লগইন করুন
প্রথমত: সর্বপ্রথম কাফিরদের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের ব্যাপারে শরী‘আতে স্পষ্টভাবে যে নিষেধাজ্ঞাসূচক বক্তব্য এসেছে, তা হলো দীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা।
আর এ ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহয় অনেক বক্তব্য রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَٱخۡتَلَفُواْ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ﴾ [ال عمران: ١٠٥]
“আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৫]
অনুরূপভাবে এ উম্মতের বিভক্তির ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বলেন:
«افترقت اليهود على احدى وسبعين فرقة، وافترقت النصارى على اثنتين وسبعين فرقة، وتفترق هذه الأمة على ثلاث وسبعين فرقة».
“ইয়াহূদীরা একাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে, আর খ্রীষ্টানরা বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে আর এ উম্মাত বিভক্ত হবে তিহাত্তর দলে”। বস্তুত এ বিভক্তির ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্য নিষেধাজ্ঞামূলক ও সাবধানতাসূচক।
দ্বিতীয়ত: কবর উঁচু করা, তার ওপর স্মৃতিসৌধ বানানো, তাকে মাসজিদ বানানো, ভাস্কর্য বানানো এবং ছবি উত্তোলন করা। আর এ বিষয়গুলো হাদীসের অনেক ভাষ্যে বর্ণিত হয়েছে; তার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ:
ইমাম মুসলিম রহ. ও অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
«أمرني رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ لاَ أَدَعَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتُهُ , وَلاَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتُهُ ».
“আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যাতে সকল উঁচু কবরকে ভেঙ্গে দেই এবং সকল ভাষ্কর্যকে বিলুপ্ত করি”।[1]
ইবন ‘আসেম রহ. সহীহ সনদে মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
«إن تسوية القبور من السنن وقد رفعت اليهود والنصارى فلا تتشبهوا بهم».
“কবরসমূহকে সমান করে দেওয়া সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত আর ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানরা কবরকে উঁচু করেছে। সুতরাং তোমরা তাদের অনুকরণ করো না”।[2] অর্থাৎ তোমরা কবরের ওপর উঁচু ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে তাদের অনুকরণ করো না। আর এ দূর্যোগ অর্থাৎ কবরের ওপর উঁচু ভবন নির্মাণ করা অথবা প্রকৃত অর্থে কবরকে উঁচু করা হলো অন্যতম মহাদূর্যোগ, যার দ্বারা আজকের দিনে মুসলিমগণ তাদের অধিকাংশ অঞ্চলে আক্রান্ত হয়েছে; আর এটা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসেরই যথার্থ প্রতিধ্বনি, তিনি বলেছেন:
«لَتركَبُنَّ سَنَنَ من كان قبلَكم».
“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতি-নীতি পুরোপুরি অনুসরণ করবে”।[3]
আর এ মহাদূর্যোগের অন্যতম আরেকটি দূর্যোগ হলো নবীদের কবরসমূহকে মসজিদ বানানো। তাঁদের কবরসমূহকে মসজিদ বানানোর অর্থ হলো, তার ওপর ভবন নির্মাণ করা, মসজিদ বানানো এবং এসব মসজিদে সালাত আদায় করা।
অনুরূপভাবে সেটার অন্তর্ভুক্ত হবে, সৎকর্মশীলদের কবরের উপর ভবন নির্মাণ করা, অথবা মাসজিদসমূহে সৎকর্মশীলদের দাফন করা, যদিও তা নির্মাণ কাজের পরবর্তীতে হউক না কেন, এর প্রত্যেকটিই উক্ত নিষিদ্ধের আওতাভুক্ত হবে।
অনুরূপভাবে সেটার অন্তর্ভুক্ত হবে, কবরের নিকট দো‘আ করার উদ্দেশ্যে অথবা আল্লাহ ব্যতীত কবরবাসীকে ডাকার উদ্দেশ্য অথবা তার নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্য ভ্রমণ করা। আর এ সকল কর্মকাণ্ডের সবই ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের কর্মকাণ্ড ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব কাজ থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন।
ইমাম মুসলিম রহ. বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে বলেছেন:
«إِنِّى أَبْرَأُ إِلَى اللَّهِ أَنْ يَكُونَ لِى مِنْكُمْ خَلِيلٌ فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَدِ اتَّخَذَنِى خَلِيلاً كَمَا اتَّخَذَ إِبْرَاهِيمَ خَلِيلاً وَلَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا مِنْ أُمَّتِى خَلِيلاً لاَتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيلاً أَلاَ وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ أَلاَ فَلاَ تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ إِنِّى أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ!!».
“তোমাদের কেউ আমার খলীল (অন্তরঙ্গ বন্ধু) হওয়া থেকে আমি আল্লাহর কাছে নিষ্কৃতি চেয়েছি। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তাঁর খলীলরূপে গ্রহণ করেছেন, যেমনিভাবে তিনি খলীলরূপে গ্রহণ করেছিলেন ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে। আমি যদি আমার উম্মতের মধ্য থেকে কাউকে খলীলরূপে গ্রহণ করতাম, তবে আবু বকরকেই খলীলরূপে গ্রহণ করতাম। জেনে রাখ, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নবী ও সৎলোকদের কবরগুলোকে মাসজিদ বানিয়েছিল। সাবধান! তোমরা কবরগুলোকে মাসজিদ বানিও না। আমি তোমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করছি”!![4]
আর সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«قاتل اللَّهُ الْيَهُودَ , اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ».
