লগইন করুন
আমরা দেখেছি যে, আবূ হানীফা, মালিক, শাফিয়ী, আহমদ (রাহিমাহুমুল্লাহ) ও প্রথম তিন/চার প্রজন্মের মুহাদ্দিস, ফকীহ ও বুজৃর্গগণ কুরআন ও হাদীসে উল্লেখকৃত মহান আল্লাহর সকল বিশেষণ ব্যাখ্যা ও তুলনা ব্যতিরেকে সরল অর্থে গ্রহণ করেছেন। ইমাম আবূ হানীফা ফিকহুল আকবার, ফিকহুল আবসাত, ওসিয়্যাহ ও অন্যান্য গ্রন্থে ২১টি যাতী (সত্তীয়) ও ফি’লী (কর্মীয়) সিফাত প্রমাণ করেছেন। পক্ষান্তরে আশআরী ও মাতুরীদী মতবাদে আল্লাহর ৭ বা ৮ টি বিশেষণকে স্বীকার করা হয়। সেগুলো নিম্নরূপ: (১) হায়াত (الحياة) বা জীবন, (২) কুদরত (القدرة) বা ক্ষমতা, (৩) ইলম (العلم) বা জ্ঞান, (৪) ইরাদা (الإرادة) বা ইচ্ছা, (৫) সামউ (السمع) বা শ্রবণ, (৬) বাসার (البصر) বা দর্শন, (৭) কালাম (الكلام) বা কথা, (৮) তাকবীন (التكوين) বা তৈরি করা।[1]
‘সুনিশ্চিত’, একীনী বা আকলী দলীলের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার যুক্তিতে এ বিশেষণগুলো ছাড়া সকল বিশেষণ ব্যাখ্যা করাকেই অধিকাংশ আশআরী-মাতুরিদী আলিম মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহর মুখমণ্ডল, হাত, আরশের উপর অধিষ্ঠান, অবতরণ, ক্রোধ, সন্তুষ্টি, ভালবাসা, ইত্যাদি সকল বিশেষণই তারা রূপক হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। উদাহরণ হিসেবে আরশের উপর অধিষ্ঠান বিশেষণ বিষয়ে ‘আল-মাওয়াকিফ’ ও ‘শারহুল মাওয়াকিফ’ গ্রন্থের নিম্নের বক্তব্য উদ্ধৃত করা যায়:
لا بد من العلم بعدم المعارض العقلي الدال على نقيض ما دل عليه الدليل النقلي إذ لو وجد ذلك المعارض لقدم على الدليل النقلي قطعا بأن يؤول الدليل النقلي عن معناه إلى معنى آخر مثاله قوله تعالى الرحمن على العرش استوى فإنه يدل على الجلوس وقد عارضه الدليل العقلي الدال على استحالة الجلوس في حقه تعالى فيؤول الاستواء بالاستيلاء أو يجعل الجلوس على العرش كناية عن الملك وإنما قدم المعارض العقلي على الدليل النقلي إذ لا يمكن العمل بهما ... وتقديم النقل على العقل بأن يحكم بثبوت ما يقتضيه الدليل النقلي دون ما يقتضيه الدليل العقلي إبطال للأصل بالفرع فإن النقل لا يمكن إثباته إلا بالعقل ... ... فقد تحقق أن دلالتها أي دلالة الأدلة النقلية على مدلولاتها يتوقف على أمور عشرة ظنية فتكون دلالتها أيضا ظنية .... وإذا كانت دلالتها ظنية لم تكن مفيدة لليقين بمدلولاتها هذا ما قيل والحق أنها أي الدلائل النقلية قد تفيد اليقين أي في الشرعيات بقرائن ....، نعم في إفادتها اليقين في العقليات نظر
‘‘নকলী দলীল (কুরআন বা হাদীসের বক্তব্য) গ্রহণ করার পূর্বে জানতে হবে যে, ওহীর এ বক্তব্যটির বিপরীত অর্থ প্রকাশক কোনো আকলী দলীল বা জ্ঞানবৃত্তিক প্রমাণ বিদ্যমান নেই। কারণ যদি কুরআন-হাদীসের বক্তব্যের বিপরীতে কোনো জ্ঞানবৃত্তিক প্রমাণ বিদ্যমান থাকে তবে নিশ্চিতভাবে জ্ঞানবৃত্তিক দলীলটিকে ওহীর বক্তব্যের উপরে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। এজন্য নকলী দলীল বা ওহীর বক্তব্যকে তার অর্থ থেকে অন্য অর্থে ব্যাখ্যা করতে হবে। এর উদাহরণ মহান আল্লাহর বক্তব্য: ‘দয়াময় আল্লাহ আরশের উপরে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।’ এ বক্তব্য থেকে উপবেশন প্রমাণ হয়। আর জ্ঞানবৃত্তিক দলীল প্রমাণ করে যে, মহান আল্লাহর জন্য উপবেশন অসম্ভব। কাজেই এখানে ইসতিওয়া (অধিষ্ঠান) শব্দটির ব্যাখ্যা হবে অধিকার করা বা দখল করা। অথবা আরশের উপর উপবেশন বলতে রাজত্বের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেহেতু দুটি দলীল একত্রে গ্রহণ করা সম্ভব নয় সেহেতু ওহীর বক্তব্যের উপরে জ্ঞানবৃত্তিক দলীলকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যদি জ্ঞান ও যুক্তির দাবিকে উপেক্ষা করে ওহীর বক্তব্য গ্রহণ করা হয় তবে তা শাখাকে গ্রহণ করার জন্য মূলকে বাতিল করা বলে গণ্য হবে। কারণ ওহীর বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা জ্ঞানবৃত্তিক দলীল ছাড়া প্রমাণ করা যায় না। ....’’[2]
