লগইন করুন
এ জীবনে আপনার যা পাওয়া অসম্ভব আপনি যদি মনে মনে তাকে ঘৃণা করেন তবে আপনার নিকট এর মূল্য কমে যাবে। যা আপনি সত্যিই পেতে চান তা না পাওয়ার জন্য যদি আপনি পরিতৃপ্ত থাকেন তাহলে আপনার আত্মা সান্ত্বনা খুঁজে পাবে।
سَيُؤْتِينَا اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَرَسُولُهُ إِنَّا إِلَى اللَّهِ رَاغِبُونَ
“অচিরেই আল্লাহ আমাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে দান করবেন এবং তার রাসূলও (দান করবেন); নিশ্চয় আমরা আল্লাহর নিকটই আকাঙ্ক্ষা করি।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৫৯)
একবার আমি এক লোকের ঘটনা (পত্রিকায়) পড়েছিলাম। ঐলোকের ঘরের জানালা দিয়ে তার আংটিটি বাইরে পড়ে গিয়েছিলেন। আংটিটি পড়ে গিয়ে তা কর্নিশের তাকে পোতা এক পেরেকের সাথে আটকে যায়। তারকাটাটি তাকে পুরাপুরি পোতা ছিল না, ফলে তার বাম হাতের অনামিকা অঙ্গুলি সমূলে উঠে যায়। এতে তার সে হাতে চার আঙ্গুল হয়ে গেল। যা আশ্চর্যজনক তা ঘটনাটি নয় বরং দুর্ঘটনার দীর্ঘকাল পরে লোকটি যে পরিতৃপ্তভাব দেখিয়েছেন তাই আশ্চর্যজনক। পরবর্তী কথায় তার পরিতুষ্টি প্রকাশ পায়।” আমার একহাতে যে চার আঙ্গুল বা আমি যে একটি আঙ্গুল হারিয়েছি তা আমি মনে করি না বললেই চলে। একথা আমার তখনই মনে পড়ে যখন আমার দুর্ঘটনার কথা মনে পড়ে। অন্যথায় আমার কাজ-কর্ম ভালোই চলছে আর যা ঘটেছে তাতে আমি পরিতুষ্ট।”
“আল্লাহ সবকিছু পূর্বেই নির্ধারিত করে রেখেছেন এবং তিনি যা চান তাই করেন।”
আমি এক পরিচিত লোক চিনি, যিনি রোগের কারণে তার বাম হাতটাকে হারিয়েছেন। তিনি অনেক বছর যাবতই (এখানে) বাস করছেন। তিনি বিয়ে শাদীও করেছেন এবং তার সন্তানাদিও আছে। বিনা কষ্টে তিনি তার গাড়ি - চালান এবং সহজেই তার বিভিন্ন কাজ সমাধান করেন। তিনি এতটাই স্বাচ্ছন্দবোধ করেন যে, মনে হয় যেন শুধুমাত্র একহাত দিয়ে বেঁচে থাকার জন্যই আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন।
“আল্লাহ তোমার ভাগ্যে যা রেখেছেন তাতে তুষ্ট হও, তাহলেই তুমি সর্বাপেক্ষা সুখী মানুষ হবে।”
কত দ্রুতইনা আমরা পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিই! এটা আশ্চর্যজনক যে, যখন জীবন-যাপন পদ্ধতির পরিবর্তন আমাদের উপর প্রভাব ফেলে তখন আমরা কিভাবেই না আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে খাপ খাইয়ে নিই! পঞ্চাশ বছর আগে একটি বাড়ির উপাদান (জিনিসপত্র) ছিল-তালপাতার তৈরি একটি মাদুর, একটি পানির কলসী, কিছু কয়লা এবং অন্যান্য তুচ্ছ কিছু জিনিসপত্র। বর্তমানে মানুষ যেভাবে জীবন চালিয়ে নিচ্ছে অতীতেও সেভাবে তারা জীবন চালিয়ে নিতে পারত; কোন উপাদানের বা উৎসের বা আরাম-আয়েশের অভাব অতীতের জীবনমানকে বর্তমানের চেয়ে কোন অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ করেনি। একজন আরব কবি বলেছেন-