“আল্লাহ ইয়াহূদীদেরকে ধ্বংস করুন, তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে”।[5]
সহীহ মুসলিমের ভাষায়:
«لَعَنَ اللَّهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى , اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ».
“ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করুন, তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।”[6]
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ও আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন:
«لما نزل برسول الله صلى الله عليه و سلم (مرض موته) طفق يطرح خميصة له على وجهه فإذا اغتم بها كشفها عن وجهه وقال : وهو كذلك «لعنة الله على اليهود والنصارى , اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد». يحذر ما صعنوا».
“যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত নিকটবর্তী হলো, তখন তিনি চাদর দিয়ে তাঁর চেহারা ঢাকতে লাগলেন। অতঃপর যখন তাঁর শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো, তখন তিনি তাঁর চেহারা থেকে তা সরিয়ে ফেললেন; আর তিনি অসুস্থতার এমন অবস্থায় বললেন: “ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ, তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে মসজিদে পরিণত করেছে। (এ বলে) তারা যে (বিদ‘আতী) কার্যকলাপ করত, তা থেকে তিনি সতর্ক করলেন”।[7]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু সালমা ও উম্মু হাবিবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার কাহিনীতে বলেন, যখন তাঁরা হাবশায় তাদের দেখা একটি গির্জার সৌন্দর্য বর্ণনা করলেন, যাতে বেশ কিছু ছবিও ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«أولئك قوم إذا مات فيهم العبد الصالح أو الرجل الصالح بنوا على قبره مسجدا، وصوروا فيه تلك الصور ، أولئك شرار الخلق عند الله عز وجل» .
“এরা এমন সম্প্রদায় যে, এদের মধ্যে কোনো সৎ বান্দা অথবা বলেছেন কোনো সৎ লোক মারা গেলে তার কবরের উপর তারা মসজিদ বানিয়ে নিত আর তাতে ঐসব ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি স্থাপন করত; এরা হলো আল্লাহ তা‘আলার কাছে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি”।[8]
আর আজকের দিনে মুসলিমগণ যেসব মুসিবতের শিকার হয়েছে, এগুলো সেসব মহা-মুসীবতের অন্তর্ভুক্ত।
তৃতীয়ত: মুসলিমগণ কাফেরদের সাথে যে বিষয়ে সবচেয়ে বড় ও বিপদজনক পর্যায়ে অনুসরণ-অনুকরণের মাধ্যমে সামঞ্জস্যতা বিধান করছে তা হলো, নারীদের মাধ্যমে ফেতনায় নিপতিত হওয়া। কেননা, এটা কাফিরদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
নারীদের মাধ্যমে ফেতনায় নিপতিত হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তাদেরকে তাদের নির্দিষ্ট বলয় থেকে এবং তাদের পর্দা ও শালীনতা থেকে বের করা, যাতে তাদের প্রতি পুরুষগণ আকৃষ্ট হয়।
আর এসব বিষয়ে নারীদেরকে বিশেষভাবে গ্রহণ করার কারণ:
১. নারীগণ দুনিয়ার চাকচিক্যের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়।
২. তারা এ ক্ষেত্রে অতিবেশি অনুসরণ, অনুকরণ ও অতিরঞ্জন প্রিয়।
৩. নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষকে প্রলুব্ধ করা ও তার জন্য সাজগোজ করার স্বভাব দিয়ে। আর পুরুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে শালীনতাবিহীন, পর্দাহীন সুসজ্জিতা নারীর প্রতি ঝুঁকে পড়ার স্বভাব দিয়ে।
আর আহলে কিতাব ও কাফিরদের বহু স্বভাব, চরিত্র ও উৎসবের অনুসরণ-অনুকরণ প্রথমেই নারীরা করে থাকে, অতঃপর শিশু ও সাদাসিধে বোকা লোকেরা করে থাকে।
আর দুঃখের বিষয় যে, এ প্রবণতা অর্থাৎ নারীদের ফেতনায় নিপতিত হওয়া, এ যুগের মুসলিমগণের অধিকাংশ পুরুষ এতে জড়িয়ে পড়েছে। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন:
«... فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِى إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِى النِّسَاءِ ».
“...সুতরাং তোমরা দুনিয়াকে ভয় কর, আর ভয় কর নারীদেরকে; কারণ, বনী ইসরাঈলের প্রথম ফিতনা সংঘটিত হয়েছিল নারীদেরকে নিয়ে”।[9]
সুতরাং যখন নারীকে কিছু পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং যখন পুরুষগণ নারীদের প্রতি কোমল হবে, তখন তা যেন আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত সীমার মধ্যে হয়[10]। কিন্তু যখন তারা শালীনতা ও পর্দার মূলনীতি থেকে সরে যাবে, তখন এটা হবে ফেতনা ও বিপর্যয়ের পথ। আর সাধারণত যখনই মুসলিম জাতি এ রকম বিপর্যয়ে জড়ি পড়বে তখনই তা তাদের দীন ও দুনিয়াকে ধ্বংস করবে এবং তাদের ওপর ফেতনা-ফাসাদ ভর করবে।
চতুর্থত: কাফিরদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কর্ম হওয়ার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব বিষয়ে নিষেধ করেছেন, তন্মধ্যে অন্যতম একটি হলো ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানগণের অনুকরণার্থে শুভ্র কেশে রং ব্যবহার না করা। কারণ, সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে এসেছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى لاَ يَصْبُغُونَ فَخَالِفُوهُمْ ».
