কোন ভুল থাকলে সেটি রিপোর্ট করার জন্য অনুগ্রহ করে লগইন করুন।
লগইন করুন
লগইন করুন
হজ সফরে সহজ গাইড হজ পরবর্তী কার্যাবলী মুহাম্মাদ মোশফিকুর রহমান
মদীনা ও মসজিদে নববীর ইতিহাস
- মদীনা প্রসিদ্ধ শহর। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট প্রিয় এ শহর, যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করেছেন, বসবাস করেছেন, ইসলামি রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁর মসজিদ আছে ও তিনি কবরস্থ হয়েছেন।
- এ পবিত্র শহর আরও কয়েকটি নামে পরিচিত; ইয়াসরিব, তা-বা, তাইবা, মদীনা ইত্যাদি।
- আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; ‘‘হে আল্লাহ! মক্কার ন্যায় অথবা তার চেয়ে অধিক মদীনার মুহাব্বত আমাদের অন্তরে সৃষ্টি করুন। হে আল্লাহ আমাদের খাদ্যে ও উপাদানে বরকত দিন এবং তার আবহাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের উপযোগী করুন”।[1]
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় মক্কার চেয়ে দ্বিগুণ বরকত দানের কথা বলে আল্লাহর কাছে দো‘আ করেছেন। এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ঈমান (শেষ যামানায়) মদীনার পানে ফিরে আসবে যেমন: সাপ নিজ আশ্রয় গর্তে ফিরে আসে’’। অপর এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি দুঃখ কষ্ট সহ্য করে মদীনায় অবস্থান করবে এবং মদীনায় মৃত্যুবরণ করবে, আমি কিয়ামতের দিবসে তার জন্য সুপারিশ অথবা সাক্ষ্য প্রদানকারী করব”।[2]
- মদীনায় বসবাস উত্তম, মদীনার একটি বড় ফযীলত হচ্ছে; নিকৃষ্ট লোকেরা সেখানে অবস্থান করতে পারবে না আর সৎ ব্যক্তিরা সেখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করতে পারে।
- মদীনাকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। মদীনায় মহামারী/প্লেগ রোগ ছড়াবে না, মদীনায় দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। মদীনায় সকল রাস্তায় আল্লাহর ফিরিশতাগণ রক্ষী হিসেবে অবস্থান করছেন।[3]
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আইর’ ও ‘সাউর’ এর মধ্যস্থলকে মদীনার হারাম বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। মক্কার হারামের মতো এখানকার হারামের অভ্যন্তরে কিছু কাজের বিধি-নিষেধ প্রযোজ্য।
- মদীনায় প্রচুর পরিমাণে খেজুরের বাগান ও কিছু সমতল ভূমি লক্ষ্যনীয়।[4]
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মসজিদ নির্মাণের নিমিত্তে প্রথমে বনু নদ্বীরের সর্দারের কাছ থেকে খেজুর বাগান ও পরে সুহাইল ও সাহল-এর কাছ থেকে মসজিদের জন্য জায়গা করেন এবং নিজে মসজিদ নির্মাণে অংশ নেন। আব্দুল্লাহ ইবন উমরের বর্ণনা অনুযায়ী রাসূলের যুগের মসজিদের ভিত্তি ছিল ইটের, ছাদ ছিল খেজুরের ডালের এবং খুঁটি ছিল খেজুরের গাছের কাণ্ডের। সে সময় মসজিদের পরিধি ছিল আনুমানিক ২৫০০ মিটার।
- এরপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর যুগে এবং ওসমান ইবন আফফান-এর যুগে মসজিদের সম্প্রসারণ ঘটে। পরবর্তীতে বেশ কয়েকজন মুসলিম শাসকের আমলে মসজিদের উন্নয়ন ও সম্প্রসারন ঘটে।
- এরপর সৌদি সরকার যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন মসজিদের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। ১৯৫১ ইং সালে বাদশাহ আব্দুল আযীয মসজিদের উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিম দিকের আশেপাশের ঘর-বাড়ি খরিদ করে ভেঙে ফেলেন। মসজিদের দৈর্ঘ্য ১২৮ মিটার ও প্রস্থ ৯১ মিটার করা হয় এবং আয়তন ৬২৪৬ বর্গ মিটার থেকে বাড়িয়ে ১৬৩২৬ বর্গমিটার করা হয়। মসজিদের মেঝেতে ঠান্ডা মার্বেল পাথর লাগানো হয়। মসজিদের চার কোনায় ৭২ মিটার উচুঁ চারটি মিনার তৈরি করা হয়। এ সম্প্রসারণে ৫ কোটি রিয়াল খরচ হয় ও কাজ শেষ হয় ১৯৫৫ সালে।
- বাদশাহ ফয়সাল এর আমলে ক্রমবর্ধমান হাজীদের জায়গার সংকুলান করার জন্য পশ্চিম দিকের জায়গা বৃদ্ধি করা হয় যার আয়তন ছিল ৩৫০০০ বর্গমিটার।
- সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে বাদশাহ ফাহাদ ইবন আব্দুল আযীয কর্তৃক মসজিদের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন ও বিস্তার সাধিত হয়। পূর্ববর্তী মসজিদের আয়তনের তুলনায় নয় গুণ আয়তন বৃদ্ধি করা হয়। মসজিদকে এত সুন্দর করা হয় যা মুসলিমদের অন্তর জয় করে। মসজিদের ছাদ এমনভাবে বানানো হয়েছে যে প্রয়োজনে দ্বিতল বানানো সম্ভব হবে। মূল গ্রাউণ্ড ফ্লোরের আয়তন ৮২০০০ বর্গমিটার হয়। মসজিদের চারপাশে ২৩৫০০০ বর্গমিটার খোলা চত্বরে সাদা শীতল মার্বেল পাথর বসানো হয়। এর ফলে মসজিদের ভিতরে ২৬৮০০০ মুসল্লি এবং মসজিদের বাইরের চত্বরে ৪৩০০০০ মুসল্লির সালাত আদায়ের জায়গা হয়। সম্পূর্ণ মসজিদে এসি, আন্ডারগ্রাউন্ডে ওয়াশরুম ও কার পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হয়। মসজিদের কাজ শুরু হয় ১৯৮৫ সালে আর শেষ হয় ১৯৯৪ সালে।
- মসজিদে নববীর ভিতরে বেশকিছু ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ সংরক্ষিত আছে; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর, রিয়াদুল জান্নাহ, আসহাবে সুফফা, নবিজীর মেহরাব ও মিম্বার।
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মসজিদে হারাম ব্যতীত আমার এ মসজিদে (মসজিদে নববী) সালাত অন্য স্থানে সালাতের চেয়ে ১ হাজার গুণ উত্তম, আর মসজিদে হারামে সালাত ১ লক্ষ সালাতের চেয়ে উত্তম”[5]
মদীনা ও মসজিদে নববীর ইতিহাস বিস্তারিত জানতে ‘পবিত্র মদীনার ইতিহাস: শাইখ ছফীউর রহমান মোবারকপুরী’ বইটি পড়ুন।
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৭৬
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৮৫; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৬৩
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৮০
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৭২
[5] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৯৬
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৮৫; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৬৩
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৮০
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৭২
[5] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৯৬