লগইন করুন
আমরা দেখেছি যে, ধর্মীয় আবেগের সাথে সঠিক ধর্মীয় জ্ঞানের অনুপস্থিতিই জঙ্গিবাদের মূল কারণ। এজন্য সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় অধিকতর ইসলামী ও নৈতিক শিক্ষার সংযোজন অতীব প্রয়োজনীয়। জঙ্গিবাদের অযুহাতে মাদ্রাসা শিক্ষা সংকোচন এবং সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ‘‘ধর্মনিরপেক্ষ’’ বা ‘‘অসামপ্রদায়িক’’ করার নামে ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বিমুক্ত করা আন্তজার্তিক বেনিয়াচক্র ও সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনলেও জাতির জন্য ভয়ঙ্কর দুর্ভাগ্যের দ্বার উন্মোচন করবে।
‘‘মাদ্রাসা-শিক্ষিত’’ ও ধার্মিক মানুষেরা জঙ্গি না হলেও তারা সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসন বিরোধী এবং অশ্লীলতা, মাদকতা ও অনাচার বিরোধী। জঙ্গিবাদের অযুহাতে এদেশের মানুষদের মধ্য থেকে সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসন বিরোধী মানসিকতা অথবা অশ্লীলতা, মাদকতা ও অনাচার বিরোধী মানসিকতা নির্মূল করা যদি আমাদের উদ্দেশ্য হয় তাহলে ভিন্ন কথা। আর যদি আমরা জাতির কল্যাণে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে চাই তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই সঠিক ধর্মীয় শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে হবে।
আমরা দেখছি যে, আমাদের দেশে ও বিশ্বের সকল দেশে জঙ্গি কর্মকান্ডে জড়িতদের অধিকাংশই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। জঙ্গি বলে কথিত ও প্রচারিত অধিকাংশ দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও তাত্ত্বিক গুরুগণও আধুনির শিক্ষিত। কিভাবে এদের দলে নতুন অন্তর্ভুক্তি নিয়ন্ত্রণ করবেন? আমরা কি শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা দিব যে, ধর্ম ভাল নয়, ধর্ম আফিম, ধর্ম পালন করো না, পরকাল বিশ্বাস করো না, ধার্মিকদের কাছে যেও না? এরূপ শিক্ষা তো কোনোভাবেই দিতে পারব না। আর দিলেও তাতে কোনো লাভ হবে না। জঙ্গিবাদ কমবে না, বরং জঙ্গিদের প্রচারণার সুযোগ অনেক বাড়বে, ধর্ম বিপন্ন বলে তারা আরো অনেক মানুষকে দলে ভেড়াবে। উপরন্তু এরূপ শিক্ষা দুর্নীতি, সন্ত্রাস, এইডস, এসিড, যৌন হয়রানি, পারিবারিক সহিংসতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের মহাদ্বার উন্মোচন করবে।
তাহলে কী আমরা ধর্ম সম্পর্কে কিছুই শিক্ষা দিব না? ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থার নামে কি আমরা ‘‘ধর্ম-মুক্ত’’ শিক্ষা দান করব? এতে তো আমাদের সমস্যা বাড়বে। কারণ এরূপ শিক্ষা শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় অনুভূতি নষ্ট করতে পারবে না, কিন্তু ধর্মীয় অজ্ঞতা তাদের ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহারের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে। বস্ত্তত ধর্মীয় অনুভুতি নির্মুল করা যায় না। সঠিক জ্ঞানের অভাবে তা বিপথগামী হয়। কখনো কুসংস্কার ও অনাচার এবং কখনো উগ্রতার পথ ধরে। কেউ ‘‘পাগল বাবা’’-র দরবারে ধর্না দিয়ে, মাজারে-দরগায় পাগল বা মস্তানের পিছনে ছুটে, গাঁজা খেয়ে, জিনের বাদশা বা অনুরূপ প্রতারক-পুরোহিতের কাছে যেয়ে মূল্যবান কর্মঘন্টা ও সম্পদ নষ্ট করে। আর কেউ উগ্রতা ও সহিংসতার পিছে ছুটে নিজের ও অন্যের মহামূল্যবান জীবন ও সম্পদ নষ্ট করে।
আমাদের দেশের ও পাশ্চাত্যের অনেক পন্ডিত ও রাজনৈতিক নেতা আমাদেরকে নীতি কথা শুনান এবং ‘‘দুর্নীতিমুক্তি’’ দেশ গড়তে নসীহত করেন। কিছুদিন পরে দেখা যায় যে, বড় বড় দুর্নীতি মামলায় তারা জড়িত। এর কারণ ধর্মীয় বিশ্বাস, আখিরাতমুখিতা ও আল্লাহর ভয় ছাড়া শুধুমাত্র নীতিকথা, নীতিশিক্ষা, প্রতিজ্ঞা বা অঙ্গীকার দিয়ে কখনোই দুর্নীতি, নৈতিক অবক্ষয়, সহিংসতা, মাদকতা বা অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
বস্ত্তত ‘‘ধর্ম-মুক্ত’’ শিক্ষাব্যবস্থা জঙ্গিবাদ না কমিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে জঙ্গিবাদে আক্রান্ত হওয়ার জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ (vulnerable) করে তোলে। পাশাপাশি অন্যান্য সকল প্রকারের দুর্নীতি, সহিংসতা ও অপরাধ বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহায়তা করে। এজন্য জঙ্গিবাদসহ অন্যান্য সকল সন্ত্রাস, সহিংসতা, দুর্নীতি, মাদকতা, অপরাধ প্রবণতা ও নৈতিক অবক্ষয় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত পর্যাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন ও ইসলামী ধর্মতত্ত্বে গভীর জ্ঞানী প্রাজ্ঞ গবেষক আলিম তৈরির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যেন তারা কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক মতামত প্রদানের মাধ্যমে যুবসমাজকে উগ্রতা থেকে রক্ষা করতে পারেন।