“নিশ্চয় ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানগণ (দাঁড়ি ও চুলে) রং বা খেযাব লাগায় না। অতএব, তোমরা (রং বা খেযাব লাগিয়ে) তাদের বিপরীত কাজ কর”।[11] তবে এ ক্ষেত্রে কালো রং পরিহার করতে হবে, যেমনটি (হাদীসের) অন্যান্য ভাষ্য থেকে জানা যায়।
পঞ্চমত: দাড়ি মুণ্ডন করা ও গোঁফ কামিয়ে ফেলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে; কারণ, এ কাজটিকে মুশরিক, অগ্নিপূজক, ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের অনুকরণ বলে গণ্য করা হয়। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বহু হাদীসের মধ্যে দাঁড়ি লম্বা করা ও গোঁফ ছোট করার নির্দেশটি বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত হয়েছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কারণ বর্ণনা করেছেন এই বলে যে, তা হলো মুশরিক ও অগ্নিপূজকদের বিরুদ্ধাচরণ। তিনি বলেছেন:
«خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ، أَحْفُوا الشَّوَارِبَ، وَأَوْفُوا اللِّحَى».
“তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবে, তোমরা গোঁফ ছোট করবে এবং দাড়ি লম্বা রাখবে।”[12]
অপর এক বর্ণনায় রয়েছে:
«جُزُّوا الشَّوَارِبَ».
“তোমরা গোঁফ কেটে ফেল”।
যেমনটি ইমাম মুসলিম রহ. থেকেও বর্ণিত হয়েছে:
«جُزُّوا الشَّوَارِبَ، وَأَرْخُوا اللِّحَى، خَالِفُوا الْمَجُوسَ».
“তোমরা গোঁফ কেটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর আর (এভাবেই) তোমরা অগ্নি পূজকদের বিরুদ্ধাচরণ কর”।[13]
ষষ্ঠত: কাফিরদের অনুকরণ করার ব্যাপারে আরও নিষেধাজ্ঞা এসেছে এবং সেখানে বিশেষ করে ইয়াহূদীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে; কারণ, তারা জুতা ও মোজা পরিধান করে সালাত আদায় করে না। সুতরাং স্থায়ীভাবে অথবা ইবাদত মনে করে জুতা পরিধান করে সালাত আদায় করা পরিহার করতে নিষেধ করা হয়েছে, যতক্ষণ না তার সাথে কোনো ময়লা যুক্ত না হয়। কারণ এতে ইয়াহূদীদের কাজের বিপরীত করা হবে। যেমনটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আবু দাউদ ও হাকেম রহ. এবং হাকেম রহ. বর্ণনাটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন, আর যাহাবী রহ. তার সাথে একাত্মতা পোষণ করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خَالِفُوا الْيَهُودَ، فَإِنَّهُمْ لاَ يُصَلُّونَ فِى نِعَالِهِمْ وَلاَ خِفَافِهِمْ».
“তোমরা ইয়াহূদীদের বিরুদ্ধাচরণ কর; কারণ, তারা তাদের জুতা ও মোজা পরিধান করে সালাত আদায় করে না”।[14]
অনেক অজ্ঞ ও বিদ‘আতী লোকই এ হাদীসের বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত। যারা এ সুন্নাতটির উপর আমল করাকে অপছন্দ করে।
অবশ্য আলেমগণের নিকট জুতা পরিধান করে সালাত আদায় করার বিষয়টি (জুতার সাথে) ময়লা বিদ্যমান না থাকার শর্তে (সুন্নাত)। কিন্তু যদি মসজিদ কার্পেট করা হয় এবং মসজিদের বাইরের পথ সংশ্লিষ্ট জমিন অপবিত্র হয়, যেমনটি শহরগুলোর মধ্যে হয়ে থাকে, তখন বিছানার উপরে জুতা পরিধান করে সালাত আদায় করা শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো মাটি বা বালির উপর সালাত আদায় করতেন এবং সেই সময়ে মাসজিদের সমতল ভূমিতে বিছানা বা পাকা ছিল না। আর তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য তখনই তা সুন্নাত হবে, যখন সে ফ্লোর পাকা বা কার্পেটিং করা মসজিদের বাইরে অন্য কোনো স্থানে তার জুতা পরিধান করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের আনুগত্যস্বরূপ কখনও কখনও সালাত আদায় করে, তবে স্থায়ীভাবে নয়; কারণ, পূর্ববর্তী আলেমগণের নিকট থেকে এটা স্থায়ীভাবে করা প্রমাণিত নয়।
সপ্তমত: নির্ধারিত দণ্ডবিধি এবং অন্যান্য পুরস্কার, তিরস্কার বা শাস্তি ও আইন প্রয়োগে সম্ভ্রান্ত ও অসম্ভ্রান্তের ব্যাপারে পার্থক্য সৃষ্টি করা, যেমনটি ইয়াহূদীগণ করত। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক মাখযুম গোত্রের এক মহিলা চোরের পক্ষে সুপারিশ করার কাহিনী বর্ণনা প্রসঙ্গে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
«يا أسامة! أَتَشْفَعُ فِى حَدٍّ مِنْ حُدُودِ اللَّهِ؟ إِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ، وَ إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الضَّعِيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الْحَدَّ. وَ ايْمُ اللَّهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا ».
