লগইন করুন
এর বিপরীতে খৃস্টান মিশনারিগণ ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ বিষয়ে মুসলিমদের বিশ্বাস বিকৃত করে প্রতারণামূলকভাবে মুসলিমদেরকে খৃস্টান বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। সরলপ্রাণ মুসিলমদেরকে তারা বলেন: যেহেতু ঈসা মাসীহ আবার আসবেন, কাজেই এখনই আমাদের সকলের দায়িত্ব তার ধর্ম গ্রহণ করে প্রস্ততি গ্রহণ করা!
বস্ত্তত বিগত দেড় হাজার বছরে খৃস্টান মিশনারিগণ মুসলিমদেরকে ধর্মান্তর করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এজন্য গত শতকের শেষ দিকে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মুসলিমদেরকে মুসলিম সেজে ধর্মান্তর করার। তারা তাদের গ্রন্থগুলো ইসলামী পরিভাষায় রূপান্তর করেছেন এবং মুসলিমদের মধ্যে বলে বেড়াচ্ছেন যে, তারা খৃস্টান নন; তারা ঈসায়ী মুসলমান, তারা কুরআন, ইঞ্জিল, তাওরাত, যাবুর সবই মানেন, তাঁরা মুহাম্মাদ (ﷺ) ও ঈসা (আঃ) উভয়কেই মানেন...। এ জাতীয় অগণিত মিথ্যাচারের পাশাপাশি তারা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত উদ্ধৃত করে দাবি করেন যে, এ সকল আয়াত তাদের ধর্ম সঠিক বলে প্রমাণ করে। তাদের এ সকল প্রতারণার স্বরূপ জানতে আমার লেখা ‘‘কিতাবুল মোকাদ্দস, ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম’’ পুস্তিকাটি পাঠ করতে অনুরোধ করছি। এখানে ঈসা মাসীহের অবতরণ বিষয়ক বিভ্রান্তি সংক্ষেপে পর্যালোচনা করব।
প্রচলিত ইঞ্জিলে বারবার বলা হয়েছে যে, ঈসা (আঃ) তাঁর ভক্তদের জীবদ্দশাতেই কিয়ামত ঘটার ও তাঁর পুনরাগমনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে প্রতিশ্রুত শতভাগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। প্রচলিত ইঞ্জিল শরীফ নামক পুস্তকের নিম্নের কয়েকটি উদ্ধৃতি দেখুন:
(১) ‘‘কেননা মনুষ্যপুত্র আপন দূতগণের (angels) সহিত আপন পিতার প্রতাপে আসিবেন, আর তখন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাহার ক্রিয়ানুসারে প্রতিফল দিবেন। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যাহারা এখানে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে, তাহাদের মধ্যে এমন কয়েক জন আছে, যাহারা কোন মতে মৃত্যুর আস্বাদ পাইবে না, যে পর্যন্ত মনুষ্যপুত্রকে আপনার রাজ্যে আসিতে না দেখিবে।’’ মথি ১৬/২৭-২৮।
(২) ‘‘আমরা প্রভুর বাক্য দ্বারা তোমাদিগকে ইহা বলিতেছি যে, আমরা যাহারা জীবিত আছি, যাহারা প্রভুর আগমন পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকিব, আমরা কোন ক্রমেই সেই নিদ্রাগত লোকদের অগ্রগামী হইব না। কারণ প্রভু স্বয়ং আনন্দধ্বনি সহ, প্রধান দূতের রব সহ, এবং ঈশ্বরের তূরীবাদ্য সহ স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিবেন, আর যাহারা খ্রীষ্টে মরিয়াছে তাহারা প্রথমে উঠিবে। পরে আমরা যাহারা জীবিত আছি, যাহারা অবশিষ্ট থাকিব, আমরা আকাশে প্রভুর সহিত সাক্ষাৎ করিবার নিমিত্ত একসঙ্গে তাহাদের সহিত মেঘযোগে নীত হইব; আর এইরূপে সতত প্রভুর সঙ্গে থাকিব।’’ ১ থিষলনীকীয় ৪/১৫-১৭।
