লগইন করুন
মুজিযা (المعجزة) শব্দটি আরবী ‘ইজায’ (إعجاز) শব্দ থেকে গৃহীত, যার অর্থ ‘অক্ষম করা’। মুজিযা অর্থ ‘অক্ষমকারী অলৌকিক নিদর্শন’’। নবীগণ তাঁদের নুবুওয়াতের দাবি প্রমাণ করতে যে সকল অলৌকিক নিদর্শন প্রদর্শন করেন সেগুলোকে ‘মুজিযা’ বলা হয়।[1]
কুরআন-হাদীসে মুজিযা শব্দটি ব্যবহৃত হয় নি, মুজিযা বুঝাতে ‘আয়াত’ (الآية) অর্থাৎ চিহ্ন বা নিদর্শন বলা হয়েছে। পরবর্তী যুগে ‘মুজিযা’ পরিভাষাটির উৎপত্তি। নতুন পরিভাষা ব্যবহারে কোনো আপত্তি নেই; তবে কুরআন-হাদীসের ‘‘মাসনূন’’ পরিভাষা ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে উত্তম। সম্ভবত এজন্যই ‘মুজিযা’ বুঝাতে ইমাম আযম ‘আয়াত’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
নবী-রাসূলগণ আল্লাহর ইচ্ছায় মুজিযা প্রদর্শন করেছেন। আল্লাহ বলেন:
قَالُوا إِنْ أَنْتُمْ إِلا بَشَرٌ مِثْلُنَا تُرِيدُونَ أَنْ تَصُدُّونَا عَمَّا كَانَ يَعْبُدُ آَبَاؤُنَا فَأْتُونَا بِسُلْطَانٍ مُبِينٍ. قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ إِنْ نَحْنُ إِلا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَمُنُّ عَلَى مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَمَا كَانَ لَنَا أَنْ نَأْتِيَكُمْ بِسُلْطَانٍ إِلا بِإِذْنِ اللَّهِ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
‘‘তারা (কাফিরগণ) বলত: ‘তোমরা (নবীগণ) তো আমাদেরই মত মানুষ। আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাদের ইবাদত করত তোমরা তাদের ইবাদত থেকে আমাদেরকে বিরত রাখতে চাও। অতএব তোমরা আমাদের নিকট কোনো অকাট্য ক্ষমতা (মুজিযা) উপস্থিত কর। তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বলতেন: সত্য বটে আমরা তোমাদের মত মানুষ বৈ কিছুই নই, কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত তোমাদের নিকট ক্ষমতা (মুজিযা) উপস্থিত করা আমাদের কাজ নয়। মুমিনগণের আল্লাহরই উপর নির্ভর করা উচিত।’’[2]
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে:
وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَنْ يَأْتِيَ بِآَيَةٍ إِلا بِإِذْنِ اللَّهِ
‘‘আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোনো নিদর্শন (মুজিযা) উপস্থিত করা কোনো রাসূলের কাজ নয়।’’[3]
এ সকল আয়াত ও অন্যান্য আয়াত বারবার উল্লেখ করেছে যে, নবী-রাসূলগণ আল্লাহর ইচ্ছায় ও নির্দেশে মুজিযা প্রদর্শন করেছেন। কুরআন কারীমে নবীগণের অনেক মুজিযার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নূহ (আঃ)-এর নৌকার মুজিযা, ইবরাহীম (আঃ)-এর অগ্নিকুন্ডে নিরাপদ থাকার মুজিযা, মূসা (আঃ)-এর লাঠি ও অন্যান্য মুজিযা, ঈসা (আঃ)-এর মৃতকে জীবিত করা ও অন্যান্য মুজিযা, মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করা, ইসরা, মিরাজ ও অন্যান্য মুজিযা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন হাদীসে এ বিষয়ে অনেক কিছু বলা হয়েছে। এগুলি বিশ্বাস করা মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব।
[2] সূরা (১৪) ইবরাহীম: ১০-১১ আয়াত। আরো দেখুন: সূরা (৬) আন‘আম: ৯১ আয়াত; সূরা (২১) আম্বিয়া: ৩; সূরা (২৩) মুমিনূন: ২৪, ৩৩; সূরা (২৬) শু‘আরা: ১৫৪, ১৫৬; সূরা (৩৬) ইয়াসীন: ১৫ আয়াত।
[3] সূরা (১৩) রা’দ: ৩৮ আয়াত, সূরা (৪০) গাফির/মুমিন: ৭৮ আয়াত।