“হে উসামা! তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তিসমূহের মধ্য থেকে একটি শাস্তি (চুরির শাস্তি হাত কাটা) মওকুফের ব্যাপারে সুপারিশ করছ? তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে (বনী ইসরাঈলকে) এ কাজই ধ্বংস করেছে যে, যখন তাদের মধ্যে কোনো সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অপরদিকে যখন কোনো দুর্বল (দরিদ্র) লোক চুরি করত, তখন তারা তার ওপর হদ তথা হাতকাটার দণ্ডবিধি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমাও চুরি করত, তবে অবশ্যই আমি তার হাত কেটে ফেলতাম”।[15]
অষ্টমত: সালাতের মধ্যে ‘সাদল’[16] বা কাপড় ঝুলিয়ে রাখার ব্যাপারে কাফিরদের অনুকরণ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এসেছে; আরও নিষেধ করা হয়েছে (সালাতের মধ্যে) কোনো ব্যক্তি কর্তৃক স্বীয় মুখ ঢেকে রাখাকে, যাকে ‘তালাচ্ছুম’ বা ‘মুখোশ পড়া’ বলে আখ্যায়িত করা হয়; কারণ, এটা ইয়াহূদীদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে পড়ে।
ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমদ ও হাকেম রহ. হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি (হাকেম রহ.) সহীহ বুখারী ও মুসলিমের শর্তের ভিত্তিতে বলেছেন:
«إنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ السَّدْلِ فِى الصَّلاَةِ ، وَأَنْ يُغَطِّىَ الرَّجُلُ فَاهُ ».
“নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের মধ্যে ‘সাদল’ বা কাপড় ঝুলিয়ে রাখতে এবং (সালাতের মধ্যে) কোনো ব্যক্তি কর্তৃক স্বীয় মুখ ঢেকে রাখতে নিষেধ করেছেন”।[17]
সাহাবীগণের কেউ কেউ এর কারণ বর্ণনা করেছেন এই বলে যে, নিশ্চয় তা ইয়াহূদীদের কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত।
নবমত: নারী কর্তৃক সৌন্দর্য প্রদর্শন করা, বেপর্দা এবং বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানে কাফির ও জাহিলদের অনুকরণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
“আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]
আর আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«لا تبد العورة و لا تستن بسنة المشركين».
“তুমি লজ্জাস্থান প্রকাশ করো না এবং মুশরিকদের রীতিনীতি অনুসরণ করো না।”[18]
দশমত: সালাতের মধ্যে কোমরে হাত রাখা: আর সালাতের মধ্যে কোমরে হাত রাখার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাজা বা কোমরে হাত রাখা। কারণ, সালাতের মধ্যে সুন্নাত হলো ব্যক্তি বা মুসল্লী তার বুকের উপরে তার ডান হাত বাম হাতের উপরে রাখবে। সালাতের মধ্যে কোমরে হাত রাখা নিষিদ্ধ। কারণ, তা ইয়াহূদীদের কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত, যেমনটি সাব্যস্ত হয়েছে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে, তিনি সালাতের মধ্যে কোমরে হাত রাখাকে অপছন্দ করেছেন এবং তিনি বলেছেন:
«لا تشبهوا باليهود» وقالت : «إن اليهود تفعله».
“তোমরা ইয়াহূদীদের অনুকরণ করো না”। তিনি আরও বলেছেন: “নিশ্চয় ইয়াহূদীগণ এ কাজ করে”।[19]
একাদশতম: বিবিধ উৎসব, অনুষ্ঠান ও পর্বসমূহ।
কারণ, আমাদের শরী‘আতে এগুলোর বর্ণনা আসে নি। আর সর্বজন বিদিত যে, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর ব্যতীত শরী‘আত সম্মত অন্য কোনো উৎসব নেই! বেশি বেশি উৎসব করা আহলে কিতাব, কাফির, মুশরিক ও অগ্নিপূজকদের ধর্ম এবং জাহেলিয়াতের অন্তর্ভুক্ত। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমগণকে দু’টির বেশি ঈদ তথা উৎসব পালন করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা ‘রহমান’ এর বান্দাদের গুণ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন:
﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ﴾ [الفرقان: ٧١]
“আর যারা মিথ্যার সাক্ষী হয় না”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭১]
পূর্ববর্তী মুফাসসীরগণের অনেকে বলেছেন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মুশরিক ও কাফিরদের উৎসবসমূহ; বস্তুত ইসলামী শরী‘আতে উৎসবও শরী‘আত অনুমোদিত বিষয় ও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। যা অবশ্যই দলীলভিত্তিক হতে হবে।[20]
বাস্তবেই ঈদ-উৎসব ইসলামী শরী‘আত অনুসারে অন্যতম ইবাদাত, আর তাই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকে শরী‘আতসম্মত উৎসব বলে নির্ধারণ করেছেন, তা থেকে কোনো কিছু বাড়ানো কিংবা কমানো বৈধ নয়। সুতরাং উদাহরণস্বরূপ কোনো মানুষ যদি উপলক্ষ যাই হউক জাতির জন্য তৃতীয় ঈদ-উৎসবের ব্যবস্থা করে, তাহলে সেটা হবে আল্লাহ যে বিধান দিয়েছেন তা ভিন্ন অন্য বিধান প্রবর্তন করার শামিল। অনুরূপভাবে যদি কোনো মানুষ আল্লাহর শরী‘আত কর্তৃক স্বীকৃত ঈদ-উৎসবের কোনো একটিকে বাতিল করে দেয়, তাহলে এটাও শরী‘আত প্রণয়ন বলে গণ্য হবে এবং তা বৈধ হবে না; বরং তা কুফুরী। এ জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাবাসীকে তাদের কতিপয় সনাতন উৎসব ও পর্বকে পুনরায় চালু করতে বারণ করেছেন। ইমাম আবু দাউদ, আহমদ ও নাসাঈ রহ. ইমাম মুসলিম রহ. এর শর্তে সহীহ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন; বর্ণনাকারী (আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন:
«قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ , وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا , فَقَالَ : «مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ ؟ ». قَالُوا: كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِى الْجَاهِلِيَّةِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ». (أخرجه أبو داود) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করেছেন এমতাবস্থায় যে, মদীনাবাসীর জন্য নির্দিষ্ট দু’টি দিন ছিল, যাতে তারা খেলাধুলা করে। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: “এ দু’টি দিন কী? জবাবে তারা বলল: আমরা এ দু’টি দিনে জাহেলী যুগে খেলাধুলা করতাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য (এ) দু’টি দিনের পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম কুরবানীর ঈদ ও ঈদুল ফিতরের দিনের ব্যবস্থা করেছেন”।[21]
উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন:
«اجتنبوا أعداء الله في أعيادهم».
