লগইন করুন
মহান আল্লাহর প্রকৃত মর্যাদা ও বিশেষণ সবচেয়ে ভাল জানতেন তাঁর প্রিয় রাসূল (ﷺ)। মহান আল্লাহর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি সচেষ্টও ছিলেন তিনি। তিনি কখনো এ সকল বিশেষণের ব্যাখ্যা করেন নি। তাঁর পরে তাঁর সাহাবীগণও কখনো কোনো বিশেষণের ব্যাখ্যা করেন নি। সাহাবীগণের জীবদ্দশাতেই ইসলাম অমুসলিম দেশ ও সমাজগুলোতে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ইহূদী, খৃস্টান, পারসিয়ান ও অন্যান্য ধর্মের লক্ষ লক্ষ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। সাহাবীগণ তাদের কাছে কুরআন ও সুন্নাহর অগণিত বিষয় ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু কখনোই তাঁরা এ সকল বিশেষণের ব্যাখ্যা করেন নি। তাঁরা এ সকল বিশেষণ প্রকাশ্য অর্থে পাঠ করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন। মানুষেরা এগুলো থেকে ভুল বুঝবে বা মহান আল্লাহর অতুলনীয়ত্ব বিনষ্ট হওয়ার মত কোনো অর্থ গ্রহণ করবে ভেবে তাঁরা এগুলোর কোনো ব্যাখ্যা তাদের সামনে করেন নি। এগুলোকে প্রকাশ্য অর্থে বুঝলে কোনো ক্ষতি হবে বলেও তাঁরা জানান নি।
তাবিয়ীগণের যুগও এভাবেই অতিক্রান্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রথমার্ধে, তাবিয়ীগণের যুগের শেষ দিকে, এ বিষয়ক বিতর্ক শুরু হয়। জাহম ইবন সাফওয়ান ও তার অনুসারীগণ মহান আল্লাহর অতুলনীয়ত্ব প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিশেষণের ব্যাখ্যা ও রূপক অর্থ প্রচার করতে থাকে। তখন তাবিয়ী ও তাবি-তাবিয়ীগণ সকলেই এরূপ ব্যাখ্যার প্রতিবাদ করেন এবং একবাক্যে ব্যাখ্যামুক্ত ও তুলনামুক্ত বিশ্বাসের কথা বলতে থাকেন। সুন্নাতে নববী ও সুন্নাতে সাহাবার ব্যতিক্রম কোনো কিছুই তাঁরা দীনের অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি ছিলেন না। কারণ দীন তো তা-ই যা কুরআন ও সুন্নাহ-এ বিদ্যমান এবং সাহাবীগণ কর্তৃক আচরিত। এর বাইরে কোনো কথা, ব্যাখ্যা, মত বা কর্মকে দীনের অন্তর্ভুক্ত করাই বিদআত। আর এ অর্থেই ইমাম আবূ হানীফা বলেছেন: ‘‘বিষয় তো শুধু তাই যা কুরআন নিয়ে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যার দাওয়াত দিয়েছেন এবং মানুষদের দল-ফিরকায় বিভক্ত হওয়ার আগে তাঁর সাহাবীগণ যার উপরে ছিলেন। এগুলো ছাড়া যা কিছু আছে সবই নব-উদ্ভাবিত বিদআত।’’
কর্মে ও বর্জনে তাঁদের অনুসরণই ইসলাম। তাঁরা যা বলেছেন তা বলা যেমন দীন। তেমনি তাঁরা যা বলেন নি তা না বলাই দীন। যা কুরআনে নেই, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা বলেন নি এবং সাহাবীগণও যা বলেন নি তা বলতেও তাঁরা রাজি ছিলেন না। এজন্য প্রচণ্ড নির্যাতনের মধ্যেও ইমাম আহমদ শুধু বলছিলেন: ‘‘আমাকে আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রাসূলের সুন্নাত থেকে কিছু প্রদান করুন।’’
এ মূলনীতি ব্যাখ্যা করে ইমামুল হারামাইন বলেছেন: ‘‘যদি এ সকল বাহ্যিক বিশেষণগুলোর ব্যাখ্যা জরুরী হতো তবে নিঃসন্দেহে শরীয়তের ফিকহী মাসআলাগুলো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার চেয়ে ঈমান-আকীদা বিষয়ক এসকল আয়াত-হাদীসের ব্যাখ্যার বিষয়ে সাহাবী-তাবিয়ীগণ অনেক বেশি গুরুত্ব প্রদান করতেন। অথচ কোনোরূপ ব্যাখ্যা ছাড়াই সাহাবী ও তাবিয়ীগণের যুগ অতিক্রান্ত হয়ে গেল। এতে প্রমাণিত হলো যে, ব্যাখ্যামুক্ত বিশ্বাসের এ মতটিই অনুসরণযোগ্য আকীদা।’’