লগইন করুন
وَكَذَٰلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَىٰ وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ
“যে সব শহরের অধিবাসীগণ জালিম আল্লাহ যখন সে সব শহরকে পাকড়াও করেন তখন তোমার প্রভুর পাকড়াও এমনই হয়।” (১১-সূরা হুদঃ আয়াত-১০২)
বিভিন্ন কারণে মানুষ হতাশ ও হতভাগা হতে পারে; নিম্নে তার কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো-
অন্যের সাথে অন্যায় আচরণ করা, অন্যের অধিকারকে জবর দখল করা এবং মানব জাতির নরম প্রকৃতির লোকদেরকে আঘাত দেয়া। কোন একজন বিজ্ঞ লোক বললেন- “তোমরা (অত্যাচারের) বিরুদ্ধে আল্লাহ ছাড়া যার কোন সাহায্যকারী নেই তাকে ভয় কর।” অত্যাচারীদের প্রচুর তীক্ষ্ণ উদাহরণ সম্বলিত ইতিহাস আমাদের নিকট আছে।
আমের ইবনে তোফায়েল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গোপনে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল তাই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। ফলে আমের গ্রন্থিস্ফীতি রোগে আক্রান্ত হয়ে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে এক ঘণ্টা পরে মারা যায়। আরবাদ ইবনে কায়সের একই রকম চক্রান্ত করার দুর্ভাগ্য হয়েছিল। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিরুদ্ধে বদ দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ বজ্রপাত
ঘটিয়ে তাকে ও তার বাহন উটকে জ্বালিয়ে দিয়েছেন।
হাজ্জাজ সায়ীদ ইবনে যুবাইরকে (রাঃ)-কে হত্যা করার কিছু আগে সায়ীদ ইবনে যুবাইর প্রার্থনা করে বলেছিলেন, “হে আল্লাহ! আমার পরে তাকে আর কারো (সাথে অত্যাচার করার) ক্ষমতা দিও না।”
হাজ্জাজের এক হাতে একটি ফোড়া হল, পরে তা দ্রুত তার সারা গায়ে ছড়িয়ে গেল। তার এত ব্যথা হলো যে সে গরুর মতো (হাম্বা হাম্বা) ডাকতে লাগল। অবশেষে করুণা উদ্রেককর অবস্থায় মারা গেল।
আবু জাফর মনসুরের হুমকির কারণে সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) কিছুকাল আত্মগোপন করে ছিলেন। আবু জাফর মক্কায় কা’বার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। সে সময় সুফিয়ান (রহঃ) কাবার চত্বরে ছিলেন এবং তিনি আল্লাহর নিকট মরিয়া হয়ে আকুল আবেদন করেছিলেন যাতে আল্লাহর ঘরে আল্লাহ আবু জাফরকে প্রবেশ করতে না দেন। মক্কার বহিঃসীমায় পৌঁছার আগেই আবু জাফর মারা যায়।
কাজী আহমদ ইবনে আবু দাউদ মু’তাযিলি ইমাম আহমদ (রহঃ)-কে কষ্ট দিচ্ছিল। ইমাম আহমদ (রহঃ) তার বিরুদ্ধে বদদোয়া করলেন, তাই আল্লাহ ইবনে আবু দাউদের অর্ধাঙ্গের পক্ষাঘাত করে দিলেন। তাকে বলতে শুনা গেছে “আমার শরীরের এক (পক্ষাঘাতহীন) অর্ধাংশে যদি একটি মাছি উড়ে এসে বসে তবে আমার মনে হয় কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে। আর বাকি (পক্ষাঘাতগ্রস্ত) অর্ধাংশকে কাচি দিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হলেও আমি কোন কিছু অনুভব করতে পারব না”
আলী ইবনে যায়্যাতও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)-কে অত্যাচার করেছে। তাই ইমাম আহমদ (রহঃ) তাকেও বদদোয়া (অভিশাপ) দেন। কিছু সময় যেতে না যেতেই কেউ একজন তাকে চুলার আগুনে ফেলে ও মাথায় পেরেক ঠুকে অত্যাচার করে মারে।
হামজা বাসিয়ূনী বহু মুসলমানকে জামাল আব্দুন নাসিরের শাসনামলে জেলে রেখে অত্যাচার করে। সে টিটকারি দিয়ে বলত, “কোথায় তোমাদের খোদা? পেলে আমি (তাকেও) জেলখানায় ভরতাম। অত্যাচারীরা যা বলে আল্লাহ তা থেকে বহু দূরে। একদা সে কায়রো থেকে আলেকজেন্দ্রিয়াতে যাওয়ার সময় একটি লৌহ (রড) বাহী ট্রাক তার টেক্সিটিকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়। আর একটি রড তার মাথায় তালু দিয়ে ঢুকে তার নাড়িতুড়িতে ঢুকে যায়। উদ্ধারকর্মীরা তাকে টুকরো টুকরো না করে তাকে তার টেক্সি থেকে বের করতে পারেনি (তাকে টুকরো টুকরো করে টেক্সি থেকে বের করা হয়)।
وَاسْتَكْبَرَ هُوَ وَجُنُودُهُ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ إِلَيْنَا لَا يُرْجَعُونَ
সে ও তার সেনাবাহিনী অন্যায়ভাবে জমিনের বুকে অহংকার করত এবং তারা ভেবেছিল যে, তাদেরকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনা হবে না।” (২৮-সূরা আল কাছাছঃ আয়াত-৩৯)
“এবং তারা বলত, আমাদের থেকে কে বেশি শক্তিশালী আছে? তারা কি দেখেনি যে, তাদেরকে যে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী?” (৪১-সূরা হা-মীম-আস-সাজদাহঃ আয়াত-১৫)
জমিনে কুকর্ম ও অত্যাচার করার জন্য প্রসিদ্ধ আব্দুন নাসিরের সেনাপতি সালাহ নসরের ঘটনাও একই রকম। সে দশটি বেদনাদায়ক ও চিরস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হয়। সে বহু বৎসর দুর্দশায় বেঁচেছিল কিন্তু ডাক্তাররা তাকে আরোগ্য করতে পারেনি। অবশেষে সে যে সব নেতাদেরকে কাজে লাগাত তাদের জেলখানাতে বন্দী হয়েই সে অপমানিত হয়ে মারা যায়।
“যারা দেশে দেশে সীমালজঘন করেছিল। সেখানে তারা অনেক ফেতনা-ফাসাদ (বিশৃঙ্খলা-গণ্ডগোল) করেছিল। অতএব, তোমার প্রভু তাদের উপর শাস্তির কষাঘাত হানলেন।” (৮৯-সূরা আল ফাজরঃ আয়াত-১১-১৩)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إن الله ليملي للظالم حتى إذا أخذه لم يفلته
“নিশ্চয় আল্লাহ জালেমকে কিছু সময় দেন। অবশেষে যখন তিনি তাকে পাকড়াও করেন, তখন তিনি তাকে পালাতে দেন না।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন-
اتق دعوة المظلوم ، فإنها ليس بينها وبين الله حجاب
“অত্যাচারিতের দোয়াকে ভয় কর। কেননা, এ দোয়ার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই।”