“তোমরা আল্লাহ শত্রুদেরকে তাদের উৎসবসমূহের ব্যাপারে এড়িয়ে চল”।[22]
সুতরাং ঈদ-উৎসব আল্লাহর শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত। তাতে যত সঙ্গত কারণই থাকুক না কেন, কোনো ধরনের অতিরঞ্জন বা কমতি করা বৈধ হবে না।
আর বিজ্ঞজনদের নিকট থেকে যেমনিভাবে জানা যায়, তাতে সময়ের ঘূর্ণিপাকে মুসলিমগণের পক্ষ থেকে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি অনুষ্ঠানই নিষিদ্ধ উৎসবসমূহের অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন, মাসিক অথবা বার্ষিক অথবা দ্বি-বার্ষিক অথবা পঞ্চবার্ষিক অথবা দশ বছর উপলক্ষে অনুষ্ঠান, চাই তা ‘দিবস’ হউক অথবা ‘সপ্তাহ’ হউক অথবা এ ছাড়া অন্য কিছু হউক। আর প্রত্যেকটি অনুষ্ঠান, যা জাতি একটি নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পালন করে, তা উৎসব বলে পরিগণিত হবে, যদিও তা শরী‘আত নির্ধারিত উৎসবের মধ্যে গণ্য হয় না।
অনুরূপ আরও যেসব উৎসব নিষিদ্ধ উৎসবের অন্তর্ভুক্ত হবে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, জাতীয় উৎসব, অথবা ক্ষমতাগ্রহণকেন্দ্রীক উৎসব অথবা বিভিন্ন উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব অথবা বিজয় উৎসব অথবা বিভিন্ন ঋতুর উৎসবসমূহ অথবা অন্যান্য নামের উৎসবসমূহ।
আরও এর অন্তর্ভুক্ত হবে ‘সপ্তাহ’ নামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানসমূহ, যখন জাতি একটি বিশেষ রূপ দিয়ে তা পালন করবে। যেমন, মসজিদ সপ্তাহ ও বসন্ত সপ্তাহ। সুতরাং যখন এ সপ্তাহটি এক সময় থেকে অন্য সময়ে পরিবর্তন না হবে, তখন তা বানানো নিষিদ্ধ উৎসবের মধ্যেই গণ্য হবে।
বস্তুত এটি বিদ‘আতের বীজের অন্তর্ভুক্ত। এমনকি মানুষ যদি এ বিষয়টিকে চালু করার সময় শরী‘আতের বিধিবিধানের কথা স্মরণে রাখে এবং তাতে নিষিদ্ধ বিষয়গুলো পরিহারও করে, তাহলেও তা বৈধ হবে না; কারণ, অচিরেই এমন প্রজন্মের আগমন ঘটবে, যারা বুঝতে পারবে না এবং এ কর্মকাণ্ডসমূহকে উত্তরাধিকার সূত্রে এমন অবস্থার মধ্যে পাবে যে, তারা মনে করবে এগুলো জাতির জন্য আবশ্যকীয় কিছু; আর শরী‘আত যা আবশ্যক করে না, এমন কিছুকে অপরিহার্য করা মানেই তাকে শরী‘আত হিসেবে গণ্য করা। হ্যাঁ, শরী‘আতসম্মতভাবে যা আবশ্যক নয়, তা যদি জনগণ তাদের নিজেদের ওপর অপরিহার্য করে নেয় তবে তা শরী‘আত হিসেবেই গণ্য হবে, চাই তাকে ঈদ-উৎসব নামে নামকরণ করা হউক, অথবা দিবস, সপ্তাহ, মাস, পর্ব, অনুষ্ঠান, মেহেরজান[23] ইত্যাদি ধরনের যে কোনো নামেই নামকরণ করা হউক।
বিজ্ঞ আলেমদের মতে, কোনো সন্দেহ নেই যে, এ সকল কর্মকাণ্ড বা বিষয়াদি নিষিদ্ধ বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত এবং এগুলো নিষিদ্ধ উৎসবের পর্যায়ে পড়ে!!
দ্বাদশতম: সাহরী খাওয়া পরিহার করা। যেমনটি করে ইয়াহূদী ও আহলে কিতাবদের। কারণ, তারা সাহরী খায় না। ইমাম মুসলিম রহ. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন:
«فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ أَكْلَةُ السَّحَرِ».
