লগইন করুন
ওয়ালিদ ইবনে মুগীরা, উমাইয়া ইবনে খালফ এবং আস ইবনে ওয়ালা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের ধন-সম্পদ অকাতরে খরচ করেছিল।
فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ
“অতএব তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করতে থাকবে অতপর তা তাদের জন্য যাতনার কারণ হবে, অতপর তারা পরাজিত হবে।” (৮-সূরা আনফালঃ আয়াত-৩৬)
অথচ অনেক মুসলমান কৃপণের মতো তাদের ঋন-সম্পদ মজুদ করছে এবং সেগুলোকে কল্যাণকর কাজে খরচ করছে না।
“আর যে ব্যক্তি কৃপণতা করছে সে তো শুধুমাত্র নিজের ব্যাপারেই কৃপণতা করছে (অর্থাৎ নিজেরই ক্ষতি করছে। অনুবাদক)" (৪৭-সূরা মুহাম্মদ বা কেতালঃ আয়াত-৩৮)
গোল্ড মেয়ারের “হিংসা-বিদ্বেষ” নামক স্মারক গ্রন্থে ইহুদী লেখিকা লিখেছেন যে, জীবনে একসময়ে তিনি বিরতিহীন ষোল (১৬) ঘণ্টা কাজ করতেন। কিন্তু কী পরিণতির জন্য তিনি কাজ করেছিলেন? তিনি কাজ করেছিলেন তার মিথ্যা মূলনীতি ও ভ্রান্ত ধারণার সেবা কল্পে। সে ও বেন গুরিয়ান খাটতে খাটতে শেষ পর্যন্ত একটি দেশ প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
এরপর আমি সে সব হাজার হাজার মুসলমানের কথা ভাবলাম যারা দিনে এক ঘণ্টাও কাজ করে না। বরং তারা হেসে খেলে, পানাহার করে ও নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করে চলছে।
“তোমাদের কি হলো যে, তোমাদেরকে যখন বলা হয় যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় বের হও, তখন তোমরা শক্ত করে মাটিতে পাছা গেড়ে বসে থাক।” (৯-সূরা তাওবাঃ আয়াত-৩৮)
উমর (রাঃ) দিন-রাত অবিচল কাজ করে যেতেন, সামান্য ঘুমাতেন। তার স্ত্রী বা পরিবারের লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করল, “আপনি ঘুমান না?” তিনি উত্তর দিলেন, “আমি যদি রাতে (ইবাদত বাদ দিয়ে) ঘুমিয়ে থাকি তবে আমার আত্মা ধ্বংস হয়ে যাবে, আর যদি দিনে (আমার প্রজাদের খোঁজ-খবর না নিয়ে) ঘুমিয়ে থাকি তবে আমার প্রজারা ধ্বংস হয়ে যাবে।”
গুপ্ত ঘাতক মূশি দায়্যানের স্মারক গ্রন্থ ‘তরবারি ও শাসন’ সে কিভাবে দিন রাত এক দেশ থেকে আরেক দেশে পালিয়ে বেড়াত, (সাথে সাথে) বিভিন্ন সভা-সম্মেলনে যোগ দিয়ে সর্বদা চুক্তি ও সন্ধি করে বেড়াত- এসব বর্ণনায় ভরা।
আমি ভাবলাম এটা কতইনা লজ্জার কথা যে, যে লোক এতগুলো মন্দ ধারণা করার দায়িত্ব নিয়েছে সে কিনা এতটা বীরত্বপূর্ণ সহিষ্ণুতা দেখাল অথচ কত মুসলমানরাই না দুর্বলমনা ও অক্ষম হয়ে আছে। এখানে আবারও আমার উমর (রাঃ)-এর কথিত পাপীদের সহিষ্ণুতা ও দুর্বল আত্মবিশ্বাসের কথা মনে পড়ে গেল।
উমর (রাঃ)-এর শাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় বা রক্ষণাবেক্ষণে অলসতা ও অকৰ্মন্যতা সহ্য করা হতো না। যে সব যুবক মসজিদে বাস করত। একবার তিনি তাদেরকে আইন করে মসজিদে থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে শাস্তি দিয়ে বলেছিলেন, “বের হয়ে গিয়ে রিযিক তালাশ কর। কেননা, আকাশ থেকে সোনা-রূপার বৃষ্টি হবে না” অলসতা দুশ্চিন্তা, হতাশা ও বিভিন্ন মানসিক রোগের জন্ম দেয়, পক্ষান্তরে কাজ-কর্ম তৃপ্তি ও সুখের জন্ম দেয়। আমাদের যা করার কথা আমরা সবাই যদি তা করি তবে উপরোল্লিখিত সব রোগ সমূলে বিনাশ হয়ে যাবে এবং আমাদের সমাজ বর্দ্ধিত উৎপাদন ও উন্নতির মাধ্যমে উপকৃত হবে।
