয়ে গেল যে, যুগ তাদের সাথে খেলা করতে লাগল (তারা কালের চক্রে পড়ল)। আর যুগ তো এমনই যে, এটা যে সদা এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে যায়।”
রাজার নিকট যে পরিণতির কথা বর্ণনা হয়েছিল তা শুনে সে তিক্ত-বিরক্ত হয়ে গেল এবং সে মদপান ছেড়ে দিল ও মৃত্যু পর্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় ছিল।
ইরানের শাহ যখন পারস্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ২৫০০ (দু’হাজার পাঁচশত) বছর উদ্যাপন করল, তখন সে তার রাজত্বের বাইরের অঞ্চলে তার ক্ষমতা বিস্তারের পরিকল্পনা করল। তখন অনতিবিলম্বেই সে ক্ষমতাচ্যুত হলো।
تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاءُ وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاءُ
“যাকে ইচ্ছা আপনি রাজ্য দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তার থেকে রাজ্য কেড়ে নেন।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-২৬)
তার প্রাসাদ ও তার দুনিয়া থেকে তাকে ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়া হয় এবং সে বহু দূর দেশে নির্বাসিত নিঃস্ব অবস্থায় মারা যায়। কেউ তার জন্য চোখের পানি ফেলেনি।
كَمْ تَرَكُوا مِنْ جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ - وَزُرُوعٍ وَمَقَامٍ كَرِيمٍ - وَنَعْمَةٍ كَانُوا فِيهَا فَاكِهِينَ
“কতইনা বাগ-বাগিচা, ঝর্নাধারা, সবুজ-শ্যামল ফসলের মাঠ, সুন্দর-সুন্দর স্থান (সুরম্য প্রাসাদসমূহ) ও ভোগ-বিলাস তারা ফেলে গেছে যেগুলোতে তারা আনন্দ-স্ফূর্তি করত।” (৪৪-সূরা আদ দোখানঃ আয়াত-২৫-২৭)
রুমানিয়ার প্রাক্তন রাজা চসেস্কুরও একই ঘটনা। সে বাইশ বছর শাসন করেছিল এবং তার সত্তর হাজার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ছিল। কিন্তু অবশেষে তার নিজের লোকেরাই তার প্রাসাদকে ঘিরে ফেলে। তারা তার দেহ থেকে একটি একটি করে অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
فَمَا كَانَ لَهُ مِن فِئَةٍ يَنصُرُونَهُ مِن دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنتَصِرِينَ
“তখন আল্লাহর বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করার জন্য তার কোন দল ছিল না এবং সে নিজেও নিজেকে সাহায্য করার মতো ছিল না।” (২৮-সূরা আল কাছাছঃ আয়াত-৮১)
এভাবে সে মারা গেল কিন্তু তার সাথে কোন পার্থিব সম্পদ নিতে পারল না এবং আখেরাতের সাফল্যের কোন আশাও তার থাকল না।
আরেকটি উদাহরণ হলো ফিলিপিনের প্রাক্তন নেতা মার্কস। সে জনগণের উপর দুঃখ-দুর্দশা চাপিয়ে নিজের জন্য সম্পদ ও ক্ষমতা অর্জন করেছে। যখন তাকে তার দেশ, পরিবার ও ক্ষমতা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছিল, তখন আল্লাহ তাকে একই রকম দুঃখ-কষ্টে ভুগিয়ে ছিলেন। আশ্রয়হীন অবস্থায় সে লজ্জাজনকভাবে মারা যায়; এমনকি তার নিজের লোকজনরাও তাকে ফিলিপিনে দাফন করতে দেয়নি।
أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِي تَضْلِيلٍ
“তিনি কি তাদের চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দেননি?” - (১০৫-সূরা আল ফীলঃ আয়াত-২)
“সুতরাং আল্লাহ তাকে পাকড়াও করে তার শেষ কথার ও প্রথম কথার শাস্তি দিলেন।” (৭৯-সূরা আন নাযিআতঃ আয়াত-২৫)
তার শেষ কথা ছিল— “আমি তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিপালক।" (৭৯-সূরা আন নাযি’আতঃ আয়াত-২৪)
তার প্রথম কথা ছিল- “হে নেতৃবর্গ, আমি ছাড়া তোমাদের কোন উপাস্য আছে বলে আমার জানা নেই।” (২৮-সূরা আল কাছাছঃ আয়াত-৩৮)
অতএব, আমি তাদের প্রত্যেককেই তার পাপের কারণে পাকড়াও করেছিলাম (শাস্তি দিয়েছিলাম)।” (২৯-সূরা আন আনকাবুতঃ আয়াত-৪০)