“আমাদের সাওম এবং আহলে কিতাবদের সাওমের মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া”।[24]
আর আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে, এ সময়ে অনেক মুসলিম এ সাবধান করা কাজে জড়িয়ে যায়; বিশেষ করে তারা সাহরীর সময়ের কাছাকাছি পর্যন্ত জাগ্রত থাকে, অতঃপর তারা ঘুমায় এমতাবস্থায় যে তারা খাওয়া-দাওয়া করেছে অর্ধেক রাতে অথবা এর পূর্বে, অথবা তারা খায় নি। সুতরাং ঐসব মুসলিমের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, তারা ইচ্ছাপূর্বক সাহরী খাওয়া ছেড়ে দেবে, এটা জায়েয নেই; বরং তা কাফির ও ইয়াহূদীদের রীতি-নীতির অন্তর্ভুক্ত।
তাতে যদি কেবল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধাচরণ করার গুনাহই হতো তবে তা-ই তার ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣﴾ [النور: ٦٣]
“সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের ওপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩]
ত্রয়োদশতম: ইফতারকে বিলম্বিত করা। কারণ, সাওম পালনকারীর জন্য দ্রুত ইফতার করা সুন্নাত এবং তা হলো ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধাচরণ করা। ইমাম আবু দাউদ ও হাকেম রহ. থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لاَ يَزَالُ الدِّينُ ظَاهِرًا مَا عَجَّلَ النَّاسُ الْفِطْرَ، لأَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى يُؤَخِّرُونَ».
“দীন ততক্ষণ পর্যন্ত স্পষ্টভাবে বিদ্যমান থাকবে, যতক্ষণ লোকজন দ্রুত ইফতার করবে। কারণ, ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানগণ ইফতারকে বিলম্বিত করে”।[25]
আর কিছু সংখ্যক মানুষ এ অভ্যাসে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে; আর এটি বেশি পরিমাণে দেখা যায় শি‘আ-রাফেযী সম্প্রদায়ের মধ্যে। কারণ, শি‘আরা মাগরিবের সালাতকে বিলম্বিত করে এবং তারা ইফতারকে তারকারাজি ঘন হয়ে দেখা দেওয়া পর্যন্ত বিলম্বিত করে!!
অনুরূপভাবে কিছু সংখ্যক মানুষ সতর্কতা অবলম্বনের নামে ও দীনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির পথ অবলম্বন করার দিক থেকে ইফতার করার ক্ষেত্রে বিলম্ব করে থাকে। এসব লোক কখনও কখনও মুয়াযযিনদের প্রতিও আস্থা রাখে না, এমনকি তারা তাদের নিজ চোখে সূর্য অস্ত দেখার প্রতিও আস্থা রাখতে পারে না; ফলে তারা তাদের পক্ষ থেকে এটাকে সতর্কতার পর্যায় মনে করে ইফতারের সময়কে বিলম্বিত করে। বস্তুত এটা হলো শয়তানের পক্ষ থেকে এক ধরনের কুমন্ত্রণা (সংশয়) ও তামাশা। কারণ, তা করা মানেই তো নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে যাওয়া। কারণ সাহরী খাওয়াকে বিলম্বিত করা এবং ইফতার শুরু করতে দেরী না করাই হলো সুন্নাত।
হাদীসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, ইয়াহূদীগণ মাগরিবের সালাতকে ঘন হয়ে তারকারাজি প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত বিলম্বিত করে। ইমাম আবু দাউদ ও হাকেম রহ. থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে, আর অনুরূপভাবে ইবন মাজাহ ও আহমদ রহ. (আল-মুসনাদে) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا تزال أمتى على الفطرة ما لم يؤخروا المغرب إلى اشتباك النجوم ».
“আমার উম্মত ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, যতক্ষণ তারা মাগরিবের সালাতকে তারকারাজি ঘন হয়ে দেখা দেওয়া পর্যন্ত দেরী না করবে (অর্থাৎ সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে তাড়াতাড়ি ইফতার করবে)।”[26]
আর এ বিষয়টিকে অন্যান্য হাদীসসমূহে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, তা হলো ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের কর্মের অনুরূপ।[27]
চতুর্দশতম: একত্রে খাওয়া এবং ঘরে এক সঙ্গে অবস্থান করা ও বসার ক্ষেত্রে ঋতুবর্তী নারীদেরকে বয়কট করা। কারণ, এমন আচরণ ইয়াহূদীদের বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত, তাদের স্ত্রীগণ যখন ঋতুবর্তী হত, তখন তারা তাদেরকে খাওয়ার সময় এবং ঘরে একত্রে বসার সময় বয়কট করে চলত।
যখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুসলিমগণের কেউ কেউ, যারা মদীনাতে ইয়াহূদীদের (এ ধরনের) কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেন, তারা এরূপ আচরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে তা থেকে নিষেধ করে বলেন:
«اصْنَعُوا كُلَّ شَىْءٍ إِلاَّ النِّكَاحَ».
“তোমরা সঙ্গম ব্যতীত (তাদের সাথে) সবকিছুই কর”।[28]
পঞ্চদশতম: সূর্য উদয় এবং অস্তের সময় সালাত আদায়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা। কেননা, সূর্য উদিত হয় শয়তানের দুই শিং-এর মাঝখান দিয়ে এবং কাফিরগণ তা উদয় ও অস্ত যাওয়ার সময় তাকে সাজদাহ করে। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ এক হাদীসের মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, যা ইমাম মুসলিম রহ. ‘আমর ইবন ‘আবাসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন আর তার অংশ বিশেষে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«... صَلِّ صَلاَةَ الصُّبْحِ , ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلاَةِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ حَتَّى تَرْتَفِعَ، فَإِنَّهَا تَطْلُعُ حِينَ تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ.... ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلاَةِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ، فَإِنَّهَا تَغْرُبُ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ . ...».
