লগইন করুন
কোনো মানুষের ইমাম বা ওলী-বুজুর্গ হওয়ার অর্থ এ নয় যে, তিনি নির্ভুল বা মানবীয় দুর্বলতার ঊর্দ্ধে। মানবীয় দুর্বলতায় কেউ কোনো ভুল বা অন্যায় কথা বলেছেন প্রমাণিত হওয়ার অর্থ এ নয় যে, তিনি ওলী বা ইমাম নন, অথবা তাঁর সব কথাই ভুল।
ইসলামী বিশ্বাসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পরে আর কেউই মাসূম অর্থাৎ নিষ্পাপ বা অভ্রান্ত নন। সকল আলিম, ইমাম ও ওলী মানবীয় দুর্বলতার অধীন ছিলেন। ক্রোধান্বিত হয়ে, ভুল বুঝে একে অপরের বিরুদ্ধে বলেছেন, এমনকি যুদ্ধও করেছেন। কখনো ভুল বুঝতে পারলে বা ক্রোধ দূরীভূত হলে ক্ষমা চেয়েছেন বা ভুল স্বীকার করেছেন। কখনো তিনি ভুল বুঝতে পারেন নি। তাঁরা আল্লাহর দীন, ওহীর ইলম ও সুন্নাতের পালন ও প্রচারে নিজেদের জীবন অকাতরে ব্যয় করেছেন, তাঁদের ইজতিহাদ অনুসারে যা সত্য, সঠিক বা হক্ক বলে বুঝতে পেরেছেন তা রক্ষায় কোনো আপোস করেন নি। পাশাপাশি কখনো কখনো তাঁরা ইজতিহাদে ভুল করেছেন।
মুহাদ্দিসগণ এবং জারহ-তাদীলের ইমামগণ অন্যান্য মুহাদ্দিস ও হাদীসের রাবীদের মূল্যায়নে সর্বাত্মক নিরপেক্ষতার সাথে সচেষ্ট থেকেছেন। একজন মুহাদ্দিসের বর্ণিত হাদীসগুলো অন্যান্য মুহাদ্দিসদের বর্ণনার সাথে তুলনা ও নিরপেক্ষ নিরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের মূল্যায়ন করেছেন। নিজের পিতা, সন্তান বা উস্তাদের বিরুদ্ধেও তাঁরা মত ব্যক্ত করেছেন। আবার কখনো কখনো মানবীয় দুর্বলতায় আক্রান্ত হয়ে কারো অল্প ভুলকে বড় করে দেখেছেন বা কারো অনেক ভুলকে হালকা করে দেখেছেন। পূর্ববর্তী কারো সিদ্ধান্ত ভুল বা পক্ষপাতদুষ্ট হলে তা পরবর্তীগণ উল্লেখ করেছেন। হাদীস, ফিকহ, আকীদা কোনো বিষয়েই মুসলিম উম্মাহর আলিমগণ পূর্ববর্তী আলিমগণকে নিষ্পাপ বা নির্ভুল বলে গণ্য করেন নি এবং অবমূল্যায়নও করেন নি। তাঁদের পরিপূর্ণ মূল্যায়ন ও শ্রদ্ধা-সহ তাঁদের কোনো সিদ্ধান্ত ভুল বলে প্রতীয়মান হলে তাঁরা তা উল্লেখ করেছেন। আমার লেখা ‘‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’’ এবং ‘‘বুহূসুন ফী উলূমিল হাদীস’’ পাঠ করলে পাঠক মুহাদ্দিসগণের সমালোচনার মূলনীতি জানতে পারবেন।
অনেক প্রসিদ্ধ আলিম ইমাম আবূ হানীফার বিরুদ্ধে বলেছেন। আমরা তাঁদের বক্তব্য সমর্থন বা খন্ডন করব। সমর্থন অর্থ অন্ধ সমর্থন নয়। আবার খন্ডনের অর্থ এ নয় যে, আমরা উক্ত আলিমের ইলম, তাকওয়া বা খিদমতের প্রতি কটাক্ষ করছি। কক্ষনো নয়! আমরা উম্মাতের সকল আলিম, ইমাম ও বুজুর্গকে ভালবাসি। আমরা তাঁদেরকে তাঁদের ব্যক্তিত্বের জন্য নয়, বরং আল্লাহর জন্য ভালবাসি। আমরা ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম বুখারী বা অন্য কাউকে হক্ক-বাতিলের মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করছি না। বরং সবাইকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি। আমরা বিশ্বাস করি যে, তাঁরা ইসলামের জন্য, কুরআন ও হাদীসের ইলমের জন্য তাঁদের জীবনকে কুরবানি করেছেন। তাঁদের মাধ্যমেই আমরা দীন পেয়েছি। আল্লাহ তাঁদের সকলকে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোত্তম পুরস্কার প্রদান করুন। তবে তাদের কাউকে আমরা নিষ্পাপ বা নির্ভুল মনে করি না। তাঁদের কোনো সিদ্ধান্ত ভুল বলে প্রমাণিত হলে তা উল্লেখ করায় তাঁদের অবমূল্যায়ন হয় না।