وَالنَفـسُ راغِبِـةٌ إِذا رَغَّبتَـهـا ٭ واذا تُـرَدُّ إِلـى قَليـلٍ تَقـنَـعُ
অর্থাৎ “তুমি যখন আত্মাকে প্রলোভন দেখাবে তখন আত্মা আরো চাইবে, আর যখন একে অল্পের কথা বলা হয় তখন এটা অল্পে তুষ্ট হয়।”
কুফার কেন্দ্রিয় মসজিদে দু'গোত্রের মাঝে ঝগড়া বেধে গেল। তখন একদল অপরদলকে অপমানসূচক কথা বলতে লাগল। আল আহনাফ বিন কায়সকে খুঁজে বের করার জন্য মসজিদের এক লোক চুপিসারে বের হয়ে পড়ল। আল আহনাফ ইবনে কায়স সবার নিকটে পরমোৎকৃষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। লোকটি তাকে বাড়িতে ছাগলের দুধ দোহন করা অবস্থায় পেলেন। আল আহনাফ এমন পোশাক পরিধান করেছিলেন যার মূল্য দশ দিনারও ছিল না (অর্থাৎ তা ছিল ছেড়া ও সস্তা)।
তিনি কৃশ, চোখ-মুখ বসা এবং তার এক পা অপর পা থেকে লম্বা ছিল; যার ফলে তিনি খোঁড়ায়ে খোঁড়ায়ে হাঁটতেন। যখন তাকে ঝগড়ার খবরটা দেয়া হলো তখন তার হাব-ভাবের কোন পরিবর্তন হলো না এবং তিনি শান্ত থাকলেন। এ ধরনের বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতা প্রদর্শন এ কারণেই সম্ভব হয়েছে যে, আল আহনাফ জীবনে অনেক বিবাদ ও সংকট প্রত্যক্ষ করেছেন। ফলে, তিনি এমন ঘটনায় অভ্যস্ত ছিলেন (অর্থাৎ এমন ঘটনায় অভিজ্ঞতা তার পূর্বেও হয়েছে)। তিনি লোকটিকে বললেন, “আল্লাহ চাহে তো সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
তারপর তিনি নাস্তা খেতে শুরু করলেন, যেন কোন কিছুই ঘটেনি। তার নাস্তা বলতে ছিল এক টুকরো শুকনো রুটি, তেল, লবণ ও এক গ্লাস পানি। তিনি আল্লাহর নাম নিয়ে খেলেন। তারপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা করে পরে বললেন, “ইরাকের গম, সিরিয়ার তেল, ফোরাত নদীর পানি ও রাশিয়ার লবণ। নিশ্চয় এগুলো মহা নেয়ামত।” তিনি কাপড়-চোপড় পরে নিলেন। হাতের লাঠিখানা নিলেন ও ঐ লোকজনের দিকে যাত্রা শুরু করলেন। তারা যখন তাকে দেখল তখন তাদের দৃষ্টি তার উপর নির্বদ্ধ হলো ও তিনি যা বললেন তারা তা মনোযোগ সহকারে, শুনল। তিনি শান্তি ও সমঝোতার কথা বললেন—তা উভয় দলকেই সন্তুষ্ট করল এবং তাদেরকে তিনি নিজ নিজ পথে চলে যেতে অনুরোধ জানালেন। তারা সবাই একথা নিরবে মেনে নিল ও প্রত্যেকেই মনে সামান্যতম হিংসা-বিদ্বেষ না রেখেই সে স্থান ত্যাগ করে গেল। আর এভাবেই সেই অগ্নী পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হলো।
একজন আরব কবি বলেছেন-
قَدْ يُدْرِكُ الشَّرَفَ الفَتَى ورِدَاؤُه ٭ خَلَقٌ وجَيْبُ قَميصِهِ مَرْقُوعُ