তাঁরা আল-মাওয়াকিফ ও শারহুল মাওয়াকিফ গ্রন্থে আরো বলেন:
أنه تعالى ليس في جهة ولا في مكان.... وخالف فيه المشبهة، وخصصوه بجهة الفوق ... الاستدلال بالظواهر الموهمة بالتجسم من الآيات والأحاديث نحو قوله تعالى الرحمن على العرش استوى وجاء ربك والملك صفا صفا... وحديث النزول، وقوله للخرساء أين الله فأشارت إلى السماء فقرر، ... والجواب أنها ظواهر ظنية لا تعارض اليقينيات ومهما تعارض دليلان وجب العمل بهما ما أمكن فتؤول الظواهر إما إجمالا ويفوض تفصيلها إلى الله كما هو رأي من يقف على إلا الله وعليه أكثر السلف كما روي عن أحمد الاستواء معلوم والكيفية مجهولة والبحث عنها بدعة وأما تفصيلا كما هو رأي طائفة فنقول الاستواء الاستيلاء نحو قد استوى عمرو على العراق... والنزول محمول على اللطف والرحمة ...
‘‘মহান আল্লাহ কোনো দিকে বা স্থানে নন। ... মুশাবিবহা বা তুলনাকারী ফিরকা এ বিষয়ে মতভেদ করেছেন। ঊর্ধ্ব দিক বা স্থানকে তারা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট করেছেন।... তাদের পক্ষে দলিল হিসেবে কুরআন ও হাদীসের কিছু বক্তব্য- আয়াত ও হাদীস- পেশ করা হয় যেগুলো থেকে বাহ্যত ধারণা হয় যে, মহান আল্লাহ দেহধারী। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন: ‘‘দয়াময় আল্লাহ আরশের উপরে অধিষ্ঠান গ্রহণ করেছেন’’, ‘‘আগমন করলেন আপনার রব এবং ফিরিশতাগণ কাতারে কাতারে’’[3], .... মহান আল্লাহর প্রথম আসমানে অবতরণ বিষয়ক হাদীস, অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাকশক্তিহীন মহিলাকে বলেন: আল্লাহ কোথায়? তখন মহিলা আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার ইঙ্গিত মেনে নেন।... এ সকল আয়াত ও হাদীসের উত্তর এই যে, এগুলো সবই ‘যান্নী’ বা ধারণা প্রদানকারী (অস্পষ্ট) বাহ্যিক বক্তব্য (এগুলো একীন বা নিশ্চিত জ্ঞান প্রদান করে না) কাজেই এগুলোকে একীনী প্রমাণগুলোর বিপরীতে পেশ করা যাবে না। আর যখন দুটো দলীল পরস্পর বিরোধী হয় তখন যথাসম্ভব উভয়ের মধ্যে সমন্বয় করে তা গ্রহণ করতে হয়। এজন্য কুরআন ও হাদীসের এ সকল বাহ্যিক বক্তব্য এজমালিভাবে বা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। যারা বিষয়টিকে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেন তাদের মত হলো এজমালিভাবে এগুলোকে ব্যাখ্যা করা এবং বিস্তারিত আল্লাহর উপর সোপর্দ করা। অধিকাংশ সালফ সালিহীন (পূর্ববর্তী বুজুর্গ) এ মত গ্রহণ করেছেন। যেমন ইমাম আহমদ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন: অধিষ্ঠান জ্ঞাত, পদ্ধতি অজ্ঞাত এবং এ বিষয়ে গবেষণা বিদআত। বিস্তারিত ব্যাখ্যা এক দলের মত। এজন্য আমরা বলব: অধিষ্ঠান অর্থ দখল করা, যেমন বলা যায়: ‘উমার ইরাকের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছে’- অর্থাৎ ইরাক দখল করেছে বা ইরাকের ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। ... অবতরণ বলতে মমতা ও রহমত বুঝানো হয়েছে। ....’’[4]
মাতুরিদী মতবাদের প্রসিদ্ধ ইমাম আল্লামা মাসঊদ ইবন উমার সা’দুদ্দীন তাফতাযানী (৭৯২ হি) এ প্রসঙ্গে বলেন:
الأدلة القطعية قائمة على التنزيهات، فيجب أن يفوض علم النصوص إلى الله تعالى على ما هو دأب السلف إيثارا للطريق الأسلم، أو يؤول بتأويلات صحيحة على ما اختاره المتأخرون....
