লগইন করুন
১. অবিবাহিতা মেয়ের সঙ্গে ব্যভিচার। এতে মেয়েটির সম্মানহানি ও চরিত্র বিনষ্ট হয়। কখনো কখনো ব্যাপারটি সন্তান হত্যা পর্যন্ত পৌঁছোয়।
২. বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু স্বামীর সম্মানও বিনষ্ট হয়। তার পরিবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছোয়। তার বংশ পরিচয়ে ব্যাঘাত ঘটে। কারণ, সন্তানটি তারই বলে বিবেচিত হয়; অথচ সন্তানটি মূলতঃ তার নয়।
যেন এমন ঘটনা ঘটতেই না পারে সে জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বামী অনুপস্থিত এমন মহিলার বিছানায় বসা ব্যক্তির এক ভয়ানক রূপ চিত্রায়ন করেছেন।
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَثَلُ الَّذِيْ يَجْلِسُ عَلَى فِرَاشِ الْـمُغِيْبَةِ مَثَلُ الَّذِيْ يَنْهَشُهُ أَسْوَدُ مِنْ أَسَاوِدِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ.
‘‘যে ব্যক্তি স্বামী অনুপস্থিত এমন কোন মহিলার বিছানায় বসে তার দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির ন্যায় যাকে কিয়ামতের দিন কোন বিষাক্ত সাপ দংশন করে’’। (সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৪০৫)
৩. যে কোন প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু প্রতিবেশীর অধিকারও বিনষ্ট হয় এবং তাকে চরম কষ্ট দেয়া হয়।
মিক্বদাদ্ বিন্ আস্ওয়াদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَأَنْ يَّزْنِيَ الرَّجُلُ بِعَشْرِ نِسْوَةٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَّزْنِيَ بِامْرَأَةِ جَارِهِ.
‘‘সাধারণ দশটি মহিলার সাথে ব্যভিচার করা এতো ভয়ঙ্কর নয় যতো ভয়ঙ্কর নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা’’।
(আহমাদ ৬/৮ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৪০৪)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন:
لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ.
‘‘যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না’’। (মুসলিম ৪৬)
৪. যে প্রতিবেশী নামাযের জন্য অথবা ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের জন্য কিংবা জিহাদের জন্য ঘর থেকে বের হয়েছে তার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার।
বুরাইদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
حُرْمَةُ نِسَاءِ الْـمُجَاهِدِيْنَ عَلَى الْقَاعِدِيْنَ كَحُرْمَةِ أُمَّهَاتِهِمْ، وَمَا مِنْ رَجُلٍ مِنَ الْقَاعِدِيْنَ يَخْلُفُ رَجُلًا مِنَ الْـمُجَاهِدِيْنَ فِيْ أَهِلِهِ فَيَخُوْنُهُ فِيْهِمْ إِلاَّ وُقِفَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَيَأْخُذُ مِنْ عَمَلِهِ مَا شَاءَ، فَمَا ظَنُّكُمْ؟.
‘‘মুজাহিদদের স্ত্রীদের সম্মান যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে বসে থাকা লোকদের নিকট তাদের মায়েদের সম্মানের মতো। কোন ঘরে বসে থাকা ব্যক্তি যদি কোন মুজাহিদ পুরুষের পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে তাদের তত্ত্বাবধানের ব্যাপারে আমানতের খিয়ানত করে তখন তাকে মুজাহিদ ব্যক্তির প্রাপ্য আদায়ের জন্য কিয়ামতের দিন দাঁড় করিয়ে রাখা হবে। অতঃপর মুজাহিদ ব্যক্তি ঘরে বসা ব্যক্তির আমল থেকে যা মনে চায় নিয়ে নিবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমাদের কি এমন ধারণা হয় যে, তাকে এতটুকু সুযোগ দেয়ার পরও সে এ প্রয়োজনের দিনে ওর সব আমল না নিয়ে ওর জন্য এতটুকুও রেখে দিবে?’’ (মুসলিম ১৮৯৭)
৫. আত্মীয়া মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু আত্মীয়তার বন্ধনও বিনষ্ট করা হয়।
৬. মাহ্রাম বা এগানা (যে মহিলাকে বিবাহ্ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে চিরতরের জন্য হারাম) মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু মাহ্রামের অধিকারও বিনষ্ট করা হয়।
৭. বিবাহিত ব্যক্তির ব্যভিচার। আর তা মারাত্মক এ জন্য যে, তার উত্তেজনা প্রশমনের জন্য তো তার স্ত্রীই রয়েছে। তবুও সে ব্যভিচার করে বসলো।
৮. বুড়ো ব্যক্তির ব্যভিচার। আর তা মারাত্মক এ জন্য যে, তার উত্তেজনা তো তেমন আর উগ্র নয়। তবুও সে ব্যভিচার করে বসলো।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ: شَيْخٌ زَانٍ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ.
