লগইন করুন
গর্ব, দাম্ভিকতা, অহঙ্কার ও অহংবোধ একটি মারাত্মক অপরাধ। যা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খুবই অপছন্দনীয় এবং যা আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ অসন্তুষ্টি ও জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণও বটে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْـمُسْتَكْبِرِيْنَ»
‘‘নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ্ তা‘আলা) অহংকারীদেরকে ভালোবাসেন না’’। (না'হল : ২৩)
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَا مِنْ رَجُلٍ يَخْتَالُ فِيْ مِشْيَتِهِ وَيَتَعَاظَمُ فِيْ نَفْسِهِ إِلاَّ لَقِيَ اللهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ.
‘‘কোন ব্যক্তি গর্বভরে চলাফেরা করলে এবং যে সত্যিই আত্মম্ভরী সে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে সাক্ষাৎ করবে অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা তখন তার উপর খুবই অসন্তুষ্ট থাকবেন’’। (আহমাদ ৫৯৯৫ বুখারী/আল্-আদাবুল্ মুফ্রাদ্, হাদীস ৫৪৯; হা’কিম ১/৬০)
আবূ সা’ঈদ খুদ্রী ও আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
الْعِزُّ إِزَارُهُ، وَالْكِبْرِيَاءُ رِدَاؤُهُ، فَمَنْ يُنَازِعُنِيْ عَذَّبْتُهُ.
‘‘ইয্যত তাঁর (আল্লাহ্ তা‘আলার) নিম্ন বসন এবং গর্ব তাঁর চাদর। যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে আমার সাথে দ্বন্দ্ব করবে তাকে আমি শাস্তি দেবো’’। (মুসলিম ২৬২০)
মূসা (আঃ) সকল গর্বকারীদের থেকে আল্লাহ্ তা‘আলার আশ্রয় কামনা করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَقَالَ مُوْسَى إِنِّيْ عُذْتُ بِرَبِّيْ وَرَبِّكُمْ مِّنْ كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لاَّ يُؤْمِنُ بِيَوْمِ الْـحِسَابِ»
‘‘মূসা (আঃ) বললো: যারা হিসাব দিবসে বিশ্বাসী নয় সে সকল অহঙ্কারী ব্যক্তি থেকে আমি আমার ও তোমাদের প্রভুর আশ্রয় কামনা করছি’’। (গাফির/মু’মিন : ২৭)
সর্ব প্রথম গুনাহ্ যা আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে করা হয়েছে তা হচ্ছে অহঙ্কার। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوْا لِآدَمَ فَسَجَدُوْا إِلاَّ إِبْلِيْسَ، أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ»
‘‘যখন আমি ফিরিশ্তাদেরকে বললাম: তোমরা আদমকে সিজদাহ্ করো। তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদাহ্ করলো। শুধুমাত্র সেই অহঙ্কার বশত সিজদাহ্ করতে অস্বীকার করলো। আর তখনই সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো’’। (বাক্বারাহ্ : ৩৪)
দলীল বিহীন যারা কুর‘আন ও হাদীস নিয়ে অন্যের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তারা অহঙ্কারীই বটে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«إِنَّ الَّذِيْنَ يُجَادِلُوْنَ فِيْ آيَاتِ اللهِ بِغَيْرِ سُلْطَانٍ أَتَاهُمْ، إِنْ فِيْ صُدُوْرِهِمْ إِلاَّ كِبْـرٌ، مَا هُمْ بِبَالِغِيْهِ، فَاسْتَعِذْ بِاللهِ، إِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ»
‘‘যারা দলীল বিহীন আল্লাহ্ তা‘আলার আয়াতসমূহ নিয়ে ঝগড়া করে তাদের অন্তরে রয়েছে শুধু অহঙ্কারই অহঙ্কার। তারা তাদের উদ্দেশ্যে কখনো সফলকাম হবে না। অতএব তুমি আল্লাহ্ তা‘আলার শরণাপন্ন হও। তিনিই তো সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা’’। (গাফির/মু’মিন : ৫৬)
গর্বকারীরা সত্যিই জাহান্নামী এবং যাদেরকে নিয়ে জাহান্নাম জান্নাতের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়েছে।
’হা’রিসা বিন্ ওয়াহ্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ؟ قَالُوْا: بَلَى، قَالَ: كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ.
‘‘আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে সংবাদ দেবো না? সাহাবারা বললেন: অবশ্যই দিবেন। তখন তিনি বলেন: জাহান্নামী হচ্ছে প্রত্যেক কঠিন প্রকৃতির ধনী কৃপণ অহঙ্কারী’’। (বুখারী ৪৯১৮, ৬০৭১, ৬৬৫৭; মুসলিম ২৮৫৩)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
تَحَاجَّتِ النَّارُ وَالْـجَنَّةُ، فَقَالَتِ النَّارُ: أُوْثِرْتُ بِالْـمُتَكَبِّـرِيْنَ وَالْـمُتَجَبِّرِيْنَ، وَقَالَتِ الْـجَنَّةُ: فَمَا لِيْ لَا يَدْخُلُنِيْ إِلاَّ ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَسَقَطُهُمْ وَعَجَزُهُمْ.
‘‘জাহান্নাম ও জান্নাত পরস্পর তর্ক করছিলো। জাহান্নাম বললো: আমাকে দাম্ভিক ও অহঙ্কারী মানুষগুলো দেয়া হয়েছে যা তোমাকে দেয়া হয়নি। জান্নাত বললো: আমার কি দোষ যে, দুর্বল, অক্ষম ও গুরুত্বহীন মানুষগুলোই আমার ভেতর প্রবেশ করছে’’। (মুসলিম ২৮৪৬)
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِيْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ، قَالَ رَجُلٌ: إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُوْنَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً، قَالَ: إِنَّ اللهَ جَمِيْلٌ يُحِبُّ الْـجَمَالَ، الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ.