অর্থাৎ “যুবক মর্যাদার অধিকারী হতে পারে যদিও তার চাদর ছেড়া ও তার জামার পকেট তালি দেয়া হয়।”
এ ঘটনা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তার মধ্যে একটি হলো-মাহাত্ম্য বাহ্যিক আকারে বা পোশাকে নিহিত নয়। অন্যান্য শিক্ষার মাঝে এও একটি যে, সামান্য কিছু পার্থিব জিনিসপত্র থাকা দুঃখ ও ধন-সম্পদের মাঝে নিহিত নয়।
“আর মানুষ তো এমনই যে, যখন তাকে তার প্রভু সম্মানিত করে ও ধন-সম্পদ দান করে পরীক্ষা করেন তখন বলে, “আমার প্রভু আমাকে সম্মানিত করেছেন।” আর যখন তার প্রভু তাকে রিযিক কমিয়ে দিয়ে পরীক্ষা করেন তখন সে বলে, “আমার প্রভু আমাকে অপমানিত করেছেন।” (৮৯-সূরা আল ফাজর : আয়াত-১৫-১৬)
এ ঘটনা থেকে আমরা আরেকটি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। আর তা হলো মানুষের চরিত্র ও গুণই তার মূল্যের মাপকাঠি, তার পোশাক, জুতা বা ঘর-বাড়ি নয়। তার জ্ঞান, উদারতা, মাহাত্ম্য, আচার-আচরণ ও কাজ-কর্ম দ্বারা তাকে মূল্যায়ন করা হয়।
“তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মুত্তাকী আল্লাহর নিকট সে ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা সম্মানিত।” (৪৯-সূরা আল হুজুরাত: আয়াত-১৩)
“বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহে ও তার দয়ায় তারা আনন্দ করুক। তারা যে সম্পদ জমায় তার চেয়ে এটা ভালো।” (১০-সূরা ইউনুস: আয়াত-৫৮)
আপনার ভাগ্যে যা আছে তাতে সন্তুষ্ট থাকতে নিজেকে প্রশিক্ষণ দান করুন। আপনি আল্লাহর হুকুম বা তকদীরে বিশ্বাস না করে কী করবেন? আল্লাহর স্বর্গীয় বিধান বা তকদীরের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ ছাড়া অন্য যে পরিকল্পনাই আপনি গ্রহণ করুন না কেন তাতে আপনার কোন লাভ হবে না এবং সে কারণেই আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন, “সংকটের সমাধান কি?” সমাধান হলো একথা বলা যে, “আমরা অল্পেতুষ্ট, সন্তুষ্ট এবং আমাদের ইচ্ছাকে ত্যাগ করেছি।"
“তোমরা যেখানে থাক না কেন মৃত্যু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই; যদিও তোমরা সুদৃঢ় ও সুউচ্চ দুর্গে থাক না কেন।” (৪-সূরা আন নিসা: আয়াত-৭৮)
যেদিন চিকিৎসক আমাকে বলেছিল যে আমার ভাই মুহাম্মদের একটি হাত কেটে ফেলতে হবে সেদিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিন ছিল। সংবাদটি আমার মনে বিনা মেঘে বজ্রপাত করেছিল। আমি আবেগে পরাভূত হয়ে গিয়েছিলাম আর আমার আত্মা আল্লাহর এই বাণীতে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছিল।
“আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন মুসিবত আসে না, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথ দেখান। (৬৪-সূরা আত তাগাবুনঃ আয়াত-১১)