‘‘তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদেরকে গুনাহ্ থেকে পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে দয়ার দৃষ্টিতেও তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি: বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যুক রাষ্ট্রপতি এবং অহঙ্কারী গরিব’’। (মুসলিম ১০৭)
৯. মর্যাদাপূর্ণ মাস, স্থান ও সময়ের ব্যভিচার। এতে উপরন্তু উক্ত মাস, স্থান ও সময়ের মর্যাদা বিনষ্ট হয়।
কোন ব্যক্তি শয়তানের ধোকায় পড়ে ব্যভিচার করে ফেললে এবং তা কেউ না জানলে অথবা বিচারকের নিকট তা না পৌঁছুলে তার উচিত হবে যে, সে তা লুকিয়ে রাখবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট কায়মনোবাক্যে খাঁটি তাওবা করে নিবে। অতঃপর বেশি বেশি নেক আমল করবে এবং খারাপ জায়গা ও সাথি থেকে দূরে থাকবে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَهُوَ الَّذِيْ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُوْ عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُوْنَ»
‘‘তিনিই (আল্লাহ্ তা‘আলা) তাঁর বান্দাহ্দের তাওবা কবুল করেন এবং সমূহ পাপ মোচন করেন। আর তোমরা যা করো তাও তিনি জানেন’’।
(শূরা : ২৫)
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু ‘আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
اِجْتَنِبُوْا هَذِهِ الْقَاذُوْرَاتِ الَّتِيْ نَهَى اللهُ عَنْهَا، فَمَنْ أَلَمَّ بِهَا فَلْيَسْتَتِرْ بِسِتْرِ اللهِ، وَلْيَتُبْ إِلَى اللهِ، فَإِنَّهُ مَنْ يُبْدِ لَنَا صَفْحَتَهُ نُقِمْ عَلَيْهِ كِتَابَ اللهِ تَعَالَى.
‘‘তোমরা ব্যভিচার থেকে দূরে থাকো যা আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এরপরও যে ব্যক্তি শয়তানের ধোকায় পড়ে তা করে ফেলে সে যেন তা লুকিয়ে রাখে। যখন আল্লাহ্ তা‘আলা তা গোপনই রেখেছেন। তবে সে যেন এ জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট তাওবা করে নেয়। কারণ, যে ব্যক্তি তা আমাদের নিকট প্রকাশ করে দিবে তার উপর আমরা অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলার বিধান প্রয়োগ করবো’’।
(’হাকিম ৪/২৭২)
উক্ত কারণেই মা’য়িয বিন্ মা’লিক (রাঃ) যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বার বার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করছিলেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি এতটুকুও ভ্রূক্ষেপ করেননি। চার বারের পর তিনি তাকে এও বলেন: হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছো, ধরেছো কিংবা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছো। কারণ, এতে করে তিনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
أَتَى رَسُوْلَ اللهِ رَجُلٌ مِنَ الْـمُسْلِمِيْنَ، وَهُوَ فِيْ الْـمَسْجِدِ، فَنَادَاهُ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ زَنَيْتُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، فَتَنَحَّى تِلْقَاءَ وَجْهِهِ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ زَنَيْتُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، حَتَّى ثَنَّى ذَلِكَ عَلَيْهِ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ، فَلَمَّا شَهِدَ عَلَى نَفْسِهِ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ دَعَاهُ رَسُوْلُ اللهِ فَقَالَ: أَبِكَ جُنُوْنٌ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: فَهَلْ أُحْصِنْتَ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَقَالَ النَّبِيُّ : اِذْهَبُوْا بِهِ فَارْجُمُوْهُ.
‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জনৈক মুসলিম আসলো। তখনো তিনি মসজিদে। অতঃপর সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ডেকে বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমি ব্যভিচার করে ফেলেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি কোন রূপ ভ্রূক্ষেপ না করে অন্য দিকে তাঁর চেহারা মুবারক মুড়িয়ে নিলেন। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা বরাবর এসে আবারো বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমি ব্যভিচার করে ফেলেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো তার প্রতি কোন রূপ ভ্রূক্ষেপ না করে অন্য দিকে তাঁর চেহারা মুবারক মুড়িয়ে নিলেন। এমন কি সে উক্ত স্বীকারোক্তি চার চার বার করলো। যখন সে নিজের উপর ব্যভিচারের সাক্ষ্য চার চার বার দিয়েছে তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন: তুমি কি পাগল? সে বললো: না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি কি বিবাহিত? সে বললো: জী হ্যাঁ। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে বললেন: তোমরা একে নিয়ে যাও এবং রজম তথা প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করো’’। (বুখারী ৫২৭১; মুসলিম ১৬৯১)
বুরাইদাহ্ (রাঃ) এর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা’য়িয বিন্ মা’লিক (রাঃ) কে বলেছিলেন:
وَيْحَكَ! اِرْجِعْ فَاسْتَغْفِرِ اللهَ وَتُبْ إلَيْهِ.