“...ফজরের সালাত কর। অতঃপর সূর্য উদিত হয়ে পরিষ্কারভাবে উপরে না উঠা পর্যন্ত তুমি সালাত থেকে বিরত থাক। কারণ, সূর্য উদিত হয়, যখন তা উদিত হয় শয়তানের দুই শিং-এর মাঝখান দিয়ে এবং সেই সময় কাফিরগণ তাকে সাজদাহ করে।...অতঃপর তুমি সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত সালাত থেকে বিরত থাক। কারণ, সূর্য অস্তমিত হয় শয়তানের দুই শিং-এর মাঝখান দিয়ে এবং সেই সময় কাফিরগণ তাকে সাজদাহ করে।...”[29]
ষোড়শতম: কোনো ব্যক্তিকে সম্মান করার উদ্দেশ্যে দাঁড়ানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা। বিশেষ করে যখন ব্যক্তিটি এমন হয়, যার বিশেষ অবস্থান বা মর্যাদা রয়েছে এবং যখন সে মর্যাদাশীল ব্যক্তিগণের অন্তর্ভুক্ত হবে। সুতরাং (হাদীসের) অনেক ভাষ্যে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্য থেকে একটি হলো, যা বর্ণিত হয়েছে বসে বসে সালাত আদায়কারী ইমামের পিছনে মুক্তাদিদের দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে, যখন ইমামের জন্য আকস্মিকভাবে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়, ফলে তিনি দাঁড়াতে সক্ষম হন না। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মুক্তাদির জন্য উচিত হবে ইমামের মতো বসে বসে সালাত আদায় করা, ঐসব বিদেশী (অনারব) ব্যক্তিদের অনুসরণ বা অনুকরণ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়, যারা তাদের নেতা বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যায়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহীহ হাদীসে বলেছেন, যা ইমাম আবু দাউদ ও ইবন মাজাহ রহ. বর্ণনা করেছেন:
«إِذَا صَلَّى الإِمَامُ جَالِسًا فَصَلُّوا جُلُوسًا , وَإِذَا صَلَّى الإِمَامُ قَائِمًا فَصَلُّوا قِيَامًا , وَلاَ تَفْعَلُوا كَمَا يَفْعَلُ أَهْلُ فَارِسَ بِعُظَمَائِهَا!!».
“যখন ইমাম বসে বসে সালাত আদায় করবে, তখন তোমরাও বসে বসে সালাত আদায় করবে; আর যখন ইমাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে, তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। আর তোমরা এমন আচরণ করবে না, পারস্যবাসীগণ তাদের নেতা বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে যে আচরণ করে”!![30]
অপর এক বর্ণনায় আছে:
«لاَ تُعظموني كَمَا تُعظّم الأَعَاجِمُ بَعْضُهَا بَعْضًا».
“তোমরা আমার প্রতি এমনভাবে সম্মান প্রদর্শন করো না, যেমনিভাবে অনারব ব্যক্তিগণ একে অপরকে সম্মান প্রদর্শন করে”।[31]
আর ইমাম মুসলিম রহ. বর্ণনা করেছেন:
«إِنْ كِدْتُمْ آنِفِاً لَتَفْعَلُونَ فِعْلَ فَارِسَ وَالرُّومِ يَقُومُونَ عَلَى مُلُوكِهِمْ وَهُمْ قُعُودٌ ».
“তোমরা এ মুহূর্তে যে কাজটি করেছ, তা পারস্য ও রোমবাসীদের অনুরূপ, তারা তাদের সম্রাটদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকে এবং সম্রাটগণ থাকেন বসে”।[32] আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল তখন, যখন সাহাবীগণ দাঁড়িয়ে গেলেন, আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থতার কারণে বসে বসে সালাত আদায় করছিলেন।
সপ্তদশতম: বিলাপ করার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির ওপর শোক প্রকাশ করা, শোক প্রকাশার্থে উচ্চস্বরে বিলাপের আয়োজন করা এবং অনুরূপ অন্য কিছু করা, যেমনটি জাহেলি যুগে করা হত! কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে বলেছেন:
«لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ أَوْ شَقَّ الْجُيُوبَ أَوْ دَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ ».
