লগইন করুন
ক. বিচারককে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার ব্যাপারে লক্ষ্যভ্রষ্ট করা। কারণ, বিচার ফায়সালা নির্ণিত হয় বাদীর পক্ষের সাক্ষী অথবা বিবাদীর কসমের উপর। অতএব বাদীর পক্ষের সাক্ষী ভুল হলে এবং বিচার সে সাক্ষীর ভিত্তিতেই হলে ফায়সালা নিশ্চয়ই ভুল হতে বাধ্য। আর তখন এর একমাত্র দায়-দায়িত্ব সাক্ষীকেই বহন করতে হবে এবং এ জন্য সেই গুনাহ্গার হবে।
উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ، وَإِنَّكُمْ تَخْتَصِمُوْنَ إِلَيَّ، وَلَعَلَّ بَعْضَكُمْ أَنْ يَكُوْنَ أَلْـحَنَ بِحُجَّتِهِ مِنْ بَعْضٍ، وَأَقْضِيْ لَهُ عَلَى نَحْوِ مَا أَسْمَعُ، فَمَنْ قَضَيْتُ لَهُ مِنْ حَقِّ أَخِيْهِ شَيْئًا فَلَا يَأْخُذْ، فَإِنَّمَا أَقْطَعُ لَهُ قِطْعَةً مِنَ النَّارِ.
‘‘আমি তো মানুষ মাত্র। আর তোমরা আমার কাছে মাঝে মাঝে বিচার নিয়ে আসো। হয়তো বা তোমাদের কেউ কেউ নিজ প্রমাণ উপস্থাপনে অন্যের চাইতে অধিক পারঙ্গম। অতএব আমি শুনার ভিত্তিতেই তার পক্ষে ফায়সালা করে দেই। সুতরাং আমি যার পক্ষে তার কোন মুসলিম ভাইয়ের কিছু অধিকার ফায়সালা করে দেই সে যেন তা গ্রহণ না করে। কারণ, আমি উক্ত বিচারের ভিত্তিতে তার হাতে একটি জাহান্নামের আগুনের টুকরাই উঠিয়ে দেই’’।
(বুখারী ২৪৫৮, ২৬৮০, ৬৯৬৭, ৭১৬৯, ৭১৮১, ৭১৮৫; মুসলিম ১৭১৩)
খ. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার মাধ্যমে বিবাদীর উপর বিশেষভাবে যুলুম করা হয়। কারণ, এরই মাধ্যমে তার বৈধ অধিকার অবৈধভাবে অন্যের হাতে তুলে দেয়া হয়। তখন সে মাযলুম। আর মাযলুমের ফরিয়াদ আল্লাহ্ তা‘আলা কখনো বৃথা যেতে দেন না।
গ. মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে বাদীর উপরও যুলুম করা হয়। কারণ, এরই মাধ্যমে তার হাতে আগুনের একটি টুকরা উঠিয়ে দেয়া হয়। যা ভবিষ্যতে তার সমূহ অকল্যাণই ডেকে নিয়ে আসে।
ঘ. মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে দোষীকে আরো হঠকারী বানিয়ে দেয়া হয়। কারণ, সে এরই মাধ্যমে কঠিন শাস্তি থেকে রেহাই পায়। অতএব সে মিথ্যা সাক্ষ্য পাওয়ার আশায় আরো অপরাধ কর্ম ঘটিয়ে যেতে কোন দ্বিধা করে না।
ঙ. মিথ্যা সাক্ষ্য এর ভিত্তিতে অনেক হারাম বস্ত্তকে হালাল করে দেয়া হয়। অনেক মানুষের জীবন বিসর্জন দিতে হয়। অনেক সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করা হয়। এ সবের জন্য বাদী-বিবাদী ও বিচারক কিয়ামতের দিন মিথ্যা সাক্ষীর বিপক্ষে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট বিচার দায়ের করবে।
চ. মিথ্যা সাক্ষ্য এর মাধ্যমে বাদীকে নির্দোষ সাব্যস্ত করা হয়; অথচ সে দোষী এবং বিবাদীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় অথচ সে দোষী নয়।
ছ. মিথ্যা সাক্ষ্য এর মাধ্যমে শরীয়তের হালাল-হারামের ব্যাপারে বিনা জ্ঞানে আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করা হয়।
আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ: الْإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ، وَقَوْلُ الزُّوْرِ، أَوْ قَالَ: وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ.
‘‘সর্ববৃহৎ কবীরা গুনাহ্ হচ্ছে চারটি: আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা, কোন ব্যক্তিকে অবৈধভাবে হত্যা করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া ও মিথ্যা কথা বলা। বর্ণনাকারী বলেন: হয়তোবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া’’।
(বুখারী ৬৮৭১; মুসলিম ৮৮)