‘‘আহা! তুমি ফিরে যাও। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ক্ষমা চাও এবং তাঁর নিকট তাওবা করে নাও’’। (মুসলিম ১৬৯৫)
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
لَـمَّا أَتَى مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ إِلَى النَبِيِّ قَالَ لَهُ: لَعَلَّكَ قَبَّلْتَ أَوْ غَمَزْتَ أَوْ نَظَرْتَ، قَالَ: لَا يَا رَسُوْلَ اللهِ!.
‘‘যখন মা’য়িয বিন্ মা’লিক (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলো তখন তিনি তাকে বললেন: হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছো, ধরেছো কিংবা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছো। সে বললো: না, হে আল্লাহ্’র রাসূল!’’
(বুখারী ৬৮২৪)
তবে বিচারকের নিকট ব্যাপারটি (সাক্ষ্য সবুতের মাধ্যমে) পৌঁছুলে অবশ্যই তাকে বিচার করতে হবে। তখন আর কারোর ক্ষমার ও সুপারিশের সুযোগ থাকে না।
এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফ্ওয়ান বিন্ উমাইয়াহ্কে চোরের জন্য সুপারিশ করতে চাইলে তাকে বললেন:
هَلاَّ كَانَ ذَلِكَ قَبْلَ أَنْ تَأْتِيَنِيْ بِهِ؟!.
‘‘আমার নিকট আসার পূর্বেই কেন তা করলে না’’।
(আবূ দাউদ ৪৩৯৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪৪ নাসায়ী ৮/৬৯; আহমাদ ৬/৪৬৬; হা’কিম ৪/৩৮০ ইব্নুল্ জারূদ্, হাদীস ৮২৮)
তেমনিভাবে উসামাহ্ (রাঃ) জনৈকা ক্বুরাশী চুন্নি মহিলার জন্য সুপারিশ করতে চাইলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অত্যন্ত রাগতস্বরে বললেন:
يَا أُسَامَةُ! أَتَشْفَعُ فِيْ حَدٍّ مِنْ حُدُوْدِ اللهِ ؟!.
‘‘তুমি কি আল্লাহ্ তা‘আলার দন্ডবিধির ব্যাপারে সুপারিশ করতে আসলে?!’’ (বুখারী ৬৭৮৮; মুসলিম ১৬৮৮; আবূ দাউদ ৪৩৭৩; তিরমিযী ১৪৩০; ইব্নু মাজাহ্ ২৫৯৫)
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
تَعَافَوْا الْـحُدُوْدَ فِيْمَا بَيْنَكُمْ، فَمَا بَلَغَنِيْ مِنْ حَدٍّ فَقَدْ وَجَبَ.
‘‘তোমরা দন্ডবিধি সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো একে অপরকে ক্ষমা করো। কারণ, আমার নিকট এর কোন একটি পৌঁছুলে তা প্রয়োগ করা আমার উপর আবশ্যক হয়ে যাবে’’।
(আবূ দাউদ ৪৩৭৬)
শুধুমাত্র তিনটি পদ্ধতিতেই কারোর উপর ব্যভিচারের দোষ প্রমাণিত হয়। যা নিম্নরূপ:
১. ব্যভিচারী একবার অথবা চারবার ব্যভিচারের সুস্পষ্ট স্বীকারাক্তি করলে। কারণ, জুহাইনী মহিলা ও উনাইস্ (রাঃ) এর রজমকৃতা মহিলা ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি একবারই করেছিলো। অন্য দিকে মা’য়িয বিন্ মা’লিক (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট চার চারবার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করেছিলো। কিন্তু সংখ্যার ব্যাপারে হাদীসটির বর্ণনাসমূহ মুয্তারিব তথা এক কথার নয়। কোন কোন বর্ণনায় চার চার বারের কথা। কোন কোন বর্ণনায় তিন তিন বারের কথা। আবার কোন কোন বর্ণনায় দু’ দু’ বারের কথারও উল্লেখ রয়েছে।
