লগইন করুন
তৃতীয় হিজরী শতকের মাঝামাঝি থেকে পরবর্তী কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত ইমাম আবূ হানীফার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমতে থাকে। অনেকেই এ সকল অভিযোগ সংকলন করেছেন। তাঁদের অন্যতম:
৮. ১. আব্দুল্লাহ ইবন আহমদ ইবন হাম্বাল (২১৩-২৯০ হি)
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বালের পুত্র আব্দুল্লাহ (রাহিমাহুমাল্লাহু) তৃতীয় হিজরী শতকের একজন প্রসিদ্ধ আলিম। তিনি ‘আস-সুন্নাহ’ নামক গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থের বিষয় ‘‘আহলুস সুন্নাত’’ বা ‘‘সুন্নী’’ আকীদা ব্যাখ্যা করা। এ গ্রন্থের প্রথম দিকের একটি অধ্যায়: (ما حفظت عن أبي وغيره من المشايخ في أبي حنيفة): ‘‘আবূ হানীফার বিষয়ে আমি আমার পিতা ও অন্যান্য মাশায়িখ থেকে যা মুখস্থ করেছি।’’ এ অধ্যায়ে তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয় হিজরী শতকের বিভিন্ন আবিদ, ফকীহ ও মুহাদ্দিস থেকে ইমাম আবূ হানীফার নিন্দায় ১৮২টি বক্তব্য সংকলন করেছেন। এ সকল বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য তাঁর আকীদার বিভ্রান্তি ও তাঁর দীন ও ইলম সম্পর্কে কটাক্ষ।
৮. ২. খতীব বাগদাদী (৩৯২- ৪৬৩ হি)
৫ম হিজরী শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ঐতিহাসিক ও শাফিয়ী ফকীহ আহমদ ইবন আলী খতীব বাগদাদী (রাহ)। ফিকহ, হাদীস, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে তিনি বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। তাঁর রচিত অনেক গ্রন্থ এখনো ইলমুল হাদীস, জারহ-তাদীল ও ইতিহাস বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর অন্যতম তথ্যসূত্র। তাঁর রচিত ‘‘তারীখ বাগদাদ’’ গ্রন্থে তিনি বাগদাদের ইতিহাস ছাড়াও বাগদাদের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৮ হাজার মানুষের জীবনী সংকলন করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় জীবনী ইমাম আবূ হানীফার ১৩১ পৃষ্ঠা ব্যাপী। প্রথমে প্রায় ১২ পৃষ্ঠা তিনি তাঁর জীবনী আলোচনা করেন। এরপর প্রায় ৩৫ পৃষ্ঠা তিনি ইমাম আবূ হানীফার প্রশংসায় পূর্ববর্তী আলিমদের বক্তব্য উদ্ধৃত করেন। এরপর প্রায় ৮৫ পৃষ্ঠা ব্যাপী তিনি ইমাম আবূ হানীফার নিন্দায় বর্ণিত পূর্ববর্তী আলিমদের বক্তব্য সংকলন করেন। এ সকল বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য ইমাম আবূ হানীফার আকীদার ভয়ঙ্কর বিভ্রান্তি, ফিকহী দুর্বলতা এবং ব্যক্তিগত চরিত্র হনন।[1]
আব্দুল্লাহ ইবন আহমদ, খতীব বাগদাদী ও অন্যান্যদের সংকলিত এ সকল অভিযোগ ও নিন্দা সম্পর্কে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষণীয়:
(ক) সনদ যাচাই ছাড়া এ বক্তব্যগুলো গ্রহণ করলে একজন মানুষ বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন যে, ইমাম আবূ হানীফার মত ইসলামের এত বড় শত্রু ও এত বড় বিভ্রান্ত মানুষ বোধহয় কখনোই জন্ম গ্রহণ করেন নি!! শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া বলেন, যারা মুসলিম উম্মাহর কোনো ইমামের বিরুদ্ধে এ সকল কথা বলেন তারা মূলত মুসলিম উম্মাহকেই বিভ্রান্ত বলে প্রমাণ করতে চান। আমরা তাঁর বক্তব্য পরে আলোচনা করব।
(খ) এ সকল বর্ণনার অধিকাংশই সনদ বিচারে জাল, বাতিল বা অত্যন্ত দুর্বল। এমনকি ইমাম ইবন হিববান ও খতীব বাগদাদী নিজে যাদেরকে জালিয়াত বলে উল্লেখ করেছেন, তাদের অনেকের বর্ণনা এক্ষেত্রে সংকলন করেছেন।
(গ) দ্বিতীয় বা তৃতীয় শতকের ফকীহ বা মুহাদ্দিসদের যে বক্তব্যগুলো সনদ বিচারে গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য হয় সেগুলোর অধিকাংশ মূলত তাঁর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আলিমের ব্যক্তিগত বিদ্বেষ প্রকাশ। যেমন, তিনি কাফির, ইসলামের শত্রু, ইসলাম ধ্বংস করতেন, তিনি অভিশপ্ত, ক্রীতদাস ইত্যাদি। এগুলো মূলত আবূ হানীফা নুমান ইবন সাবিতের মর্যাদাহানী করে নি; বরং যারা এসব কথা বলেছেন তাদের ঈমানী, ইসলামী ও আখলাকী দুর্বলতা প্রকাশ করেছে।
(ঘ) ইমাম আবূ হানীফার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো তিনভাগে ভাগ করা যায়: (১) আকীদা বিষয়ক, (২) হাদীস বিষয়ক এবং (১) ফিকহ বিষয়ক।