লগইন করুন
সম্পদ, চেহারা, সন্তানাদি, গৃহ ও মেধা আপনার ভাগে যা আছে তাতে আপনাকে অবশ্যই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
“সুতরাং, আমি আপনাকে যা দান করেছি তা গ্রহণ করুন এবং কৃতজ্ঞ হোন।” (৭-সূরা আল আরাফ: আয়াত-১৪৪)
ইসলামের প্রাথমিক যুগের অধিকাংশ আলেম ও ধাৰ্মিক মুসলিমগণ দরিদ্র ছিলেন; তাই তো একথা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, তাদের সুন্দর সুন্দর বাড়ি ঘর বা গাড়ি ঘোড়া ছিল না। এমন অসুবিধা সত্ত্বেও তারা সফল জীবন যাপন করেছিলেন। কোন যাদু দিয়ে নয় বরং তাদের যা দান করা হয়েছিল তার যথাযথ প্রয়োগ করে, তাদের সময়কে সঠিক পথে ব্যয় করে তারা মানব জাতির কল্যাণ সাধন করেছিলেন। এ কারণে তাদের জীবন, তাদের সময় ও তাদের মেধা বরকতময় ও কল্যাণকর হয়েছিল।
অপরপক্ষে, কিছু লোক আছে, যাদেরকে সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও সব ধরনের নেয়ামত দ্বারা ভূষিত করা হয়েছে। আবার এ নেয়ামতসমূহই তাদের দুর্দশা ও ধ্বংসের কারণ হয়েছে। তারা তাদের সহজাত প্রকৃতি যা বলত, তা থেকে অর্থাৎ একমাত্র পার্থিব জিনিসই যে সবকিছু নয়-এ কথা থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিল। যারা বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ থেকে বহু উপাধি অর্জন করা সত্ত্বেও অখ্যাতির সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ হয়ে আছে, তাদের দিকে লক্ষ্য করুন। তাদের মেধা ও ক্ষমতা অকেজোই থাকছে। যখন নাকি অন্যরা যাদের জ্ঞান সীমিত— তাদের যা দান করা হয়েছে তা দিয়েই তাদের নিজেদের ও সমাজের উভয়ের পাহাড়সম উপকার করতে পেরেছেন।
আপনি সুখ সন্ধানী হয়ে থাকলে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে যে চেহারা সুরত দিয়েছেন, তাতে আপনার পারিবারিক অবস্থাতে, আপনার কণ্ঠস্বরে, আপনার বুঝ শক্তির স্তরে ও আপনার বেতনের পরিমাণের উপর পরিতৃপ্ত থাকুন। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে আপনার যা আছে তার চেয়েও কমের উপরও (বা তার চেয়ে কম নিয়েও) নিজেকে পরিতৃপ্ত মনে করা উচিত।
আমাদের পূর্ববতী যে সব মুসলিমগণ বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে জীবনে উৎকর্ষ সাধন করেছিলেন তার একটি তালিকা নিম্নে আপনাদের দেয়া হল:
আতা ইবনে রাবাহ: তিনি তার সময়ে জগদ্বিখ্যাত একজন আলেম ছিলেন। তিনি শুধু মুক্ত ক্রীতদাস ও নাকবোচাই ছিলেন না, অধিকন্তু পক্ষাঘাতগ্রস্তও ছিলেন।
আল আহনাফ ইবনে ক্বাইছ : তিনি আরবদের মাঝে তার অনন্য ধৈর্যের কারণে প্রসিদ্ধ ছিলেন। শীর্ণ, কুজো, পঙ্গু (খোড়া) ও দুর্বল-ভঙ্গুর দেহ হওয়া সত্ত্বেও তিনি ঐ সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
আল আ-মাশ : তিনি তার সময়ের একজন অতি প্রসিদ্ধ হাদীস শাস্ত্রবিদ ছিলেন। তিনি এক আজাদ ক্রীতদাস ছিলেন। তার দৃষ্টিশক্তি ভালো ছিল না। তিনি ছিলেন দরিদ্র। তার পোশাক ছিল ছেড়া-ফাটা। তার বেশভূষা ছিল আলুথালু এবং তিনি দরিদ্র জীবন যাপন করতেন।
প্রত্যেক নবীই (আঃ) কোন না কোন সময় রাখাল ছিলেন। দাউদ (আঃ) কামার ছিলেন, যাকারিয়া (আঃ) কাঠমিস্ত্রি ছিলেন ও ইদ্রীস (আঃ) দর্জি ছিলেন; তবুও তারা শ্রেষ্ঠ মানব ছিলেন।
অতএব, আপনার দক্ষতা, সৎকাজ, আচার-আচরণ ও সমাজের প্রতি অবদানের ওপর আপনার মূল্য নির্ভর করে। তাই রূপ-লাবণ্য, সম্পদ বা পরিবার যাই আপনার জীবনে হারিয়েছেন তার জন্য দুঃখ করবেন না এবং আপনার জন্য আল্লাহ তায়ালা যা বরাদ্দ করেছেন, তাতে পরিতুষ্ট থাকুন।
نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُم مَّعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
আমিই এ জগতে তাদের মাঝে তাদের জীবিকা বণ্টন করি। (৪৩-সূরা আয যুখরুফ: আয়াত ৩২)