লগইন করুন
পরিবারের লোকেরা যদি একেবারেই ছালাত আদায় না করে, তবে তারা কাফের ইসলাম থেকে বের হয়ে মুরতাদে পরিণত হবে। তাদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করা জায়েয নয়। কিন্তু তার উপর আবশ্যক হচ্ছে তাদেরকে দা‘ওয়াত দিবেন। বারবার অনুরোধ করবেন। হতে পারে আল্লাহ্ তাদেরকে হেদায়াত করবেন। কেননা ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের- নাঊযুবিল্লাহ্। কুরআন, সুন্নাহ্, ছাহাবায়ে কেরামের উক্তি ও বিশুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি এর দলীল।
যারা বেনামাযীকে কাফের বলার পক্ষপাতী নয়, তাদের দলীলগুলো চারটি অবস্থার বাইরে নয়। যথাঃ
ক) মূলতঃ উক্ত দলীল সমূহে তাদের মতের পক্ষে দলীল নেই।
খ) সেগুলা এমন গুণ সম্পন্ন যে তা বিদ্যমান থাকাবস্থায়, নামায পরিত্যাগের বিষয়টি তার অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়।
গ) অথবা এমন কিছু ওযর ও অবস্থা উল্লেখ করা হয়েছে, যে কারণে নামায পরিত্যাগ করা মার্জনীয়।
ঘ) অথবা উক্ত দলীল সমূহ আম বা ব্যাপক। ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের হওয়ার হাদীছগুলো দ্বারা তা খাছ বা বিশিষ্ট করা হয়েছে।
বেনামাযী মু’মিন বা সে জান্নাতে প্রবেশ করবে বা সে জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে কুরআন্তসুন্নাহ্র উক্তি সমূহে এ রকম কথা উল্লেখ নেই। সুতরাং ‘ছালাত পরিত্যাগ করা কুফরী’ এব্যাপারে যে দলীল সমূহ উপস্থাপিত হয়েছে, তা নেয়া’মতের কুফরী বা ছোট কুফরী এরকম ব্যাখ্যা করার কোন অবকাশ নেই।
যখন সুস্পষ্ট হলো, ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের মুরতাদ, তখন তার ব্যাপারে নিম্নল্লিখিত বিধান সমূহ প্রজোয্য হবেঃ
প্রথমতঃ মুসলিম নারীর সাথে তার বিবাহ সম্পন্ন করা বৈধ হবে না। বিবাহের চুক্তি হয়ে গেলেও তা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তার জন্য উক্ত স্ত্রী হালাল হবে না। কেননা আল্লাহ্ মুহাজির নারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেনঃ
فَإِنْ عَلِمْتُمُوهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوهُنَّ إِلَى الْكُفَّارِ لَا هُنَّ حِلٌّ لَهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ
“যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্য হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্য হালাল নয়।” (সূরা মুমতাহিনাঃ ১০)
দ্বিতীয়তঃ বিবাহের বন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর যদি ছালাত পরিত্যাগ শুরু করে তবে উক্ত বন্ধন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে- স্ত্রী ব্যবহার তার জন্য হালাল হবে না। পূর্বোল্লিখিত আয়াত এর দলীল।
তৃতীয়তঃ বেনামাযীর যবেহ্ করা প্রাণীর গোস্ত খাওয়া জায়েয হবে না। কেননা এটা হারাম। ইহুদী বা খৃষ্টানের যবেহ্ করা প্রাণীর গোস্ত খাওয়া আমাদের জন্য বৈধ। কেননা আল্লাহ্ তা আমাদের জন্য হালাল করেছেন। (দেখুন সূরা মায়েদা- ৫ নং আয়াত) অতএব বেনামাযীর যবেহ করা গোস্ত ইহুদী খৃষ্টানের চাইতে অধিক নিকৃষ্ট।
চতুর্থতঃ বেনামাযীর জন্য বৈধ নয় মক্কা বা তার হারাম সীমানায় প্রবেশ করা। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَذَا
“হে ঈমানদারগণ! মুশরিকগণ তো নাপাক। সুতরাং তারা যেন এই বছরের পর আর মসজিদে হারামে প্রবেশ না করে।” (সূরা তওবাঃ ২৮)
পঞ্চমতঃ বেনামাযীর কোন নিকটাত্মীয় মারা গেলে সে তাদের মীরাছ লাভ করবে না। যেমন কোন নামাযী ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল, রেখে গেল একজন ছেলে এবং এক চাচাতো ভাই; কিন্তু ছেলে বেনামাযী আর চাচাতো ভাই নামাযী। এ অবস্থায় দূরের সেই চাচাতো ভাই মীরাছ পাবে ছেলে পাবে না। কেননা উসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا يَرِثُ الْمُؤْمِنُ الْكَافِرَ وَلَا يَرِثُ الْكَافِرُ الْمُؤْمِنَ
“কোন মুসলিম কাফেরের মীরাছ লাভ করতে পারবে না। কোন কাফেরও কোন মুসলিমের মীরাছ লাভ করতে পারবে না।” (বুখারী ও মুসলিম) তিনি আরো বলেন:
أَلْحِقُوا الْفَرَائِضَ بِأَهْلِهَا فَمَا بَقِيَ فَهُوَ لِأَوْلَى رَجُلٍ ذَكَرٍ
“ফারায়েয তথা মীরাছ সমূহ তার অধিকারীদের মাঝে বন্টন করে দাও। কিছু অবশিষ্ট থাকলে মৃত ব্যক্তির নিকটতম পুরুষের জন্য নির্ধারিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম) এই উদাহরণ প্রজোয্য হবে সমস্ত ওয়ারীসদের ক্ষেত্রে।
ষষ্ঠতঃ বেনামাযী মৃত্যু বরণ করলে- তাকে গোসল দেয়া যাবে না, কাফন পরানো যাবে না, জানাযা নামায পড়া যাবেনা, মুসলমানদের গোরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে না। তাকে কি করতে হবে? মাঠে- ময়দানে গর্ত খনন করে পরিহিত কাপড়েই পুঁতে ফেলতে হবে। কেননা তার কোনই মর্যাদা নেই।
এভিত্তিতে কোন লোক যদি মৃত্যু বরণ করে, আর তার সম্পর্কে জানা যায় যে সে বেনামাযী, তবে জানাযা পড়ার জন্য লাশকে মুসলমানদের সামনে উপস্থিত করা বৈধ হবে না।
সপ্তমতঃ ক্বিয়ামত দিবসে বেনামাযীর হাশর-নশর হবে ফেরাউন, হামান, ক্বারূন ও উবাই বিন খালাফের সাথে। এরা হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কাফের। তারা কখনই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তাই বেনামাযীর পরিবারের পক্ষ থেকে তার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দু‘আ করাও জায়েয নয়। কেননা কাফের কোন দু’আ পাওয়ার উপযুক্ত নয়। আল্লাহ্ বলেন,
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُوْلِي قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ
“নবী ও ঈমানদারদের জন্য সমিচীন নয় যে তারা কোন মুশরিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা তাদের নিকটাত্মীয় হয় না কেন। যখন প্রমাণিত হল যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।” (সূরা তওবাঃ ১১৩)
সুতরাং বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক। কিন্তু আফসোস! মানুষ বর্তমানে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। নিজেদের গৃহে এমন লোকদের স্থান দিচ্ছে, যারা ছালাত আদায় করে না। অথচ এটা মোটেও ঠিক নয়। (আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞান রাখেন)