‘‘নিশ্চিত জ্ঞান প্রদানকারী দলীলগুলো প্রমাণ করে যে, মহান আল্লাহ মানবীয় বিশেষণাদি থেকে পবিত্র। কাজেই কুরআন-হাদীসের বক্তব্যগুলোর জ্ঞান আল্লাহর কাছে সমর্পন করতে হবে। প্রথম যুগগুলোর সালাফ সালিহীন-এর এটিই রীতি এবং এটিই নিরাপদ পথ। অথবা এগুলোকে সঠিক ব্যাখ্যায় ব্যাখ্যায়িত করতে হবে। পরবর্তী যুগের আলিমগণ এ মত গ্রহণ করেছেন....।’’[5]
উলেস্নখ্য যে, আশআরী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবুল হাসান আশআরী নিজে অধিকাংশ বিশেষণ স্বীকার ও প্রমাণ করতেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন:
قولنا الذي نقول به وديانتنا التي ندين بها التمسك بكتاب الله ربنا عز و جل وبسنة نبينا محمد ﷺ وما روى عن السادة الصحابة والتابعين وأئمة الحديث ... وأن الله تعالى استوى على العرش على الوجه الذي قاله وبالمعنى الذي أراده استواء منزها عن الممارسة والاستقرار والتمكن والحلول والانتقال لا يحمله العرش بل العرش وحملته محمولون بلطف قدرته ومقهورون في قبضته وهو فوق العرش وفوق كل شيء إلى تخوم الثرى، فوقية لا تزيده قربا إلى العرش والسماء بل هو رفيع الدرجات عن العرش كما أنه رفيع الدرجات عن الثرى وهو مع ذلك قريب من كل موجود وهو أقرب إلى العبد من حبل الوريد وهو على كل شيء شهيد. وأن له سبحانه وجها بلا كيف كما قال: "ويبقى وجه ربك ذو الجلال والإكرام". وأن له سبحانه يدين بلا كيف كما قال سبحانه: "خلقت بيدي"، وكما قال: "بل يداه مبسوطتان"، وأن له سبحانه عينين بلا كيف كما قال سبحانه: "تجري بأعيننا".