“কিন্তু, ধৈর্যশীলদেরকে (জান্নাতের) সুসংবাদ দান করুন, যারা (ধৈর্যশীলরা) মুসিবতে পড়লে বলে, “আমরা অবশ্যই আল্লাহর জন্য এবং তার নিকটই আমরা ফিরে যাব।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-১৫৫-১৫৬)
এসব আয়াতসমূহ আমার মনে শান্তি ও সান্ত্বনা বোধ সঞ্চার করেছিল। যা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে গেছে তা প্রতিরোধ করার কোন কৌশলই নেই।
অতএব, আমাদেরকে অবশ্যই ঈমান রাখতে হবে এবং আমাদের ইচ্ছাকে ত্যাগ করতে হবে।
أَمْ أَبْرَمُوا أَمْرًا فَإِنَّا مُبْرِمُونَ
নাকি তারা কোন পরিকল্পনা করছে? তাহলে আমিও পরিকল্পনা করছি। (৪৩-সূরা আয যুখরুফঃ আয়াত-৭৯)
“আল্লাহ তার কার্য সম্পাদনে পূর্ণ ক্ষমতাবান।” (১২-সূরা ইউসুফঃ আয়াত-২১)
“আর যখন তিনি কোন বিষয় নির্ধারণ করেন, সেজন্য তিনি শুধুমাত্র বলেন, কুন (হয়ে যাও) আর তখনই তা হয়ে যায়।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-১১৭)
আল খানসা আন্নাখ্য়িয়্যাকে তার চার পুত্রের মৃত্যুর সংবাদ এক মুহুর্তে দেয়া হলো। কাদিসিয়ার যুদ্ধে আল্লাহর রাস্তায় তারা সবাই শহীদ হয়েছিল। তার একমাত্র প্রতিক্রিয়া ছিল আল্লাহর প্রশংসা করা ও যা সর্বোত্তম ছিল তা পছন্দ করায় আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা। ঈমান বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আর কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে মানুষ ইহকালের ও পরকালের সুখ লাভ করে। আপনার যদি এ উপদেশ মানতে মন না চায় তবে নিজেকে একথা জিজ্ঞেস করুন- টিকিয়ে থাকার মতো কোন বিকল্প পদ্ধতি আছে কি? যদি সে বিকল্প পদ্ধতি তিক্ততা, অভিযোগ এবং যা ঘটেছে তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি হয় তবে আপনি ইহকাল ও পরকালে আপনার নিজের উপর শুধু বেদনাই বয়ে আনবেন।
“যে সন্তুষ্ট হয় তার জন্য রয়েছে সন্তুষ্টি আর যে ক্রুদ্ধ হয় তার জন্য রয়েছে ক্রোধ।”
বিপর্যয়ের পরে উত্তম প্রতিকার বা ক্রিয়াকলাপ হলো-
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
“নিশ্চয় আমরা (সবাই) আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তার দিকেই ফিরে যাব।” একথা বলা।
এর অর্থ হলো যে, আমরা সবাই আল্লাহর সৃষ্টি; আল্লাহ আমাদের মালিক; আমরা তার রাজ্যে বাস করি এবং আমরা তার নিকট ফিরে যাব। তার মাধ্যমেই শুরু এবং তার নিকটেই শেষ। সবকিছুই আল্লাহর হাতে।
একজন আরব কবি বলেছেন-
نَفْسِي الَّتِي تَمْلِكُ الْأَشْيَاءَ ذَاهِبَةٌ ٭ فَكَيْفَ أَبْكِي عَلَى شَيْءٍ إِذَا ذَهَبَا
অর্থাৎ “আমার আত্মা যা দ্রব্যাদির মালিক সে নিজেই প্রস্থানকারী, অতএব, যখন কোন জিনিস চলে যায় তখন কিভাবে আমি কাঁদি?”
