আল-ফিকহুল আকবর হেদায়াত, কবর, অনুবাদ, আয়াতসমূহের মর্যাদা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আত্মীয়গণ, মিরাজ, কিয়ামতের আলামত ইত্যাদি ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৯. কিয়ামাতের আলামাত / ৯. ১. কিয়ামাতের সময় ও আলামত

সর্বশেষ ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) কিয়ামতের কয়েকটি ‘আলামাত কুবরা’ বা ‘বড় চিহ্ন’ উল্লেখ করে বলেন: ‘‘দাজ্জালের বহির্গমন, ইয়াজূজ ও মাজূজের বহির্গমন, অস্তগমনের স্থান থেকে সূর্যের উদয় হওয়া, আকাশ থেকে ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ এবং কিয়ামাতের অন্যান্য সকল পূর্বাভাস, যেভাবে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তা সবই সত্য এবং ঘটবেই। মহান আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।’’

৯. ১. কিয়ামাতের সময় ও আলামত

কিয়ামাত (القيامة) শব্দটি (قام) ক্রিয়া থেকে গৃহীত। এর অর্থ দাঁড়ানো বা উত্থিত হওয়া। ইসলামী পরিভাষায় মৃত্যু থেকে পুনরুত্থানকে কিয়ামাত বলা হয়। সাধারণত মহাপ্রলয় ও পুনরুত্থানকে একত্রে ‘কিয়ামত’ বলা হয়। অনেক সময় সামগ্রিকভাবে পরকালীন জীবনকে ‘কিয়ামাত’ বা ‘কিয়ামত দিবস’ বলা হয়। আমরা আগেই দেখেছি যে, আখিরাত ও কিয়ামাতের বিশ্বাস ঈমানের অন্যতম বিষয়। কিয়ামাতে বিশ্বাসের অন্যতম দিক যে এর সময় বা ক্ষণ আল্লাহ তাঁর কোনো সৃষ্টিকে জানান নি। কুরআনে বিষয়টি বারংবার বলা হয়েছে। একস্থানে আল্লাহ বলেন:


قُلْ لا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ الْغَيْبَ إِلا اللَّهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ


‘‘বল, ‘আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই গাইবের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না তারা কখন পুনরুত্থিত হবে।’’[1]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে কিয়ামাত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন:


مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنْ السَّائِلِ وَسَأُخْبِرُكَ عَنْ أَشْرَاطِهَا إِذَا وَلَدَتْ الأَمَةُ رَبَّهَا وَإِذَا تَطَاوَلَ رُعَاةُ الإِبِلِ الْبُهْمُ فِي الْبُنْيَانِ فِي خَمْسٍ لا يَعْلَمُهُنَّ إِلا اللَّهُ ثُمَّ تَلا النَّبِيُّﷺ : إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ...الآيَةَ


‘‘প্রশ্নকারীর চেয়ে প্রশ্নকৃত ব্যক্তি এ বিষয়ে বেশি জানে না। আমি তোমাকে কিয়ামাতের আলামত বলব। যখন দাসী তার প্রভুকে জন্ম দেবে এবং যখন অবলা উটের রাখালগণ সুউচ্চ ইমারত-অট্টালিকা নিয়ে প্রতিযোগিতা করবে। কিয়ামাতের জ্ঞান পাঁচটি বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন[2]: ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর কাছেই রয়েছে কিয়ামাতের জ্ঞান....’’[3]

এভাবে আমরা দেখছি যে, কিয়ামাতের সময় আল্লাহ মানুষকে জানান নি, তবে কিয়ামাতের বিষয়ে কিছু পূর্বাভাস তিনি জানিয়েছেন। কুরআনে বলা হয়েছে:


فَهَلْ يَنْظُرُونَ إِلا السَّاعَةَ أَنْ تَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً فَقَدْ جَاءَ أَشْرَاطُهَا فَأَنَّى لَهُمْ إِذَا جَاءَتْهُمْ ذِكْرَاهُمْ


‘‘তারা কি কেবল এজন্য অপেক্ষা করছে যে, কিয়ামাত তাদের নিকট এসে পড়ুক আকস্মিকভাবে? কিয়ামাতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে! কিয়ামাত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?’’[4]

কুরআন ও হাদীসের আলোকে আলিমগণ কিছু বিষয়কে ‘আলামাত সুগরা’ (العلامات الصغرى) অর্থাৎ ‘ক্ষুদ্রতর ‘আলামত’ এবং কিছু বিষয়কে ‘আলামাত কুবরা’ (العلامات الكبرى) অর্থাৎ ‘বৃহত্তর ‘আলামত’ বা ‘বিশেষ আলামত’ বলে উল্লেখ করেছেন।

[1] সূরা (২৭) নামল: ৬৫ আয়াত। আরো দেখুন: সূরা (৭) আ‘রাফ: ১৮৭; সূরা (৩১) লুকমান: ৩৪; সূরা (৪১) ফুস্সিলাত: ৪৭; সূরা (৪৩) যুখরুফ: ৮৫; সূরা (৭৯) নাযি‘আত: ৪২-৪৫ আয়াত।

[2] সূরা (৩১) লুকমান: ৩৪ আয়াত।

[3] বুখারী, আস-সহীহ ১/২৭ (কিতাবুল ঈমান, বাবু সুআলি জিবরাঈলান নাবিয়্যা আনিল ঈমান); মুসলিম, আস-সহীহ ১/৩৯ (কিতাবুল ঈমান, বাবু বায়ানিল ঈমানি ওয়াল ইসলাম...)

[4] সূরা (৪৭) মুহাম্মাদ: ১৮ আয়াত।