লগইন করুন
শরীয়ত নির্ধারিত সময়ে ছালাত আদায় করাই ছালাতের পূর্ণাঙ্গরূপ। এজন্য ‘আল্লাহ্র কাছে কোন্ আমলটি উত্তম?’ এ প্রশ্নের জবাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “সময়মত ছালাত আদায় করা।” হাদীছে একথা বলা হয়নি ‘ছালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা।’ কেননা কিছু ছালাত তো এমন আছে যা সময়ের আগেই আদায় করা সুন্নাত। আর কিছু ছালাত এমন আছে যা সময় হওয়ার পরও দেরী করে আদায় করা সুন্নাত। যেমন এশা ছালাত রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করা সুন্নাত। অতএব কোন নারী যদি প্রশ্ন করে, গৃহে অবস্থানের সময় যদি আমি এশা ছালাতের আযান শুনি, তবে আমার জন্য কোনটি উত্তম- আযানের পর পর এশা ছালাত আদায় করে নেয়া নাকি রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করা?
জবাবে বলব, তার জন্য উত্তম হচ্ছে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করে এশা ছালাত আদায় করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা রাতে বের হতে দেরী করলেন। এমনকি লোকেরা বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! নারী ও শিশুরা তো ঘুমিয়ে পড়লো। তারপর তিনি বের হয়ে ছালাত আদায় করলেন এবং বললেন,
إِنَّهُ لَوَقْتُهَا لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي
“এটাই এ নামাযের সময়। আমার উম্মতের উপর যদি কষ্টকর মনে না করতাম (তবে এশা ছালাতের জন্য এ সময়টাকে নির্ধারণ করে দিতাম।) অতএব নারী নিজ গৃহে অবস্থানের সময় তার জন্য উত্তম হচ্ছে দেরী করে এশা ছালাত আদায় করা।
অনুরূপভাবে একদল লোক যদি [সফরে] থাকে (যেখানে আশে পাশে কোন মসজিদ নেই।) তারা যদি প্রশ্ন করে এশা ছালাত কি আমরা দ্রুত পড়ে নিব নাকি দেরী করব? জবাবে বলবঃ তাদের জন্য উত্তম হচ্ছে, দেরী করা। অবশ্য দেরী করলে যদি কষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে আগেভাগে পড়ে নেয়াই উত্তম।
অন্যান্য ছালাতগুলোর ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে, আগেভাগে প্রথম ওয়াক্তেই ছালাত আদায় করা। ফজর, যোহর, আছর ও মাগরিব ছালাত সমূহ প্রথম ওয়াক্তে আদায় করবে। কিন্তু যদি দেরী করার কোন কারণ থাকে, তবে দেরী করাই উত্তম হবে।
দেরী করার কারণ যেমন, গ্রীষ্মকালে যখন প্রচন্ড তাপদাহ শুরু হয়, তখন যোহর ছালাত দেরী করে ঠান্ডা সময়ে আদায় করা উত্তম। অর্থাৎ- আছর ছালাতের কিছুক্ষণ আগে। কেননা আছরের ওয়াক্ত নিকটবর্তী হলে তাপমাত্রা কমে আসে। একথার দলীলঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلَاةِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ
“তাপমাত্রা প্রচন্ড হলে, যোহর ছালাতকে দেরী করে ঠান্ডার সময়ে আদায় করবে। কেননা প্রচন্ড গরম জাহান্নামের কঠিন প্রখরতা থেকে আসে।” নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে থাকাবস্থায় ছালাতের সময় হলে বেলাল আযান দেয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেন। তখন তিনি তাকে বলতেন “ঠান্ডা কর”। কিছুক্ষণ পর আবার আযানের জন্য উঠতেন। তিনি বলতেন, “ঠান্ডা কর।” (অর্থাৎ- রোদের তাপ কম হওয়ার অপেক্ষা কর।) কিছুক্ষণ পর বেলাল আযান দেয়ার জন্য দাঁড়াতেন। তখন তিনি তাকে আযান দেয়ার অনুমতি দিতেন।
দেরী করে ছালাত আদায় করা উত্তম হওয়ার আরো কারণ এমন হতে পারেঃ যেমন, প্রথম ওয়াক্তে ছালাত আদায় করলে জামাআত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় দেরী করে জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করাই উত্তম। যেমন একজন লোক মাঠে-ময়দানে কর্মরত অবস্থায় নামাযের সময় হয়ে গেছে। সে জানে, লোকালয়ে গেলে শেষ সময়ে জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করতে পারবে। এর জন্য কোনটি উত্তম- সময় হওয়ার সাথে সাথে একাকি ছালাত আদায় করে নেয়া, নাকি দেরী করে জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করা?
জবাবে বলব, এর জন্য উত্তম হচ্ছেঃ দেরী করে জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করা। বরং আমি বলি, জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করার জন্য দেরী করা ওয়াজিব।