মহান আল্লাহ বলেছেন-
كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ
“আল্লাহর সত্তা ছাড়া সবকিছুই ধ্বংসশীল।” (২৮-সূরা ক্বাসাস: আয়াত-৮৮)
إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ
“নিশ্চয় আপনিও (হে মুহাম্মদ!) মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।” (৩৯-সূরা আয যুমারঃ আয়াত ৩০)
আপনার বাড়ি-ঘর পুড়ে গেছে, আপনার ছেলে মারা গেছে বা আপনার জীবনের সঞ্চয় হারিয়ে গেছে একথা শুনে যদি আপনি বিস্মিত হয়ে যান তবে আপনি কী করবেন? এ মুহূর্ত থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। ভাগ্যে নির্ধারিত হয়ে গেছে তা থেকে পালানোর চেষ্টা করা হলো এক নিষ্ফল প্রচেষ্টা- এতে কোন লাভ হয় না। তকদীরে যা আছে তাতে সন্তুষ্ট থাকুন, আপনার বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিন ও আপনার পুরস্কার অর্জন করুন। অন্য কোন কিছু বেছে নিবার অধিকার আপনার নেই।
একথা নিশ্চিত যে, আপনি বলতে পারেন যে, অন্য কোন কিছু পছন্দ করার অধিকার আমার আছে; কিন্তু, এটা হীন (তুচ্ছ) কোন কিছু এবং আমি আপনাকে এর থেকে পবিত্র থাকার সতর্ক করছি। এটা হলো অভিযোগ করা, ক্রুদ্ধ হওয়া এবং রাগে জ্বলে আপনার আত্মসংবরণ হারানো (রাগে জ্বলে-পুড়ে মরা)। এ মনোভাব ও আচরণ আসলে কী করতে পারে? (এ দ্বারা) আপনি আপনার প্রভুর ক্রোধ অর্জন করবেন আর লোকজন আপনাকে ভীষণ গালাগালি করবে। অধিকন্তু, আপনি যা হারিয়েছেন তা ফিরে আসবে না, আর আপনার মুসিবতও আপনার জন্য হাল্কা হবে না।
فَلْيَمْدُدْ بِسَبَبٍ إِلَى السَّمَاءِ ثُمَّ لْيَقْطَعْ فَلْيَنظُرْ هَلْ يُذْهِبَنَّ كَيْدُهُ مَا يَغِيظُ
“তবে যেন সে আকাশের দিকে একটি রশি বিস্তার করে, অতঃপর তাতে গলায় ফাঁস দিয়ে মরে, তারপর যেন দেখে তার এ চেষ্টা তার ক্রোধের কারণ দূর করে কি না।” (২২-সূরা আল হাজ্জঃ আয়াত ১৫)
হতাশ হবেন না-দুদিন আগে বা পরে এ পৃথিবীর সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।
আমরা অত্যাচারী ও অত্যাচারিত, শক্তিশালী ও দুর্বল, ধনী ও গরিব যাই হইনা কেন মৃত্যুই আমাদের সবার শেষ পরিণতি। আপনার মৃত্যু নতুন কিছু নয়, জাতির পর জাতি আগে চলে গেছে জাতির পর জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
ইবনে বতুতা বর্ণনা করেছেন যে, পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলে এক গোরস্থানে এক হাজার রাজা বাদশাকে কবর দেয়া হয়েছে। এ কবরস্থানের প্রবেশ পথে একটি ফলকে লেখা আছে—
وسلاطينهم سَلِ الطينَ عنهم ٭ والرؤس العظام صارت عظاماً
“এ রাজা-বাদশাদের ও বড় বড় নেতাদের কবরের চারিধারের মাটিকে তাদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা কর, তারা সবাই এখন শুধু হাড় হয়ে আছে।” (এই রাজা-বাদশা ও বড় বড় নেতৃবর্গ সবাই মরে পচে গলে গেছে, এখন শুধু এদের হাড়ই অবশিষ্ট আছে বিশ্বাস না হয় তো এদের কবরের মাটি খুঁড়ে দেখ।) আশ্চর্যের বিষয় মানুষের মৃত্যুকে ভুলে যাওয়া এবং কীভাবে সে মৃত্যু সম্বন্ধে বেপরোয়া হয়ে থাকে অথচ দিন-রাত তার উপর মৃত্যুর বিভীষিকা ঝুলে
আছে মানুষ নিজেকে ধোকা দিয়ে এ চিন্তা করে যে, সে এ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকবে।
“হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় কর ও যৰ্থাথ কর্ম সম্পাদন কর, কেননা, কেয়ামতের প্রকম্প এক ভয়াবহ ব্যাপার।” (২২-সূরা আল হাজ্জ: আয়াত-১)
“মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় ঘনিয়ে এসেছে, অথচ তারা অবহেলায় বিমুখ হয়ে আছে।” (২১-সূরা আল আম্বিয়া: আয়াত-১)
“তুমি কি তাদের কাউকে দেখতে পাও অথবা তাদের ফিসফিসানি শুনতে পাও?” (১৯-সূরা মারইয়াম: আয়াত-৯৮)