‘‘আমাদের মত, দীন ও ধর্ম এই যে, আমরা মহান আল্লাহর কিতাব এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সুন্নাত এবং উম্মাতের পুরোধাগণ: সাহাবীগণ, তাবিয়ীগণ এবং হাদীসের ইমামগণ থেকে যা বর্ণিত হয়েছে তা সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরি...। আরো বলি যে, মহান আল্লাহ আরশের উপরে অধিষ্ঠান করেছেন, তিনি যেভাবে বলেছেন সেভাবেই এবং যে অর্থ তিনি উদ্দেশ্য করেছেন সে অর্থেই। এ অধিষ্ঠান স্পর্শ ও স্থিতি, উপবেশন, সংমিশ্রণ ও স্থানান্তর থেকে পবিত্র। আরশ তাঁকে বহন করে না; বরং আরশ ও আরশের বাহকগণ তাঁর সুক্ষ্ম ক্ষমতায় নিয়ন্ত্রিত এবং তাঁর কবজার অধীন। তিনি আরশের ঊর্ধ্বে এবং মহাবিশ্বের সর্বনিম্ন স্তর থেকে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। তাঁর এ ঊর্ধ্বত্ব তাঁকে আরশের ও আসমানের অধিক নিকটবর্তী করে না। বরং তিনি আরশ থেকে যেমন সুউচ্চ মর্যাদায় তেমনি যমিন থেকেও সুউচ্চ মর্যাদায়। একই সাথে তিনি সকল সৃষ্টির নিকটবর্তী। তিনি কণ্ঠের শিরার চেয়েও বান্দার নিকটবর্তী। এবং তিনি সকল কিছুর প্রত্যÿকারী। আমরা আরো বলি যে, মহান আল্লাহর একটি মুখমণ্ডল আছে, কোনোরূপ স্বরূপ বা প্রকৃতি ছাড়াই; কারণ তিনি বলেছেন[6]: ‘‘এবং অবিনশ্বর শুধু আপনার প্রতিপালকের মহিমাময় মহানুভব মুখমণ্ডল’’। এবং মহান আল্লাহর দুটি হাত আছে, কোনোরূপ স্বরূপ-প্রকৃতি ব্যতিরেকে; কারণ তিনি বলেছেন[7]: ‘‘আমি সৃষ্টি করেছি আমার হস্তদ্বয় দ্বারা’’। তিনি আরো বলেছেন[8]: ‘‘বরং তাঁর উভয় হাতই প্রসারিত’’। এবং মহান আল্লাহর দুটি চোখ আছে কোনোরূপ স্বরূপ বা প্রকৃতি ব্যতিরেকে। কারণ আল্লাহ বলেছেন[9]: ‘‘যা চলছিল আমার অক্ষির সম্মুখে..।’’[10]
ইমাম আবূ হানীফার ‘‘আল-ফিকহুল আবসাত’’ নামে পরিচিত ‘আল-ফিকহুল আকবার’-এর দ্বিতীয় ভাষ্যটির একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ ইমাম আবূ মানসূর মাতুরিদীর নামে মুদ্রিত। তবে গবেষকগণ নিশ্চিত করেছেন যে, গ্রন্থটি মূলত মাতুরিদীর ছাত্র পর্যায়ের প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম আবুল লাইস সামারকান্দী নাসর ইবন মুহাম্মাদ (৩৭৩ হি)-এর রচিত। গ্রন্থটিতে বারবার ইমাম মাতুরিদীর বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে এবং মাতুরিদী মাযহাবের ভিত্তিতেই গ্রন্থটি রচিত। এ গ্রন্থে গ্রন্থকার একস্থানে বলেন:
وقالت القدرية والمعتزلة إن الله تعالى في كل مكان، واحتجتا بقوله تعالى: "وهو الذي في السماء إله وفي الأرض إله"، أخبر أنه في السماء وفي الأرض، إلا أنا نقول: لا حجة لكم في الآية... المراد به نفوذ الإلهية في السماء وفي الأرض، وبه نقول. وقول المعتزلة والقدرية في هذا أقبح من قول المشبهة؛ لأن قولهم يؤدي إلى أن الله تعالى في أجواف السباع والهوام والحشرات، تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا. وأما مذهب أهل السنة والجماعة أن الله على العرش علو عظمة وربوبية، لا علو ارتفاع مكان ومسافة
