আল-ফিকহুল আকবর মুরজিয়া মতবাদ, নেক আমল, মুজিযা-কারামত, আখিরাত, ঈমান-ইসলাম ও অন্যান্য প্রসঙ্গ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৯. শাফাআত ও আখিরাতের কিছু বিষয় / ৯. ১. শাফাআতের অর্থ ও এ বিষয়ক বিভ্রান্তি

আমরা বলেছি যে, মুতাযিলীগণ আল্লাহর ইনসাফের অজুহাতে শাফাআত অস্বীকার করত। এজন্য এ প্রসঙ্গে ইমাম আবূ হানীফা শাফাআত ও আখিরাতের অন্যান্য কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন: ‘‘নবীগণের শাফা‘আত সত্য। পাপী মুমিনগণ এবং কবীরা গোনাহকারীগণের জন্য- পাপের কারণে যাদের জাহান্নাম পাওনা হয়েছিল তাদের জন্য- কিয়ামাতের দিন আমাদের নবী (ﷺ)-র শাফা‘আতও সত্য।

৯. ১. শাফাআতের অর্থ ও এ বিষয়ক বিভ্রান্তি

শাফা‘আত (الشفاعة) অর্থ সুপারিশ করা বা কারো দাবি বা আব্দারকে সমর্থন করা। শব্দটি ‘আশ-শাফউ (الشفع) থেকে গৃহীত, যার অর্থ জোড়া বা জোড়া বানানো। আল্লামা ইবনুল আসীর (৬০৬ হি) বলেন:


قَدْ تَكَرَّرَ ذِِكْرُ الشَّفَاعَةِ فِيْ الْحَدِيْثِ فِيْمَا يَتَعَلَّقُ بِأُمُوْرِ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَهِيَ السُّؤالُ فِيْ التَّجَاوُزِ عَنِ الذُّنُوْبِ وَالْجَرائِمِ.


‘‘হাদীসে বিভিন্ন স্থানে শাফা‘আত শব্দটি এসেছে জাগতিক বা আখিরাতের বিষয়ে। এর অর্থ পাপ বা অপরাধের শাস্তি না দেওয়ার জন্য প্রার্থনা করা।’’[1]

শাফাআত বিষয়ে দ্বিমুখি বিভ্রান্তি জন্ম নিয়েছিল। প্রথমত কাফিরগণ শাফাআতকে আল্লাহর ফিরিশতা বা নবী-ওলীগণের ক্ষমতা বলে বিশ্বাস করত। তারা দাবি করত যে, আল্লাহ তাদেরকে শাফাআতের ক্ষমতা প্রদান করেছেন, তাঁরা নিজেদের ইচ্ছামত যাকে খুশি শাফাআত করবেন। কাজেই তাদেরকে ভক্তির মাধ্যমে খুশি করতে পারলেই হলো। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শীয়াগণ এরূপ বিশ্বাস পোষণ করেন। এরূপ বিশ্বাস পোষণকারীরা ফিরিশতা, নবীগণ ও নেককার বান্দাগণের শাফাআতের বিষয়ে পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থের ও কুরআন-হাদীসের বক্তব্যকে দলীল হিসেবে পেশ করত।

পক্ষান্তরে খারিজী, মু’তাযিলা ও অন্যান্য কতিপয় ফিরকা পাপীদের জন্য নবীগণের বা অন্যদের শাফা‘আত অস্বীকার করে। এক্ষেত্রে তাদের দলিলগুলো মূলত দু প্রকারের: (১) শাফা‘আত অস্বীকার বিষয়ক কুরআনের আয়াতগুলো এবং (২) তাদের মতবাদ ভিত্তিক যুক্তি। তাদের মতে পাপী মুসলিমের শাস্তি না দেওয়া আল্লাহর ন্যায়বিচারের পরিপন্থী, কাজেই আল্লাহ নিজের রহমতে বা অন্য কারো শাফা‘আতে কোনো পাপীকে ক্ষমা করতে পারেন না। আমরা কুরআন-হাদীসের আলোকে শাফা‘আত বিষয়ে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদা ব্যাখ্যা করব।

[1] ইবনুল আসীর, আন-নিহায়া ২/৪৮৫।