লগইন করুন
কুরআন ও হাদীসের দুএকটি নির্দেশনাকে পুঁজি করে খারিজীগণ ও বাতিনীগণ পাপীকে কাফির বলে গণ্য করে। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, অনেক কর্ম আছে যা কুরআন হাদীসের আলোকে স্পষ্টতই পাপ। যেমন, চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার, মিথ্যাচার ইত্যাদি।
খারিজীগণ শুধু এগুলিকেই কুফরী বলে গণ্য করেনি। উপরন্তু, তাদের মতের বিপরীত রাজনৈতিক কর্ম বা সিদ্ধান্তকে ব্যাখ্যার মাধ্যমে ‘পাপ’ বলে গণ্য করেছে, এরপর তারা সে পাপকে কুফরী বলে গণ্য করে সংশিষ্ট ব্যক্তিকে কাফির আখ্যা দিয়েছে। প্রকৃত পক্ষে খারিজীগণের কাফির-কথনের মূল ভিত্তি ‘পাপ’ নয়, বরং ‘রাজনৈতিক মতাদর্শ’। তারা তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী নয় এরূপ সকল মুসলিমকে কাফির বলে গণ্য করত।
আলী (রা) ও তাঁর পক্ষের মানুষেরা কেউ চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার বা কুরআন নির্দেশিত অনুরূপ কোনো পাপ বা অপরাধে লিপ্ত হন নি। আলী (রা) তাঁর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রক্তপাত বন্ধ করতে সালিসের বা আপোসের চেষ্টা করেছেন। তাঁর কর্মের পক্ষে কুরআন ও হাদীসের সমর্থন রয়েছে। অন্য অনেকে তার সাথে তার কর্মে অংশগ্রহণ না করলেও তাঁর কর্মের যৌক্তিকতা অনুভব করেছেন। খারিজীগণ তাদের মনগড়া ব্যাখ্যার ভিত্তিতে এদের সকলকেই কাফির বলে আখ্যায়িত করেছে। এতেই তারা খান্ত হয় নি, তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে এবং তাদের ধনসম্পদ লুটতরাজ করে ইসলাম বা সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছে। পক্ষান্তরে তাদের অনেকেই তাদের মধ্যকার অনেক পাপীকেই কাফির মনে করত না।[1]
‘‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’’ ঈমানের দাবিদারকে কাফির বলার এ নীতি গ্রহণ করেন। মুমিনকে কাফির বলার ক্ষেত্রে তারা কোনোরূপ কৃপণতা করেন নি। তাদের কাফির কথনের পর্যায় নিম্নরূপ:
১. কবীরা গোনাহ বা পাপে লিপ্ত মুমিনকে কাফির বলা।
২. তাদের মতের বিরোধী সকল আলিম ও মুসলিমকে কাফির বলা।
৩. তাদের মতের সমর্থক কেউ কোনো বিষয়ে মতভেদ করলে বা দলত্যাগ করলে তাকে কাফির বলা।
৪. সমকালীণ সকল মুসলিম দেশ, রাষ্ট্র ও সমাজকে কাফির বলা ও জাহিলী সমাজ বলে আখ্যায়িত করা।
৫. যে সকল মুসলিম এরূপ ‘‘জাহিলী সমাজ’’ থেকে হিজরত করে তাদের নেতার হাতে বাইয়াত করে তাদের ‘‘জামাআতে’’ বা দলে যোগ দেয় নি তাদের সকলকে কাফির বলা।
৬. তাদের মতে যারা কাফির তাদেরকে যারা কাফির বলে গণ্য না করে তাদেরকেও কাফির বলা।[2]
অনেক পাঠকের কাছে বিষয়টি হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত বিষয় হলো, মুমিনকে কাফির বলাই সকল উগ্রতা ও সন্ত্রাসের মূল। এ জন্য বিশেষভাবে ‘‘জামাআতুল মুসলিমীনের’’ কাফির কথন নীতি বিষয়ে কিছু আলোচনা করা প্রয়োজন। কারণ যে কোনো মুসলিম সমাজে যারা দীনের নামে উগ্রতা, সন্ত্রাস বা শক্তিপ্রয়োগে লিপ্ত তারা জেনে অথবা না জেনে এদের মতামতগুলি দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন। এছাড়া সমকালীন অনেক সুপ্রসিদ্ধ ও প্রাজ্ঞ আলিম ও গবেষকের লিখনির মধ্যে কিছু কথা ও মতামত অনেক সময় তাদের বিভ্রান্তির পক্ষে বলে বাহ্যত মনে হয় এবং তারা তাদের বিভ্রান্তির পক্ষে এগুলিকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে। এ সকল আলিমের বক্তব্য যেন এভাবে ভুল বুঝা না হয় এবং অনুরূপ বিভ্রান্তির শিকার অন্যরা না হয় সেজন্য বিষয়গুলি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। তাদের দলের বাইরে সকল মুমিনকে কাফির বলার ক্ষেত্রে তাদের মতবাদের কয়েকটি দিক নিম্নরূপ:
[2] সালিম বাহনসাবী, আল-হুকুম ওয়া কাদিয়্যাতু তাকফীরিল মুসলিম; মুহাম্মাদ সুরুর ইবন নাইফ যানুল আবিদীন, আল-হুকুম বিগাইরি মা আনযালাল্লাহ ওয়া আহলুল গুলূ। ড. নাসির ইবনু আব্দুল কারীম আল-আকল, আল-খাওারিজ, পৃ: ১৩২-১৪১, ড. আহমদ মুহাম্মাদ জলি, দিরাসাতুন আনিল ফিরাক, পৃ. ১০৮-১৪৯।