وَقُلِ اعْمَلُوا
এবং আপনি বলে দিন, “তোমরা কাজ কর।” (৯-সূরা তাওবাঃ আয়াত ১০৫)
فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ
তোমরা জমিনে (রিযিক তালাশে) ছড়িয়ে পড়।” (৬২-সূরা আল জুম'আঃ আয়াত ১০)
سَابِقُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ
“তোমাদের প্রভুর ক্ষমার জন্য এবং জান্নাতের জন্য তোমরা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা কর।” (৫৭-সূরা আল হাদীদঃ আয়াত-২১)
“তোমাদের প্রভুর ক্ষমার জন্য এবং জান্নাতের জন্য তোমরা দ্রুত গতিতে ধাবমান হও।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৩৩)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেনঃ দাউদ নবী নিজ হাতের উপার্জন খেতেন।
একথা আপাতদৃষ্টিতে আত্মবিরোধী মনে হলেও সত্য বিরোধী নয় যে, বহুলোক জীবিত হওয়া সত্ত্বেও মৃত। তাদের জীবনের উদ্দেশ্য সাধনের কোন উপায় নেই এবং তারা তাদের নিজেদের জন্য বা পরের জন্য কিছুই করে না। “যারা (যে মহিলারা) পিছনে (ঘরে) বসে থাকে তারা তাদের সাথেই থাকতে রাজি।” (৯-সূরা তাওবাঃ আয়াত-৮৭)
“যে সব মু’মিন অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে (নিজেদের জান-মাল দিয়ে) জিহাদ করে তারা (এ দু’দল) সমান নয়।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-৯৫)
যে কালো-চামড়ার (কৃষ্ণাঙ্গ) নারী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মসজিদ পরিষ্কার করেছিল সে তার জীবনের ভূমিকা তৎপরতার সাথে ও উদ্দেশ্য বুঝে পালন করেছিলেন। আর তাই সে জানতে প্ৰবেশ করেছিল।
“এবং অবশ্যই একজন মুমিন দাসী একজন মুশরিক নারী থেকে উত্তম, যদিও মুশরিক নারীর রূপ তোমাদেরকে তাক লাগিয়ে দেয়।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-২২১)
অনুরূপভাবে যে ছেলেটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বার বানিয়ে দিয়েছিল সে তার সাধ্যানুসারেই অবদান রেখেছিল। আর এজন্য সে তার পুরস্কারও পেয়েছিল। কাঠমিস্ত্রির কাজে তার দক্ষতা ছিল আর সে এ দক্ষতার সুবিধা ভোগ করেছিল।
“আর যারা তাদের শ্রম ছাড়া অন্য কিছু (আল্লাহর রাস্তার ব্যয় করার মতো) পায় না।” (৯-সূরা তাওবাঃ আয়াত-৭৯)
১৯৮৫ সালে আমেরকিান সরকার মুসলিম ধর্মপ্রচারকদেরকে কয়েদীদের নিকট ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য জেলখানার দরজা খুলে দেন। উদ্দেশ্য ছিল সেসব অপরাধীরা, মাদক ব্যবসায়ীরা ও খুনীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে উৎপাদনশীল ও ভালো মানুষ হয়ে সমাজে প্রবেশ করবে।
“যে ব্যক্তি মৃত ছিল (অর্থাৎ ঈমানের আলো না থাকাতে মৃতবৎ ছিল) পরে আমি তাকে জীবিত করেছি এবং আমি তার জন্য আলো সৃষ্টি করেছি যার সাহায্যে সে মানুষের মাঝে হেঁটে বেড়ায় সে কি তার মতো যে (কুফরির) অন্ধকারে আছে?” (৬-সূরা আল আন’আমঃ আয়াত-১২২)
ইহজীবনের প্রতি চরম আসক্তি, দীর্ঘ জীবনের জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা ও মৃত্যুর প্রতি সীমাহীন বিরাগের ফলে উদ্বিগ্নতা, দুশ্চিন্তা ও নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়। এ পার্থিব জীবনের প্রতি ভীষণ আসক্তির কারণে আল্লাহ ইহুদীদেরকে নিন্দা করেছেন।
