লগইন করুন
এ সকল হাদীসে বর্ণিত ইসরা ও মিরাজের সার-সংক্ষেপ এই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কাবা ঘরের নিকট শুয়ে ছিলেন। এমতাবস্থায় জিবরাঈল (আঃ) কয়েকজন ফিরিশতা সহ তথায় আগমন করেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বক্ষের উপরিভাগ থেকে পেট পর্যন্ত কেটে তাঁর হৃৎপিন্ড বের করেন, তা ধৌত করেন এবং বক্ষকে ঈমান, হিকমাত ও প্রজ্ঞা দ্বারা পরিপূর্ণ করেন এবং তাঁর হৃৎপিন্ডকে পুনরায় বক্ষের মধ্যে স্থাপন করেন। এরপর ‘‘বুরাক’’ নামে আলোর গতি সম্পন্ন একটি বাহন তাঁর নিকট আনয়ন করা হয়। তিনি এ বাহনে বাইতুল মাকদিস বা জেরুজালেমে গমন করেন। মহান আল্লাহ তথায় পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূলকে সমবেত করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ইমামতিতে তাঁরা তথায় দু রাক‘আত সালাত আদায় করেন। এরপর ‘‘মি’রাজ’’ বা ‘‘ঊর্ধ্বারোহণ যন্ত্র’’ আনয়ন করা হয়। তিনি মি’রাজে উঠে ঊর্ধ্বে গমন করেন এবং একে একে সাত আসমান অতিক্রম করেন। বিভিন্ন আসমানে বিভিন্ন নবী-রাসূলের সাথে তাঁর সাক্ষাত, সালাম ও দুআ বিনিময় হয়। এরপর তিনি সৃষ্টিজগতের শেষ প্রান্ত ‘‘সিদরাতুল মুনতাহা’’ গমন করেন। তথা থেকে তিনি জান্নাত, জাহান্নাম ও মহান আল্লাহর অন্যান্য মহান সৃষ্টি পরিদর্শন করেন ও তাঁর মহান সান্নিধ্য লাভ করেন। মহান আল্লাহ তাঁর উম্মাতের জন্য দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত সালাতের বিধান প্রদান করেন। পরে তা সংক্ষিপ্ত করে ৫ ওয়াক্তের বিধান দেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিরাজ থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। মিরাজে গমন ও প্রত্যাবর্তনের সময় এবং জান্নাত-জাহান্নামে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বিভিন্ন পাপ ও পুণ্যের বিভিন্ন প্রকার শাস্তি ও পুরস্কার দেখানো হয়।[1]
মুতাযিলা ও অন্যান্য কতিপয় ফিরকা বিজ্ঞান বা যুক্তির নামে ‘মিরাজ’ অস্বীকার করেছে বা ব্যাখ্যা করেছে। এ বিষয়ে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মূলনীতি এ বিষয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত সকল বিষয় সরল ও স্বাভাবিক অর্থে বিশ্বাস করা। এগুলিকে অবিশ্বাস করা বা ব্যাখ্যার নামে সরল অর্থ অস্বীকার করা বিভ্রান্তি। যেহেতু ইসরা বা নৈশভ্রমণের কথা কুরআন কারীমে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে সেহেতু তা অস্বীকার করা কুফর বলে গণ্য। আর মিরাজ বা ঊর্ধ্বভ্রমণের বিষয়টি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাদীস দ্বারা প্রমাণিত বিষয়গুলি অস্বীকার করলে তাকে বিভ্রান্ত ও বিদআতী বলে গণ্য করা হবে, কাফির বলে গণ্য করা হবে না। হানাফী ফকীহগণ বলেছেন:
وَمَنْ أَنْكَرَ الْمِعْرَاجَ يُنْظَرُ إنْ أَنْكَرَ الإِسْرَاءَ من مَكَّةَ إلَى بَيْتِ الْمَقْدِسِ فَهُوَ كَافِرٌ وَإِنْ أَنْكَرَ الْمِعْرَاجَ من بَيْتِ الْمَقْدِسِ لا يَكْفُرُ
‘‘যদি কেউ মি’রাজ অস্বীকার করে তবে দেখতে হবে সে কী অস্বীকার করছে। সে যদি মক্কা থেকে বাইতুল মাকদিস পর্যন্ত নৈশযাত্রা বা ইসরা অস্বীকার করে তবে সে কাফির। আর যদি বাইতুল মাকদিস থেকে মিরাজ বা ঊর্ধ্বগমন অস্বীকার করে তবে কাফির হবে না।’’[2]
এ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফার বক্তব্য আমরা দেখেছি। ইমাম আবূ হানীফা (রাহ)-এর আকীদা ব্যাখ্যা করে ইমাম তাহাবী (রাহ) বলেন:
وَالْمِعْرَاجُ حَقٌّ، وَقَدْ أُسْرِيَ بِالنَّبِيِّ ﷺ، وَعُرِجَ بِشَخْصِهِ فِي الْيَقَظَةِ إِلَى السَّمَاءِ، ثُمَّ إِلَى حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الْعُلا، وَأَكْرَمَهُ اللَّهُ بِمَا شَاءَ، وَأَوْحَى إِلَيْهِ مَا أَوْحَى "مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى"
‘‘মি’রাজের ঘটনা সত্য। নবী (ﷺ)-কে রাত্রে ভ্রমণ করানো হয়েছে। তাঁকে জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে প্রথমে আকাশে উঠানো হয়, পরে ঊর্ধ্ব জগতের যেখানে আল্লাহ্ পাকের ইচ্ছা ছিল সেখানে নেওয়া হয়। তথায়, আল্লাহ্ পাক যা ইচ্ছা ছিল তা দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করেন এবং তাঁর প্রতি যে বার্তা দেওয়ার ছিল তা প্রদান করেন। ‘‘যা সে দেখেছে সে বিষয়ে অন্তর মিথ্যা বলে নি[3]।’’[4]
[2] আল-ফাতাওয়া হিনদিয়্যাহ ১/৮৪। আরো দেখুন: ইবন নুজাইম, আল-বাহরুর রায়িক ৩/৩৯৯; যাইলায়ী, তাবয়ীনুল হাকাইক ২/১৬০; ইবনুল হুমাম, শারহু ফাতহিল কাদীর ১/৩৫০।
[3] সূরা (৫৩) নাজম: ১১ আয়াত।
[4] তাহাবী, আল-আকীদাহ, পৃ. ১০-১১।