তবুও চার চারবার স্বীকারোক্তি নেয়াই সর্বোত্তম। কারণ, হতে পারে স্বীকারোক্তিকারী এমন কাজ করেছে যাতে সে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত হয় না। যা বার বার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। আর এ কথা সবারই জানা যে, ইসলামী দন্ডবিধি যে কোন যুক্তি সঙ্গত সন্দেহ কিংবা অজুহাতের কারণে রহিত হয়। যা ’উমর, আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ এবং অন্যন্য সাহাবা (রাঃ) থেকেও বর্ণিত। ‘আল্লামা ইব্নুল্ মুন্যির্ (রাহিমাহুল্লাহ্) এ ব্যাপারে ’উলামায়ে কিরামের ঐকমত্যেরও দাবি করেছেন। তেমনিভাবে চার চারবার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ব্যভিচারীকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করারও সুযোগ দেয়া হয়। যা একান্তভাবেই কাম্য।
তবে স্বীকারাক্তির মধ্যে ব্যভিচারের সুস্পষ্ট উল্লেখ এবং দন্ডবিধি প্রয়োগ পর্যন্ত স্বীকারোক্তির উপর স্বীকারকারী অটল থাকতে হবে। অতএব কেউ যদি এর আগেই তার স্বীকারোক্তি পরিহার করে নেয় তা হলে তার কথাই তখন গ্রহণযোগ্য হবে। তেমনিভাবে স্বীকারকারী জ্ঞানসম্পন্নও হতে হবে।
২. ব্যভিচারের ব্যাপারে চার চার জন সত্যবাদী পুরুষ এ বলে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য দিলে যে, তারা সত্যিকারার্থে ব্যভিচারী ব্যক্তির সঙ্গমকর্ম স্বচক্ষে দেখেছে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَاللاَّتِيْ يَأْتِيْنَ الْفَاحِشَةَ مِنْ نِّسَآئِكُمْ فَاسْتَشْهِدُوْا عَلَيْهِنَّ أَرْبَعَةً مِّنْكُمْ»
‘‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্য থেকে কেউ ব্যভিচার করলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার চার জন সাক্ষী সংগ্রহ করো’’।
(নিসা’ : ১৫)
৩. কোন মহিলা গর্ভবতী হলে, অথচ তার স্বামী নেই।
’উমর (রাঃ) তাঁর যুগে এমন একটি বিচারে রজম করেছেন। তবে এ প্রমাণ হেতু যে কোন মহিলার উপর দন্ডবিধি প্রয়োগ করতেই হবে ব্যাপারটি এমন নয়। এ জন্য যে, গর্ভটি সন্দেহবশত সঙ্গমের কারণেও হতে পারে অথবা ধর্ষণের কারণেও। এমনকি মেয়েটি গভীর নিদ্রায় থাকাবস্থায়ও তার সঙ্গে উক্ত ব্যভিচার কর্মটি সংঘটিত হতে পারে। তাই ’উমর (রাঃ) তাঁর যুগেই শেষোক্ত দু’টি অজুহাতে দু’ জন মহিলাকে শাস্তি দেননি। তবে কোন মেয়ে যদি গর্ভবতী হয়, অথচ তার স্বামী নেই এবং সে এমন কোন যুক্তিসঙ্গত অজুহাতও দেখাচ্ছে না যার দরুন দন্ডবিধি রহিত হয় তখন তার উপর ব্যভিচারের উপযুক্ত দন্ডবিধি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
’উমর (রাঃ) তাঁর এক দীর্ঘ খুতবায় বলেন:
وَإِنَّ الرَّجْمَ حَقٌّ فِيْ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى عَلَى مَنْ زَنَى، إِذَا أَحْصَنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ، إِذَا قَامَتِ الْبَيِّنَةُ أَوْ كَانَ الْحَبْلُ أَوِ الْاِعْتِرَافُ.
‘‘নিশ্চয়ই রজম আল্লাহ্ তা‘আলার বিধানে এমন পুরুষ ও মহিলার জন্যই নির্ধারিত যারা ব্যভিচার করেছে, অথচ তারা বিশুদ্ধ বিবাহের মাধ্যমে ইতিপূর্বে নিজ স্ত্রী অথবা স্বামীর সাথে সম্মুখ পথে সঙ্গম করেছে এবং স্বামী-স্ত্রী উভয় জনই তখন ছিলো প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাধীন যখন ব্যভিচারের উপযুক্ত সাক্ষী-প্রমাণ মিলে যায় অথবা মহিলা গর্ভবতী হয়ে যায় অথবা ব্যভিচারী কিংবা ব্যভিচারিণী ব্যভিচারের ব্যাপারে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দেয়’’। (বুখারী ৬৮২৯; মুসলিম ১৬৯১; তিরমিযী ১৪৩২; আবূ দাউদ ৪৪১৮; ইব্নু মাজাহ্ ২৬০১)