লগইন করুন
ইমাম আহমদ (রাহ)ও ‘কিয়াসপন্থী’ হওয়ার কারণে ইমাম আবূ হানীফার উপরে বিক্ষুদ্ধ ছিলেন। তাঁর পুত্র বলেন: আমার পিতাকে প্রশ্ন করা হয়, এক স্থানে কিয়াসপন্থীরা রয়েছেন এবং কয়েকজন হাদীসপন্থী রয়েছেন যারা হাদীসের সহীহ-যয়ীফ বুঝেন না, সেখানে যদি কেউ দীন সম্পর্কে প্রশ্ন করতে চায় তবে কাকে প্রশ্ন করবে? তিনি বলেন:
يسأل أصحاب الحديث ولا يسأل اصحاب الرأي الضعيف الحديث خير من رأي أبي حنيفة... حديث أبي حنيفة ضعيف ورأيه ضعيف
‘‘মুহাদ্দিসদেরকে প্রশ্ন করবে, কিন্তু কিয়াসপন্থীদেরকে (ফকীহদেরকে) প্রশ্ন করবে না; আবূ হানীফার কিয়াসের চেয়ে যয়ীফ হাদীস উত্তম .... আবূ হানীফার হাদীস যয়ীফ এবং তাঁর রায় (ফিকহী মত)-ও যয়ীফ।’’[1]
ইমাম আহমদ অন্যত্র বলেন:
وكنا نلعن أصحاب الرأي ويلعوننا حتى جاء الشافعي، فخرج بيننا.
‘‘আমরা ‘রায়’-পন্থী বা কিয়াসপন্থীদেরকে (ফকীহদেরকে) অভিশাপ করতাম এবং তাঁরাও আমাদেরকে অভিশাপ করতেন। এরপর শাফিয়ী আমাদের কাছে আসলেন, তখন তিনি আমাদের মধ্যে যোগসূত্র গড়লেন।’’[2]
অর্থাৎ হাদীস ও ফিকহের মধ্যে তথাকথিত যে শত্রুতা ছিল ইমাম আহমদ তাতে প্রভাবিত ছিলেন। ইমাম শাফিয়ীর সাথে সাক্ষাত ও শিক্ষা গ্রহণের পর তাঁর এ ভিত্তিহীন বিদ্বেষ দূরীভূত হয়। উল্লেখ্য যে, ইমাম শাফিয়ীও আহল রায় হিসেবে মুহাদ্দিসদের বিরাগভাজন হয়েছেন। ইবন মায়ীনের অভিযোগ আমরা দেখেছি। বুখারী ও মুসলিম তাঁর হাদীস প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেন নি। ফিকহী ব্যস্ততার কারণে হাদীস বিষয়ে তাঁর অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞতার বিষয় ব্যক্ত করে তিনি ইমাম আহমদকে বলেন:
أنتم أعلم بالأخبار الصحاح منا فإذا كان خبر صحيح فأعلمني حتى أذهب إليه
‘‘সহীহ হাদীসের বিষয়ে আপনারা-মুহাদ্দিসগণ আমাদের-ফকীহগণের চেয়ে অধিক অভিজ্ঞ। যদি কোনো সহীহ হাদীস থাকে তবে আমাকে জানান, যেন আমি তা গ্রহণ করতে পারি।[3]
এখানে অন্য আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। ইমাম আহমদ ইবন হাম্বালের উপর নির্মম অত্যাচারের হোতা মুতাযিলী গুরু, খলীফা মামুন, মু’তাসিম ও ওয়াসিকের প্রধান মন্ত্রণাদাতা বিচারপতি আহমদ ইবন আবী দুওয়াদ ছিলেন প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ। তার উপস্থিতিতে এবং বারবার তারই ইন্ধনে খলীফা মু‘তাসিম ইমাম আহমদকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন। তৎকালীন সময়ের মুতাযিলীগণ সকলেই ফিকহী বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফার অনুসরণ করতেন এবং আকীদার ক্ষেত্রেও তিনি তাঁদের পক্ষে ছিলেন বলে প্রমাণের চেষ্টা করতেন। কাজেই ইমাম আহমদের মনে সামগ্রিকভাবে হানাফী ফকীহগণ, হানাফী ফিকহ ও ইমাম আবূ হানীফার প্রতি বিরক্তি ও ক্ষোভ থাকাই স্বাভাবিক।
[1] আব্দুল্লাহ ইবন আহমদ, আস-সুন্নাহ ১/১৮০-১৮১; খতীব বাগদাদী, তারীখ বাগদাদ ১৩/৪৪৮।
[2] কাযী ইয়ায, তারতীবুল মাদারিক ১/১৩৯।
[3] ইবন আসাকির, তারীখ দিমাশক ৫১/৩৮৫; যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা ১০/৩৩।