“এবং আপনি অবশ্যই তাদেরকে (অর্থাৎ ইহুদীদেরকে) জীবনের প্রতি সকল মানুষের চেয়ে বেশি এমনকি মুশরিকদের চেয়েও বেশি লোভী দেখতে পাবেন। তাদের প্রত্যেকেই আকাঙ্ক্ষা করে যে, যদি তাকে হাজার বছর দীর্ঘ জীবন দান করা হতো (তবে কতইনা ভালো হতো)। কিন্তু দীর্ঘ জীবন তো তাকে শাস্তি থেকে রেহাই দিতে পারবে না। আর তারা যা করছে আল্লাহ তার সব কিছু দেখবেন।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-৯৬)
এ আয়াতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা করা দরকার।
প্রথমতঃ আল্লাহ উল্লেখ করেছেন তাদের প্রত্যেকেই দীর্ঘ জীবন কামনা করে। অন্য কথায় তারা যে মানের জীবন যাপনই করুক না কেন তাতে তাদের কিছু আসে যায় না, তারা মূল্যহীন, তুচ্ছ বা তেমন নয় (অর্থাৎ মূল্যহীন ও তুচ্ছ নয়) যেমন জীবন যাপনই করুক না কেন তার বাছ-বিচার না করেই তারা এ পৃথিবীতে দীর্ঘকাল থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে।
দ্বিতীয়ঃ “হাজার বছর” কথাকে নির্বাচন বা বাছাই করার বিষয়। ইহুদীরা একে অপরের সাথে সাক্ষাৎকালে তাদের অভিবাদন ছিল হাজার বছর বেঁচে থাকো। সম্ভবত এ কারণেই এ কথাকে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। এমন দীর্ঘ জীবন আশা করার কারণে আল্লাহ তাদেরকে তিরস্কার করেছেন। আর তাছাড়া মনে করুন যে, তারা হাজার বছরই বাঁচবে, কিন্তু তাদের শেষ পরিণতি কি হবে? তবুও তাদের শেষ পরিণতি হবে জাহান্নামের দগ্ধকারী আগুন।
“আর আখেরাতের শাস্তি অবশ্যই সবচেয়ে বেশি অপমানকর, আর তাদেরকে কোনরূপ সাহায্য করা হবে না।” (৪১-সূরা হা-মীম-আস-সাজদাহঃ আয়াত-১৬)
নিম্নোক্ত আরবী প্রবাদ খানি কতইনা সুন্দর :
لا هم ولله يدعى
“যখন নাকি আল্লাহকে ডাকা হচ্ছে তখন, দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই।”
অর্থাৎ উপর আল্লাহকেই আমরা কল্যাণের জন্য আহবান করি, সুতরাং আমাদেরকে দুশ্চিন্তা করতে হবে কেন? যদি আপনি আপনার দুশ্চিন্তার বিষয়ে আল্লাহর উপর নির্ভর করেন তবে তিনি আপনার দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।
“(তোমাদের দেবতাগণ ভালো?) না কি তিনি ভালো যিনি বিপদগ্রস্তের ডাকে সাড়া দেন এবং বিপদ দূর করেন?” (২৭-সূরা আন নামলঃ আয়াত-৬২)
“আর (হে মুহাম্মদ!) যখন আমার বান্দাগণ আপনাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে তখন (আপনি তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে উত্তর দিন) নিশ্চয় আমি (তাদের) নিকটে থাকি। যখন কোন প্রার্থনাকারী আমার নিকট প্রার্থনা করে তখন আমি কোনরূপ মধ্যস্থতাকারী বা উকিল ছাড়াই (অর্থাৎ কৃত্রিম দেবতা বা মূর্তির সাহায্য ছাড়াই) প্রার্থনাকারীর প্রার্থনায় সাড়া দেই।" (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-১৮৬)
একজন আরব কবি বলেছেন-
أخْلِقْ بذي الصبرِ أنْ يحظَى بحاجته
ومُدْمِنِ القَرْعِ للأبواب أن يَلِجَا
“ধৈর্যশীল ব্যক্তি কতইনা উত্তম রূপে তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে! আর যে ব্যক্তি অনবরত দরজায় খট্ খট্ শব্দ করতে থাকে সে কতইনা উত্তমরূপে ভিতরে প্রবেশ করতে পারে!”