আল-ফিকহুল আকবর মহান আল্লাহর বিশেষণ, তাকদীর ইত্যাদি ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
১০. ২. ইমাম তাহাবী ও ইমাম মাতুরিদী

আমরা দেখেছি যে, মুতাযিলীগণ ফিকহী বিষয়ে হানাফী ফিকহের অনুসারী ছিলেন এবং অনেক হানাফী ফকীহ স্বেচ্ছায় বা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের জালে পড়ে মুতাযিলীগণের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। এরপরও মূলধারার হানাফী ইমাম ও ফকীহগণ আকীদার বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা ব্যাখ্যাকৃত আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা অনুসরণ করতেন। পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে কুল্লাবিয়া ও আশআরী মতবাদের প্রভাবও তাদের মধ্যে প্রসারিত হয়। চতুর্থ হিজরী শতকের প্রথমার্ধে ইমাম আবুল হাসান আশআরীর সমসাময়িক দুজন হানাফী ইমাম আকীদার বিষয়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেন:

(১) আবূ জাফর আহমদ ইবন মুহাম্মাদ ইবন সালামাহ তাহাবী (৩২১হি)

(২) আবূ মানসূর মুহাম্মাদ ইবন মুহাম্মাদ ইবন মাহমূদ মাতুরিদী (৩৩৩ হি)

এরা দুজন সমসাময়িক হলেও দুজন মুসলিম বিশ্বের দু প্রান্তে বাস করেছেন। ইমাম তাহাবী মুসলিম বিশ্বের পশ্চিম প্রান্তে মিসরে এবং ইমাম মাতুরিদী মুসলিম বিশ্বের পূর্ব প্রান্ত সামারকান্দে বসবাস করেছেন। তাঁদের দুজনের মধ্যে কোনো প্রকারের সাক্ষাৎ হয়েছে বলে জানা যায় না। অনুরূপভাবে তাঁদের সমসাময়িক ইমাম আবুল হাসান আশআরী (৩২৪ হি)-এর সাথে তাঁদের দুজনের কারো সাক্ষাৎ হয়েছে বলে জানা যায় না। তবে আকীদা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ইমাম মাতুরিদী ইমাম ইবন কুল্লাব ও ইমাম আশআরীর ইলম কালাম নির্ভর ধারা অনুসরণ করেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম তাহাবী মূলত ইমাম আবূ হানীফা ও তাঁর দু সঙ্গীর আকীদা ব্যাখ্যা করেছেন।

পরবর্তী যুগে হানাফী ফকীহগণের মধ্যে, বিশেষত ইরাক, খুরাসান, সমরকন্দ, ভারত ও মুসলিম বিশ্বের পূর্বদিকের দেশগুলোর হানাফীগণের মধ্যে মাতুরিদী মতবাদ প্রসার লাভ করে। শাফিয়ী ফকীহগণের মধ্যে আশআরী মাযহাব প্রসার লাভ করে।