‘‘মুতাযিলী ও কাদারিয়াগণ বলেন, আল্লাহ সকল স্থানে। আল্লাহ বলেছেন: ‘‘আসমানে তিনি মাবূদ এবং পৃথিবীতে তিনি মাবূদ’’। এ আয়াত দিয়ে তারা বলে: তিনি তো বললেন যে, তিনি আসমানের মধ্যে এবং পৃথিবীর মধ্যে। আমরা বলি, এ আয়াত তোমাদের দাবি প্রমাণ করে না। ... এ আয়াতের অর্থ আসমান-যমীন সর্বত্র একমাত্র তাঁর ইবাদতই কার্যকর। ... মুতাযিলী ও কাদারিয়াদের কথা মুশাবিবহা বা তুলনাকারীদের কথার চেয়েও জঘন্যতর। কারণ তাদের দাবি অনুসারে মহান আল্লাহ বন্যপ্রাণী, পশুপাখী ও কীটপতঙ্গের দেহের মধ্যে রয়েছেন। এরূপ অবস্থা থেকে আল্লাহ অনেক ঊর্ধ্বে। আহলূস সুন্নাতের (মাতুরিদী) মত এই যে, আল্লাহ আরশের উপরে। তাঁর এ ঊর্ধ্বত্ব স্থান ও দূরত্বের ঊর্ধ্বত্ব নয়, বরং মর্যাদা ও প্রতিপালনের ঊর্ধ্বত্ব।’’[11]
ইমাম আশআরী ও ইমাম সামারকান্দীর বক্তব্যে আমরা দেখেছি যে, তাঁরা মহান আল্লাহর ‘বাহ্যত মানবীয়’ বিশেষণগুলো কিছুটা ব্যাখ্যা সাপেক্ষে গ্রহণ করেছেন। ‘আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান’ মতটিকে ‘সর্বেশ্বরবাদ’ বলে গণ্য করেছেন। অথচ বর্তমানে অনেক মুসলিম এ বিভ্রান্ত মতটিকেই ইসলামী আকীদা বলে গণ্য করেন। ওহীর বর্ণনা অনুসারে মহান আল্লাহ বান্দার সাথে ও নিকটে এবং তাঁর জ্ঞান সর্বত্র বিরাজমান, তাঁর মহান সত্তা নয়। এ প্রসঙ্গে ইমাম আবূ ইউসুফের মত দেখুন। বাশ্শার ইবন মূসা খাফ্ফাফ বলেন:
جاء بشر بن الوليد الكندي إلى القاضي أبي يوسف فقال له تنهاني عن الكلام وبشر المريسي وعلي الأحول وفلان يتكلمون قال وما يقولون قال يقولون الله في كل مكان فقال أبو يوسف علي بهم فانتهوا إليهم وقد قام بشر فجيء بعلي الأحول وبالآخر شيخ فقال أبو يوسف ونظر إلى الشيخ لو أن فيك موضع أدب لأوجعتك فأمر به إلى الحبس وضرب الأحول وطوف به
‘‘বিশর ইবন ওলীদ কিন্দী কাযী আবূ ইউসুফের নিকট আগমন করে বলেন: আপনি তো আমাকে ইলমুল কালাম থেকে নিষেধ করেন, কিন্তু বিশর আল-মারীসী, আলী আল-আহওয়াল এবং অমুক ব্যক্তি কালাম নিয়ে আলোচনা করছে। আবূ ইউসুফ বলেন: তারা কী বলছে? তিনি বলেন: তারা বলছে যে, আল্লাহ সকল স্থানে বিরাজমান। তখন আবূ ইউসুফ বলেন: তাদেরকে ধরে আমার কাছে নিয়ে এস। তখন তারা তাদের নিকট গমন করে। ইত্যবসরে বিশর আল-মারীসী উক্ত স্থান পরিত্যাগ করেছিলেন। এজন্য আলী আহওয়াল এবং অন্য একজন বৃদ্ধ ব্যক্তিকে ধরে আনা হয়। আবূ ইউসুফ বৃদ্ধ ব্যক্তিটির দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেন: আপনার দেহে শাস্তি দেওয়ার মত স্থান থাকলে আমি আপনাকে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিতাম। তিনি উক্ত বৃদ্ধকে কারারুদ্ধ করার নির্দেশ দেন এবং আলী আহওয়ালকে বেত্রাঘাত করা হয় এবং রাসত্মায় ঘুরানো হয়।’’[12]
[2] জুরজানী, শারহুল মাওয়াকিফ ২/৫১-৫৬।
[3] সূরা (৮৯) ফাজর, আয়াত: ২২।
[4] জুরজানী, শারহুল মাওয়াকিফ ৮/২২-২৮।
[5] তাফতাযানী, শারহুল আকায়িদিন নাসাফিয়্যাহ (এমদাদিয়া: দেওবন্দ), পৃষ্ঠা ৪২।
[6] সূরা (৫৫) রাহমান: ২৭ আয়াত।
[7] সূরা (৩৮) স্বাদ: ৭৫ আয়াত।
[8] সূরা (৫) মায়িদা: ৬৪ আয়াত।
[9] সূরা (৫৪) কামার: ১৪ আয়াত।
[10] আশআরী, আল-ইবানাহ আন উসূলিদ্দিয়ানাহ, পৃষ্ঠা ২০।
[11] আবূ মানসূর মাতুরিদী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃষ্ঠা ১৯।
[12] যাহাবী, আল-উলুওউ লিল আলিয়্যিল গাফ্ফার, পৃষ্ঠা ১৫১।