লগইন করুন
মুহরিম ব্যক্তি ইহরাম বিরোধী কাজে লিপ্ত হতে পারে তিনভাবে :
প্রথমত: হয়তো সে তা ভুলে, না জেনে, বাধ্য হয়ে কিংবা নিদ্রিত অবস্থায় করবে। এ ক্ষেত্রে তার কোন পাপ হবে না। তার ওপর কোন কিছু ওয়াজিবও হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٞ فِيمَآ أَخۡطَأۡتُم بِهِۦ وَلَٰكِن مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوبُكُمۡۚ﴾ [الاحزاب: ٥]
‘আর এ বিষয়ে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন পাপ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)।’[1] অন্য এক আয়াতে এসেছে,
﴿رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ﴾ [البقرة: ٢٨٦]
‘হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না।’[2] আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
﴿ مَن كَفَرَ بِٱللَّهِ مِنۢ بَعۡدِ إِيمَٰنِهِۦٓ إِلَّا مَنۡ أُكۡرِهَ وَقَلۡبُهُۥ مُطۡمَئِنُّۢ بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَٰكِن مَّن شَرَحَ بِٱلۡكُفۡرِ صَدۡرٗا فَعَلَيۡهِمۡ غَضَبٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١٠٦ ﴾ [النحل: ١٠٦]
‘যে ঈমান আনার পর আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে এবং যারা তাদের অন্তর কুফরী দ্বারা উন্মুক্ত করেছে, তাদের ওপরই আল্লাহর ক্রোধ এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব। ওই ব্যক্তি ছাড়া যাকে বাধ্য করা হয় (কুফরী করতে) অথচ তার অন্তর থাকে ঈমানে পরিতৃপ্ত।’[3] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْه».
‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মতের ভুল করা ও ভুলে যাওয়া জনিত এবং যার ওপর তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে এমন গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।’[4] তিনি আরো বলেন,
«رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ».
‘তিন ব্যক্তি থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে- ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে যতক্ষণ সে ঘুমিয়ে থাকে।’[5]
এসব আয়াত ও হাদীস থেকে সুস্পষ্ট প্রতীয়মাণ হয় যে, উপর্যুক্ত অবস্থায় যদি কারো ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয় সংঘটিত হয়ে যায়, তবে তা হুকুম ও শাস্তির আওতাভুক্ত হবে না; বরং তা ক্ষমা করে দেয়া হবে। তবে যখন উযর দূর হবে এবং অজ্ঞাত ব্যক্তি জ্ঞাত হবে, বিস্মৃত ব্যক্তি স্মরণ করতে সক্ষম হবে, নিদ্রিত ব্যক্তি জাগ্রত হবে, তৎক্ষণাৎ তাকে নিষিদ্ধ বিষয় থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিতে হবে এবং দূরে রাখতে হবে। উযর দূর হওয়ার পরও যদি সে ওই কাজে জড়িত থাকে, তবে সে পাপী হবে এবং যথারীতি তাকে ফিদয়া প্রদান করতে হবে। উদাহরণত, ঘুমন্ত অবস্থায় মুহরিম যদি মাথা ঢেকে নেয়, তাহলে যতক্ষণ সে নিদ্রিত থাকবে, ততক্ষণ তার ওপর কিছুই ওয়াজিব হবে না। জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে তার কর্তব্য হল মাথা খুলে রাখা। যদি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পরও জেনে-বুঝে মাথা আবৃত রেখে দেয়, তবে সেজন্য তাকে ফিদয়া প্রদান করতে হবে।
দ্বিতীয়ত: নিষিদ্ধ বিষয় উযর সাপেক্ষে ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘটিত করা, কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে পাপী হবে না, তবে তাকে ফিদয়া প্রদান করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَا تَحۡلِقُواْ رُءُوسَكُمۡ حَتَّىٰ يَبۡلُغَ ٱلۡهَدۡيُ مَحِلَّهُۥۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ بِهِۦٓ أَذٗى مِّن رَّأۡسِهِۦ فَفِدۡيَةٞ مِّن صِيَامٍ أَوۡ صَدَقَةٍ أَوۡ نُسُكٖۚ ﴾ [البقرة: ١٩٦]
‘আর তোমরা তোমাদের মাথা মুণ্ডন করো না, যতক্ষণ না পশু তার যথাস্থানে পৌঁছে। আর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ কিংবা তার মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে তবে সিয়াম কিংবা সদাকা অথবা পশু জবাইয়ের মাধ্যমে ফিদয়া দেবে।’[6]
তৃতীয়ত: নিষিদ্ধ বিষয় ইচ্ছাকৃতভাবে বৈধ কোন উযর ছাড়া সংঘটিত করা। এ ক্ষেত্রে তাকে ফিদয়া প্রদান করতে হবে এবং সে পাপীও হবে। এ ক্ষেত্রে কোন অপরাধের দরুণ কী ফিদয়া দিতে হবে তার বিস্তারিত বিবরণ পূর্বে দেয়া হয়েছে।
[2]. বাকারা : ২৮৬।
[3]. নাহল : ১০৬।
[4]. আবূ দাউদ : ৭২১৯।
[5]. আবূ দাউদ : ৪৪০০।
[6]. বাকারা : ১৯৬।