লগইন করুন
একটি সহীহ হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিম্নোক্ত কালিমাকে বারবার পাঠ করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। আর তা হল-
يا ذَا الْجَلالِ وَالاِكْرَامِ
“হে রাজাধিরাজ-মহামহিম ও মর্যাদাবান আল্লাহ!”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আরো এ কথাও বলতে উপদেশ দিয়েছেন-
يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ
“হে চিরঞ্জীব! হে সব কিছুর সদা রক্ষক!”
অতএব, প্রত্যেকের নিজের কল্যাণের জন্যই এসব কালিমা (বা বাক্য বা কথা) দ্বারা আল্লাহকে ডাকা এবং তার সাহায্য চাওয়া উচিত; আর তাহলেই নিশ্চিত উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে।
“স্মরণ কর, যখন তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়েছিলে তখন তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন।” (৮-সূরা আনফাল: আয়াত-৯)
একজন মুসলিমের জীবনে প্রকৃতপক্ষে তিনটি আনন্দময় দিন আছে
১. যে দিন সে শপথপূর্বক পাপ কাজসমূহ পরিত্যাগ করে (অর্থাৎ পাপ থেকে তওবা করে) এবং জামায়াতের সাথে ফরজ সালাতসমূহ আদায় করে।
“তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের ডাকে সাড়া দাও যখন তিনি তোমদেরকে আহবান জানান”। (৮-সূরা আনফাল : আয়াত-২৪)
২. যে দিন সে পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়, পাপ কাজ পরিত্যাগ করে এবং তার প্রভুর দরবারে ফিরে আসে।
“অতপর তিনি তাদের তওবা কবুল করলেন যাতে তারা (তাদের প্রভুর নিকট) ফিরে আসে।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-১১৮)
৩. যে দিন সে এমন এক কাজ করে তার প্রভুর সাথে সাক্ষাতের জন্য মৃত্যুবরণ করে যা ভালো ও পবিত্র উভয়ই।
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে ভালোবাসে, আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ করতে ভালোবাসেন।”
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী (রাঃ)-এদের জীবনী পাঠ করে আমি তাদের মাঝে এমন পাঁচটি চরিত্র পেয়েছি যা অন্যদের থেকে পৃথক।
১. তারা এমন সরল জীবন-যাপন করতেন যা জাকজমকহীন, বড়াইহীন এবং অপব্যয়হীন ও বাহুল্যহীন ছিল।
“এবং (হে মুহাম্মদ!) আমি আপনার জন্য সহজপথকে (অর্থাৎ নেক আমলের পথকে) সহজ করে দিব।” (৮৭-সূরা আল আ'লা: আয়াত-৮)
২. তাদের ধর্মীয় জ্ঞান বা ইলম যেমন গভীর তেমনি কল্যাণকরও ছিল। আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে, তারা সে ইলম ব্যবহারিক কাজে খাটাতেন।
“আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধুমাত্র আলেমগণই আল্লাহকে ভয় করে।” (৩৫-সূরা ফাতির : আয়াত-২৮)
৩. লোক দেখানো আমলের চেয়ে তারা কলবের বা অন্তরের আমলকেই প্রাধান্য দিতেন। একারণেই তাদের একনিষ্ঠতা ছিল; তারা আল্লাহর উপর নির্ভর করতেন; তারা তাকে ভালোবাসতেন; তারা শুধুমাত্র তার কাছ থেকে (কোন কিছু) আশা করতেন এবং তারা তাকে ছাড়া আর কাউকেও ভয় করতেন না। অধিকন্তু তারা অবিরাম সাধনার মাধ্যমে বা কঠোর পরিশ্রম সহকারে নফল ইবাদত (যেমন নফল সালাত ও রোযা) করতেন।
“তিনি (আল্লাহ) জেনে নিয়েছেন তাদের অন্তরে কী আছে।” (৪৮-সূরা আল ফাতহ: আয়াত-১৮)
৪. তারা পৃথিবী ও পার্থিব আনন্দ অনুসন্ধান করতেন না। তারা পার্থিব অধিকারিত্বকে ঘৃণায় পিঠ ফিরিয়ে দিতেন এবং তারা এই মহান মনোভাবের ফল তুলতেন (আর তা হলো) : সুখ, মনের শান্তি ও একনিষ্ঠতা।
“আর যারা মু’মিন হয়ে পরকাল (এর কল্যাণ) কামনা করে এবং এর জন্য (নেক আমলের মাধ্যমে) যথাযথ চেষ্টা করে তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কৃত হবে।” (১৭-সূরা বনী ইসরাঈল: আয়াত-১৯)
৫. অন্যান্য নেক আমলের উপর তারা জিহাদকে প্রাধান্য দিতেন- এমনকি তাদের পরিচয়ের জন্য জিহাদ ব্যানারস্বরূপ হয়ে গিয়েছিল। আর জিহাদের মাধ্যমেই তারা তাদের উদ্বিগ্নতা ও সমস্যা দূর করেছিলেন। কেননা, নিম্নোক্ত সব কিছুই জিহাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। (আর তা হলো) – জিকির, জিহাদ, প্রচেষ্টা ও আমল।
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
“আর যারা আমার পথে প্রচেষ্টা বা জিহাদ করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথ দেখাব। আর অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথে আছেন।” (২৯-সূরা আল আনকাবূতঃ আয়াত-৬৯)
কুরআনে ইহজীবন সম্বন্ধে কতিপয় শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয় সত্য ও বাস্তবতার কথা উল্লেখ আছে। এ পুস্তকের বিষয়ের সাথে সম্বন্ধপূর্ণ বিষয় (তা থেকে) এখানে বর্ণনা করা হলো।
যে আল্লাহর জন্য আমল করবে আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন।
“যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর এবং তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদক্ষেপ (অবস্থান) দৃঢ় করবেন।” (৪৭-সূরা মুহাম্মদ বা কেতাল : আয়াত-৭)
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
“আর তোমাদের প্রভু বলেছেন- আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” (৪০-সূরা আল মু'মিন: আয়াত-৬০)
কেউ আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
“সে বলল: “হে আমার প্রভু! আমি অবশ্যই আমার উপর অত্যাচার করেছি, অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন।” তাই তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। (২৮-সূরা আল কাছাছ: আয়াত-১৬)
“আর তিনিই তার বান্দাদের তওবা কবুল করেন।” (৪২-সূরা আশ শুরা: আয়াত-২৫)
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“আর যে আল্লাহর উপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হবেন।” (৬৫-সূরা আত তালাক: আয়াত-৩)
তিন ধরনের লোক নিশ্চিত শাস্তি পাবে- ১. যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, ২. যারা ওয়াদা ভঙ্গ করে এবং ৩. যারা কুচক্রান্ত করে।
“তোমাদের বিদ্রোহ শুধুমাত্র তোমাদের বিরুদ্ধেই।” (১০-সূরা ইউনুস: আয়াত-২৩) “তাই যে ওয়াদা ভঙ্গ করে সে শুধুমাত্র তার ক্ষতি করার জন্যই ওয়াদা ভঙ্গ করে।” (৪৮-সূরা আল ফাতাহ: আয়াত-১০)
“কুচক্রান্ত শুধুমাত্র কুচক্রান্তকারীকেই পাকড়াও করে।” (৩৫-সূরা ফাতির: আয়াত ৪৩)
অত্যাচারীরা আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না।
“এই তো তাদের ঘর-বাড়ি, তারা যে জুলুম করেছে এ কারণে (এগুলো) বিরান পড়ে আছে”। (২৭-সূরা আন নামল: আয়াত-৫২)
আমলে সালেহের ফল স্বল্প মেয়াদে ও দীর্ঘ মেয়াদে ভোগ করা যাবে।
“অতএব আল্লাহ তাদের পার্থিব পুরস্কার ও পারলৌকিক উত্তম পুরস্কার দান করবেন।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৪৮) যে আল্লাহর আনুগত্য করবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন এবং তার রিজিক যোগাবেন।
“নিশ্চয় আল্লাহই তো রিযিক দাতা।” (৫১-সূরা আয যারিয়াত: আয়াত-৫৮)
আল্লাহ তার অনুগত বান্দাদের শক্রদের শাস্তি দিবেন।
إِنَّا مُنتَقِمُونَ
নিশ্চয় আমি (জোর করে) প্রতিশোধ নিবই।” (৪৪-সূরা আদ দোখান: আয়াত-১৬)
শেখ আবদুর রহমান ইবনে সা’দী- الوسائل المفيدة في الحياة السعيدة বা “Practical Means to a Happy Life" বা “সুখী জীবনের বাস্তব উপায়” নামক এক মহামূল্যবান কিতাব লিখেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, “আল্লাহর নেয়ামতের কথা খেয়াল করলে বান্দা বুঝতে পারবে যে সে বহুলোকের চেয়ে ভালো আছে এবং একথাও বুঝতে পারবে যে তার উপর আল্লাহর করুণার কারণে আল্লাহর প্রতি তার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।”
এমনকি ধর্মীয় ব্যাপারেও মানুষ বুঝতে পারে যে, অবহেলার কারণে আমরা সবাই অপরাধী, তা সত্ত্বেও আমাদের কেউ কেউ ফরজ সালাত নিয়মিত জামায়াতে আদায় করার ব্যাপারে, কুরআন তেলাওয়াত করার ব্যাপারে, জিকিরের বিষয়ে এবং ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে একে অপরের চেয়ে (এগিয়ে আছে তথা) ভালো। এসব কিছুই এমন নেয়ামত যার জন্য আমাদের সবার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً
“আল্লাহ তোমাদের উপর তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব নেয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন।” (৩১-সূরা লোকমান: আয়াত-২০)
প্রকাশ্য নেয়ামত বলতে বুঝায় ইসলামী তাওহীদ এবং স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, বৈধ যৌন জীবন পরিচালনা ইত্যাদিসহ সকল বৈধ ও পার্থিব আমোদ-প্রমোদ এবং গোপন নেয়ামত বলতে বুঝায় আল্লাহর প্রতি ঈমান (তথা ইসলামী তাওহীদ), জ্ঞান বা ইলম, প্রজ্ঞা বা হেকমত, আমলে সালেহ করার জন্য হেদায়াত এবং পরকালে জান্নাতে আনন্দ-উল্লাস ইত্যাদি।
ইমাম যাহাবী উল্লেখ করেছেন যে, মহাবিজ্ঞ হাদীস শাস্ত্রবিদ ইবনে আব্দুল বাকী বাগদাদের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মুসল্লিরা বের হয়ে যাবার সময় তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করতেন। তিনি এমন একজন লোকের সন্ধান করতে ছিলেন
যাকে সর্ববিষয় বিবেচনা করে তার জীবদ্দশাতেই তার স্থলাভিষিক্ত করা যায়। তিনি (সম্ভবত ইমাম যাহাবী) বর্ণনা করেন যে, তবুও তিনি এমন একজনও পেলেন না।
“আর আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপরেই তাদেরকে মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।” (১৭-সূরা বনী ইসরাঈল: আয়াত-৭০)