‘‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ গর্ব থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জনৈক সাহাবী বললো: মানুষ তো চায় যে, তার কাপড় সুন্দর হোক এবং তার জুতো সুন্দর হোক (তাও কি গর্ব বলে গণ্য হবে?) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা সুন্দর। অতএব তিনি সুন্দরকেই পছন্দ করেন। তবে গর্ব হচ্ছে সত্য প্রত্যাখ্যান এবং মানব অবমূল্যায়ন’’। (মুসলিম ৯১)
গর্বকারীদেরকে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন মানুষের আকৃতিতেই ছোট পিপীলিকার ন্যায় উঠাবেন। তখন তাদের লাঞ্ছনার আর কোন সীমা থাকবে না।
‘আমর বিন্ শু‘আইব্ তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
يُحْشَرُ الْـمُتَكَبِّرُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَمْثَالَ الذَّرِّ فِيْ صُوَرِ الرِّجَالِ، يَغْشَاهُمُ الذُّلُّ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ، فَيُسَاقُوْنَ إِلَى سِجْنٍ فِيْ جَهَنَّمَ ـ يُسَمَّى بُوْلَسَ ـ تَعْلُوْهُمْ نَارُ الْأَنْيَارِ، يُسْقَوْنَ مِنْ عُصَارَةِ أَهْلِ النَّارِ ؛ طِيْنَةِ الْـخَبَالِ.
‘‘গর্বকারীদেরকে কিয়ামতের দিন মানুষের আকৃতিতেই ছোট পিপীলিকার ন্যায় উঠানো হবে। সর্ব দিক থেকে লাঞ্ছনা তাদেরকে ছেয়ে যাবে। ‘‘বূলাস’’ নামক জাহান্নামের একটি জেলখানার দিকে তাদেরকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। তাদের উপরে থাকবে শুধু আগুন আর আগুন এবং তাদেরকে জাহান্নামীদের পুঁজরক্ত পান করানো হবে’’। (তিরমিযী ২৪৯২; আহমাদ ৬৬৭৭ দায়লামী, হাদীস ৮৮২১ বায্যার, হাদীস ৩৪২৯)
একদা বানী ইস্রা’ঈলের জনৈক ব্যক্তি গর্ব করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে কঠিন শাস্তি দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগেও এমন একটি ঘটনা ঘটে যায়।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِيْ فِيْ حُلَّةٍ، تُعْجِبُهُ نَفْسُهُ، مُرَجِّلٌ جُمَّتَهُ، إِذْ خَسَفَ اللهُ بِهِ، فَهُوَ يَتَجَلْجَلُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.
‘‘একদা জনৈক ব্যক্তি এক জোড়া জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরে (রাস্তা দিয়ে) চলছিলো। তাকে নিয়েই তার খুব গর্ববোধ হচ্ছিলো। তার জমকালো লম্বা চুলগুলো সে খুব যত্নসহকারে আঁচড়িয়ে রেখেছিলো। হঠাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেন এবং সে কিয়ামত পর্যন্ত এভাবেই নিচের দিকে নামতে থাকবে’’। (বুখারী ৫৭৮৯, ৫৭৯০; মুসলিম ২০৮৮)
সালামাহ্ বিন্ আকওয়া’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
أَكَلَ رَجُلٌ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ بِشِمَالِهِ، فَقَالَ: كُلْ بِيَمِيْنِكَ، قَالَ: لَا أَسْتَطِيْعُ، قَالَ: لَا اسْتَطَعْتَ، مَا مَنَعَهُ إِلاَّ الْكِبْرُ، قَالَ: فَمَا رَفَعَهَا إِلَى فِيْهِ.
‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বাম হাতে খাচ্ছিলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: ডান হাতে খাও। সে বললো: আমি ডান হাতে খেতে পারবো না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ঠিক আছে; তুমি আর পারবেও না। দম্ভের কারণেই সে তা করতে রাজি হয়নি। অতএব সে আর কখনো ডান হাত মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি’’।
(মুসলিম ২০২১ ইব্নু হিববান খন্ড ১৪ হাদীস ৬৫১২, ৬৫১৩ বাইহাক্বী, হাদীস ১৪৩৮৮ ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ২৪৪৪৫; দা’রামী ২০৩২ আবূ ‘আওয়ানাহ্, ৮২৪৯, ৮২৫১, ৮২৫২; আহমাদ ১৬৫৪০, ১৬৫৪৬, ১৬৫৭৮ ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ৭ হাদীস ৬২৩৫, ৬২৩৬; ইব্নু ’হুমাইদ্ ৩৮৮)
কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা দাম্ভিকের সাথে কথা বলবেন না, তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাকে গুনাহ্ থেকে পবিত্র করবেন না এবং তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ: شَيْخٌ زَانٍ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ.
‘‘তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদেরকে গুনাহ্ থেকেও পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতেও তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। তারা হচ্ছে বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যুক রাষ্ট্রপতি ও দাম্ভিক ফকির’’। (মুসলিম ১০৭)
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَى مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلَاءَ.
‘‘যে ব্যক্তি গর্ব করে নিজ নিম্ন বসন মাটিতে টেনে চলবে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না’’। (বুখারী ৩৬৬৫, ৫৭৮৩, ৫৭৮৪; মুসলিম ২০৮৫)