লগইন করুন
২৫. গুনাহ্ করতে করতে গুনাহ্গারের অন্তর থেকে ইসলামী চেতনায় লালিত মানব আত্মসম্মানবোধ একেবারেই বিনষ্ট হয়ে যায়। এ কথা সত্য যে, যার ঈমান যতই দৃঢ় তার এই আত্মমর্যাদাবোধ ততই মজবুত। ঠিক এরই বিপরীতে যার ঈমান যতই দুর্বল তার এই আত্মমর্যাদাবোধও ততই দুর্বল। এ কারণেই তা পূর্ণাঙ্গরূপে পাওয়া যায় রাসূলদের মধ্যে। এরপর ঈমানের তারতম্য অনুযায়ী অন্যদের মধ্যেও।
সা’দ বিন্ ’উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
لَوْ رَأَيْتُ رَجُلًا مَعَ اِمْرَأَتِيْ لَضَرَبْتُهُ بِالسَّيْفِ غَيْرَ مُصْفَحٍ.
‘‘আমি কাউকে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করতে দেখলে তৎক্ষনাৎই তার গর্দান উড়িয়ে দেবো’’।
উল্লিখিত উক্তিটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কানে পৌঁছুতেই তিনি বললেন:
أَتَعْجَبُوْنَ مِنْ غَيْرَةِ سَعْدٍ؟ وَاللهِ لَأَنَا أَغْيَرُ مِنْهُ، وَاللهُ أَغْيَرُ مِنِّيْ، وَمِنْ أَجْلِ غَيْرَةِ اللهِ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ.
‘‘তোমরা কি আশ্চর্য হয়েছো সা’দের আত্মসম্মানবোধ দেখে? আল্লাহ্’র কসম খেয়ে বলছি: আমার আত্মসম্মানবোধ তার চেয়েও বেশি এবং আল্লাহ্ তা‘আলার আরো বেশি। যার দরুন তিনি হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতা’’।
(বুখারী ৬৮৪৬; মুসলিম ১৪৯৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ! وَاللهِ مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرُ مِنَ اللهِ أَنْ يَّزْنِيَ عَبْدُهُ أَوْ تَزْنِيَ أَمَتُهُ.
‘‘হে মুহাম্মাদ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতরা! আল্লাহ্’র কসম খেয়ে বলছি: আল্লাহ্ তা‘আলার চাইতে আর কারোর আত্মসম্মানবোধ বেশি হতে পারেনা। যার দরুন তিনি চান না যে, তাঁর কোন বান্দাহ্ বা বান্দি ব্যভিচার করুক’’। (বুখারী ১০৪৪; মুসলিম ৯০১)
তবে শরীয়তের দৃষ্টিতে যুক্তিসঙ্গত কোন ’উযর বা কৈফিয়ত গ্রহণ করা উক্ত আত্মসম্মানবোধ বিরোধী নয়। বরং তা প্রশংসনীয়ও বটে।
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا أَحَدَ أَغْيَرُ مِنَ اللهِ، وَلِذَلِكَ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ، وَلَا أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْعُذْرُ مِنَ اللهِ، مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ أَنْزَلَ الْكِتَابَ وَأَرْسَلَ الرُّسُلَ، وَلَا أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْمَدْحُ مِنَ اللهِ، مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ مَدَحَ نَفْسَهُ.
‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার চাইতেও অধিক আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন আর কেউ নেই। এ কারণেই তিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল অশ্লীলতা হারাম করে দিয়েছেন এবং আল্লাহ্ তা‘আলার চাইতেও কারোর যুক্তিসঙ্গত কৈফিয়ত গ্রহণ করা বেশি পছন্দ করেন এমন আর কেউ নেই। এ জন্যই তিনি কিতাব নাযিল করেন এবং রাসূল প্রেরণ করেন। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা‘আলার চাইতেও অন্যের প্রশংসা বেশি পছন্দ করেন এমন আর কেউ নেই। এ কারণেই তিনি নিজের প্রশংসা নিজেই করেন’’।
(বুখারী ৪৬৩৪, ৪৬৩৭, ৫২২০, ৭৪০৩; মুসলিম ২৭৬০)
জাবির বিন্ ‘আতীক্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مِنَ الْغَيْرَةِ مَا يُحِبُّ اللهُ، وَمِنْهَا مَا يُبْغِضُ اللهُ، فَأَمَّا الَّتِيْ يُحِبُّهَا اللهُ فَالْغَيْرَةُ فِيْ الرِّيْبَةِ، وَأَمَّا الْغَيْرَةُ الَّتِيْ يُبْغِضُهَا اللهُ فَالْغَيْرَةُ فِيْ غَيْرِ رِيْبَةٍ.
‘‘কিছু আত্মসম্মানবোধ আল্লাহ্ তা‘আলা পছনদ করেন আর কিছু অপছন্দ। পছন্দনীয় আত্মসম্মানবোধ এই যে, যা হবে যুক্তিসঙ্গত তথা ব্যভিচার সম্বন্ধে সংশয়াকুল। আর অপছন্দনীয় আত্মসম্মানবোধ এই যে, যা হবে অযৌক্তিক তথা সংশয়হীন’’।
(আবূ দাউদ ২৬৫৯; ইব্নু হিববান ২৯৫; দা’রামী ২২২৬; নাসায়ী ২৫৫৮; আহমাদ ৫/৪৪৫, ৪৪৬)
কারোর মধ্যে আত্মসম্মানবোধ দুর্বল হয়ে গেলে সে আর গুনাহ্কে গুনাহ্ বলে মনে করে না। না নিজের ব্যাপারে না অন্যের ব্যাপারে। কেউ কেউ তো গুনাহ্ করতে করতে ধীরে ধীরে এমন পর্যায়ে উপনীত হয় যে, সে গুনাহ্কে সুন্দর রূপে অন্যের নিকটও উপস্থাপন করে। তাকে সে গুনাহ্ করতে বলে এবং করার জন্য উৎসাহ্ জোগায়। বরং তা সংঘটনের জন্য তাকে সহযোগিতাও করে থাকে। এ কারণেই ‘‘দাইয়ূস’’ তথা যে নিজ পরিবারের ইয্যতহানী হলেও তা সহজেই সহ্য করে যায় তার উপর জান্নাত হারাম।