(৩) ‘‘দেখ, আমি তোমাদিগকে এক নিগূঢ়তত্ত্ব বলি; আমরা সকলে নিদ্রাগত হইব না (মরিব না), কিন্তু সকলে রূপান্তরীকৃত হইব; এক মুহূর্তের মধ্যে, চক্ষুর পলকে, শেষ তূরীধ্বনিতে হইবে; কেননা তূরী (সিঙ্গা) বাজিবে, তাহাতে মৃতেরা অক্ষয় হইয়া উত্থাপিত হইবে, এবং আমরা রূপান্তরীকৃত হইব।’’ ১ করিন্থীয় ১৫/৫১-৫২।
(৪) ‘‘আর তিনি আমাকে কহিলেন, তুমি এ গ্রন্থের ভাববাণীর বচন সকল মুদ্রাঙ্কিত করিও না (লিখিও না); কেননা সময় (কিয়ামত) সন্নিকট। যে অধর্মচারী, সে ইহার পরেও অধর্মাচরণ করুক এবং যে কলুষিত, সে ইহার পরেও কলুষিত হউক; এবং যে ধার্মিক, সে ইহার পরেও ধর্মাচরণ করুক; এবং যে পবিত্র, সে ইহার পরেও পবিত্রকৃত হউক।’’ (প্রকাশিত বাক্য/ প্রকাশিত কালাম ২২/১০-১১)
খৃস্টানদের মধ্যে প্রচলিত ইঞ্জিল শরীফ ঈসা (আঃ)-কে অত্যন্ত অবমানাকরভাবে চিত্রিত করেছে। যেমন, তিনি মানুষদেরকে গালি দিতেন (মথি ১৬/২৩, ২৩/১৩-৩৩), অন্য বংশ বা ধর্মের মানুষদের শূকর ও কুকুর বলতেন (মথি ৭/৬; ১৫/২২-২৮, মার্ক ৭/২৫-২৯), পূর্ববর্তী নবীদেরকে চোর-ডাকাত বলতেন (যোহন ১০/৭-৮), নিরপরাধ মানুষদেরকে অভিশাপ দিতেন (মথি ২৩/৩৫-৩৬), অকারণে হত্যা করতেন (মথি ২১/১৮-২১, মার্ক ৫/১০-১৪; ১১/১২-২২), অবিশ্বাসীদেরকে নির্বিচারে ধরে ধরে জবাই করার নির্দেশ দিতেন (লূক ১৯/২৭), মিথ্যা বলতেন (মথি ১৬/২৭-২৮: ১৯/২৮: মার্ক ২/২৫-২৬, ১১/২৩, ১৬/১৭-১৮: লূক ১৮/২৯-৩০, যোহন ৩/১৩), মদ পান করে মাতাল হতেন (লূক ৭/৩৪-৫০, যোহন ১৩/৪-৫), বেশ্যা মেয়েদেরকে তাঁকে স্পর্শ করতে ও চুম্বন করতে দিতেন (লূক ৭/৩৪-৫০, ৮/১-৩, যোহন ১১/১-৫), নিজের মায়ের সাথে ভয়ঙ্কর বেয়াদবি করেছেন, (মথি ১২/৪৬-৫০; মার্ক ৩/৩১-৩৫; লূক ৮/১৯-২১, যোহন ২/৪, ১৯/২৬), তিনি অত্যন্ত ভীত ও কাপরুষ ছিলেন (মথি ২৬/৩৬-৪৬, ২৭/৩৮-৫১; লূক ২২/৪১-৪৬, মার্ক ১৫/২৭-৩৮)। সাধু পল ও তাঁর অনুসারীরা ঈসা (আঃ)-কে ‘মালউন’ বা অভিশপ্ত বলে দাবি করেছেন। (গালাতীয় ১০-১৩)। (নাঊযু বিল্লাহ!)
খৃস্টান প্রচারককে বলুন, আপনারা ঈসা (আঃ)-এর অনুসারী নন, আপনারা সাধু পলের অনুসারী। আপনার ঈসা (আঃ)-কে অপমানিত করেছেন এবং তাঁর নাম ভাঙ্গিয়ে শিরক-কুফর প্রচার করেছেন। তিনি অবতরণ করে প্রথমে আপনাদের মত মিথ্যচারীদেরকেই ধ্বংস করবেন। কাজেই তাঁর বিষয়ে সাধুপলের মিথ্যা ধর্ম পরিত্যাগ করে কুরআনের বিশুদ্ধ বিশ্বাস গ্রহণ করে তাঁর পুনরাগমনের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করুন।