লগইন করুন
ফরয নামায আদায় না করাও একটি মারাত্মক অপরাধ। যা শির্ক তথা কুফরও বটে এবং যার পরিণতিই হচ্ছে জাহান্নাম।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوْا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوْا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا، إِلاَّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُوْلَآئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْـجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ شَيْئًا»
‘‘নবী ও হিদায়াতপ্রাপ্তদের পর আসলো এমন এক অপদার্থ বংশধর যারা নামায বিনষ্ট করলো এবং প্রবৃত্তির পূজারী হলো। সুতরাং তারা ‘‘গাই’’ নামক জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিয়েছে, ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারাই তো জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ যুলুম করা হবে না’’।
(মার্ইয়াম : ৫৯-৬০)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:
«فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ يُرَآؤُوْنَ، وَيَمْنَعُوْنَ الْـمَاعُوْنَ»
‘‘সুতরাং ওয়াইল্ নামক জাহান্নাম সেই মুসল্লীদের জন্য যারা নিজেদের নামাযের ব্যাপারে গাফিল। যারা লোক দেখানোর জন্যই তা আদায় করে এবং যারা গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় ছোটখাট বস্ত্ত অন্যকে দিতে অস্বীকৃতি জানায়’’। (মা’ঊন : ৪-৭)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:
«كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِيْنَةٌ، إِلاَّ أَصْحَابَ الْيَمِيْنِ، فِيْ جَنَّاتٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ، عَنِ الْـمُجْرِمِيْنَ، مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ، قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْـمُصَلِّيْنَ، وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ، وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَآئِضِيْنَ، وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ، حَتَّى أَتَانَا الْيَقِيْنُ»
‘‘প্রতিটি ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে সে দিন আবদ্ধ থাকবে। তবে তারা নয় যারা নিজ আমলনামা ডান হাতে পেয়েছে। তারা জান্নাতেই থাকবে। তারা অপরাধীদের সম্পর্কে পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এমনকি তারা জাহান্নামীদেরকে জিজ্ঞাসা করবে: কেন তোমরা সাক্বার নামক জাহান্নামে আসলে? তারা বলবে: আমরা তো নামাযী ছিলাম না এবং আমরা মিসকিনদেরকেও খাবার দিতাম না। বরং আমরা সমালোচনাকারীদের সাথে সমালোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। এমনকি আমরা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করতাম। আর এমনিভাবেই হঠাৎ আমাদের মৃত্যু এসে গেলো’’। (মুদ্দাস্সির : ৩৮-৪৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ وَالشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلَاةِ
‘‘কোন ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মাঝে ব্যবধান শুধু নামায না পড়ারই। যে নামায ছেড়ে দিলো সে কাফির হয়ে গেলো’’।
(মুসলিম ৮২; তিরমিযী ২৬১৯ ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৮৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
العَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
‘‘আমাদের ও কাফিরদের মাঝে ব্যবধান শুধু নামাযেরই। যে নামায ত্যাগ করলো সে কাফির হয়ে গেলো’’।
(তিরমিযী ২৬২১ ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৮৮ মুস্তাদ্রাক, হাদীস ১১ আহমাদ, হাদীস ২২৯৮৭ বায়হাকী, হাদীস ৬২৯১ ইবনে হিববান/ইহ্সান, হাদীস ১৪৫৪ ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস ৩০৩৯৬ দারাক্বুত্বনী ২/৫২)
বুরাইদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ تَرَكَ صَلَاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ.
‘‘যে ব্যক্তি আসরের নামায পরিত্যাগ করলো তার সকল আমল বরবাদ হয়ে গেলো’’। (বুখারী ৫৫৩, ৫৯৪)
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
الَّذِيْ تَفُوْتُهُ صَلَاةُ الْعَصْرِ كَأَنَّمَا وُتِرَ أَهْلُهُ وَمَالُهُ.
‘‘যে ব্যক্তির আসরের নামায ছুটে গেলো তার পরিবারবর্গ ও ধন-সম্পদের যেন বিরাট ক্ষতি হয়ে গেলো’’। (বুখারী ৫৫২; মুসলিম ৬২৬)
মু‘আয (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দশটি নসীহত করলেন তার মধ্যে বিশেষ একটি এটাও যে,
وَلَا تَتْرُكَنَّ صَلَاةً مَكْتُوْبَةً مُتَعَمِّدًا، فَإِنَّ مَنْ تَرَكَ صَلَاةً مَكْتُوْبَةً مُتَعَمِّدًا فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللهِ.
‘‘তুমি ইচ্ছাকৃত ফরয নামায ত্যাগ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরয নামায ত্যাগ করলো তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার কোন জিম্মাদারি থাকলো না’’।
(আহমাদ ৫/২৩৮)
নামায পড়া মুসলিমদের একটি বাহ্যিক নিদর্শন। সুতরাং যে নামায পড়ে না সে মুসলিম নয়।
আবূ সা’ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা কিছু মালামাল বন্টন সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে জনৈক উঁচু গাল, ঠেলা কপাল এবং গর্তে ঢোকা চোখ বিশিষ্ট ঘন শ্মশ্রুমন্ডিত মাথা নেড়া জঙ্ঘার উপর কাপড় পরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে বললো:
يَا رَسُوْلَ الله! اتَّقِ اللهَ، قَالَ: وَيْلَكَ، أَوَلَسْتُ أَحَقَّ أَهْلِ الْأَرْضِ أَنْ يَّتَّقِيَ اللهَ؟! قَالَ: ثُمَّ وَلَّى الرَّجُلُ، قَالَ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيْدِ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَلَا أَضْرِبُ عُنُقَهُ؟ قَالَ: لَا، لَعَلَّهُ أَنْ يَّكُوْنَ يُصَلِّيْ.
‘‘হে আল্লাহ্’র রাসূল! আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করুন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি ধ্বংস হয়ে যাও! আমি কি দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত ব্যক্তি নই; যে আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করবে। বর্ণনাকারী বলেন: যখন লোকটি রওয়ানা করলো তখন খালিদ বিন্ ওয়ালীদ্ (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমি কি তার গর্দান কেটে ফেলবো না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, হয়তো বা সে নামায পড়ে’’। (বুখারী ৪৩৫১)
’উমর (রাঃ) বলেন:
لَاحَظَّ فِيْ الإِسْلَامِ لِمَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ
‘‘নামায ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফির’’। (বায়হাকী, হাদীস ১৫৫৯, ৬২৯১)
‘আলী (রাঃ) বলেন:
مَنْ لَمْ يُصَلِّ فَهُوَ كَافِرٌ
‘‘যে নামায পড়ে না সে কাফির’’। (বায়হাকী, হাদীস ৬২৯১)
আব্দুল্লাহ বিন্ মাসঊদ (রাঃ) বলেন:
مَنْ لَمْ يُصَلِّ فَلَا دِيْنَ لَهُ
‘‘যে নামায পড়ে না সে মোসলমান নয়’’। (বায়হাকী, হাদীস ৬২৯১)
আব্দুল্লাহ বিন শাক্বীক তাবেয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
كَاْنَ أَصْحَابُ النَّبِىِّ لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنْ الَاعْمَالِ تَرْكُهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ.
‘‘সাহাবায়ে কেরাম নামায ছাড়া অন্য কোন আমল পরিত্যাগ করাকে কুফুরী মনে করতেন না’’। (তিরমিযী ২৬২২)