“যে ব্যক্তি (মৃতের জন্য) গাল চাপড়াবে অথবা জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলবে অথবা জাহেলী যুগের মতো বিলাপ করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়”।[33] আর আজকের মুসলিমগণের অনেকেই এ অভ্যাসে জড়িয়ে গেছে।
[2] ইবন তাইমিয়্যাহ, ইকতিদাউস সিরাতিল মুসতাকীম: ১/৩৪২
[3] তার তথ্যসূত্র পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৫৩২
[5] সহীহ বুখারী ফাতহুল বারী, হাদীস নং- ৪৩৭
[6] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৫৩০
[7] সহীহ বুখারী ফাতহুল বারী, হাদীস নং- ৪৩৫, ৪৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৫৩১
[8] সহীহ বুখারী/ফাতহুল বারী, হাদীস নং- ৪২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৫২৮।
[9] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২৭৪২
[10] নারীকে সম্মান করা একটি শরী‘য়ত সম্মত বিষয় আর তাকে সম্মান করার অর্থ আল্লাহর অবাধ্য হয়ে তার আনুগত্য করা নয় এবং তার জন্য পুরুষ কর্তৃক তার পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া নয়, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন।
[11] সহীহ বুখারী/ফাতহুল বারী, হাদীস নং- ৩৪৬২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২১০৩।
[12] সহীহ বুখারী/ফাতহুল বারী, হাদীস নং- ৫৮৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২৫৯
[13] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২৬০
[14] আবু দাউদ, হাদীস নং- ৬৫২; হাকেম রহ. হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন। আর যাহাবী রহ. তাঁর বর্ণনার মত বর্ণনা করেছেন: ১/২৬০
[15] সহীহ বুখারী/ফাতহুল বারী, হাদীস নং- ৩৪৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৬৮৮
[16] السدل في الصلاة -এর ব্যখ্যা: কাপড় ঝুলিয়ে রাখা, আর তা হলো সে তার এক কাঁধের উপর কাপড় রাখবে এবং অপর কাঁধের উপর রাখবে না।
[17] আবু দাউদ, হাদীস নং- ৬৪৩; তিরমিযী, হাদীস নং- ৩৭৮; আহমদ ও হাকেম।
[18] ইবন তাইমিয়্যাহ, ইকতিদাউস সিরাতিল মুসতাকীম: ১/৩৪০
[19] সহীহ বুখারী/‘ফতহুল বারী’, হাদীস নং- ৩৪৫৮; মুসান্নাফু আবদির রাজ্জাক, হাদীস নং- ৩৩৩৮; ইবন তাইমিয়্যাহ, ইকতিদাউস সিরাতিল মুসতাকীম: ১/৩৪৩, ৩৪৪
[20] দেখুন: তাফসীরু ইবন কাছীর, ৩/৩২৮,৩২৯
[21] আবু দাউদ, হাদীস নং- ১১৩৪; আরও দেখুন: ইবন তাইমিয়্যাহহ, ইকতিদাউস সিরাতিল মুসতাকীম: ১/৪৩২।
[22] বায়হাকী (আস-সুনান আল-কুবরা): ৯/২৩৪; দেখুন: কানযুল ‘উম্মাল, হাদীস নং- ১৭৩২।
[23] ‘মেহেরজান’ বলতে পারসিকদের ঈদ উৎসব অথবা মহাসমাবেশকে বুঝায়। -অনুবাদক।
[24] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১০৯৬।
[25] আবু দাউদ, হাদীস নং- ২৩৫৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং- ১৬৯৮; হাকেম রহ., আল-মসতাদরাক: ১/৪৩১ এবং তিনি হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম রহ. এর শর্তের বিচারে বিশুদ্ধ বলেছেন।
[26] আবু দাউদ, হাদীস নং- ৪১৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং- ৬৮৯; আহমদ: ৩/৪৪৯; হাকেম রহ. (আল-মসতাদরাক) এবং তিনি হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম রহ. এর শর্তের বিচারে বিশুদ্ধ বলেছেন, ১/১৯০, ১৯১
[27] ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. তার সনদকে সা‘ঈদ ইবন মানসুরের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, ইবন তাইমিয়্যাহ, ইকতিদাউস সিরাতিল মুসতাকীম: ১/১৮৪; ইমাম আহমদ রহ.-এর মতও অনুরূপ। আল-মুসনাদ: ৪/৩৪৯; ইবন আবি হাতেম, আল-মারাসীল: ১২১।
[28] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৩০২
[29] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৮৩২
[30] আবু দাউদ, হাদীস নং- ৬০২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং- ১২৪০
[31] দেখুন: আবু দাউদ, হাদীস নং- ৫২৩০; তবে সুনান আবু দাউদের শব্দগুলো এ রকম: «لاَ تَقُومُوا كَمَا تَقُومُ الأَعَاجِمُ يُعَظِّمُ بَعْضُهَا بَعْضًا» (তোমরা এমনভাবে দাঁড়াবে না, যেমনিভাবে বিদেশী (অনারব) ব্যক্তিগণ একে অপরকে সম্মান প্রদর্শন করতে দাঁড়ায়)। -অনুবাদক।
[32] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৪১৩
[33] সহীহ বুখারী ও মুসলিম
[34] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৯৩৫
[35] এ শব্দগুলো আবু দাউদের, হাদীস নং- ৩৯০৪; সহীহ মুসলিম (অর্থগতভাবে) হাদীস নং- ১৮৪৮।
[36] এর দ্বারা আমি বুঝাতে চাচ্ছি জাহেলী শ্লোগানের অধীনে ইরাক কর্তৃত কুয়েত আগ্রাসন। আর তা থেকে যা সৃষ্টি হয়, তা জাতীয়তাবাদী দলসমূহের পক্ষপাতমূলক সহযোগিতার অন্তর্ভুক্ত। আর জাহেলী পক্ষপাতিত্বের কারণে প্রবৃত্তির পূজারীগণ এ যুলুম ও সীমালংঘন করে।
[37] ইমাম আবু দাউদ রহ. সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন, হাদীস নং- ৫১১৮।
[38] মুসনাদে আহমদ: ১/২৪১; আরও দেখুন: সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১১৩৩।
[39] সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৫৫৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২৭৪২।
[40] দেখুন: ইবন তাইমিয়্যাহ, ইকতিদাউস সিরাতিল মুসতাকীম: ১/২৫৩।
[41] আমি বৈরাগ্যবাদের কিছু ধরণ বা প্রকৃতি লক্ষ্য করি। ধর্ম পালনের উদ্দেশ্যে বা ধার্মিকের অভিনয় করার উদ্দেশ্যে অব্যাহতভাবে কিছু বৈধ জিনিস বর্জন করা। যেমন, জুতা পরিধান না করা, যানবাহনে আরোহন না করা এবং বৈধ প্রস্তুতকৃত সামগ্রী ও উপকরণ ব্যবহারে অনাগ্রহ প্রকাশ করা। আল্লাহ তা‘আলা মহাজ্ঞানী।
[42] আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৯০৪।