লগইন করুন
- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তামাত্তু ও কিরান হজ আদায়কারীরা যে উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা ইত্যাদি পশু বাধ্যতামূলকভাবে জবেহ করে থাকেন তাকে হাদী বলা হয়। অনেকে বলে থাকেন এটা হজের কুরবানি, কিন্তু আসলে হজের ক্ষেত্রে এর নাম হলো হাদী। কুরবানি, হাদী ও দম এগুলোর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। কুরবানীর উপলক্ষ্য হলো ঈদ, হাদীর উপলক্ষ্য হজ আর দমের উপলক্ষ্য হলো কাফফারা আদায়। কুরবানী পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় করা যায়। হাদী শুধুমাত্র হারাম এলাকা তথা মক্কা, মিনা ও মুযদালিফায় করা যাবে। দম হারামের সীমানার ভিতর আদায় করতে হবে। হাদী ও কুরবানীর গোস্ত নিজে খাওয়া যাবে কিন্তু দম এর গোস্ত নিজে খাওয়া যাবে না। যারা হজের সময় হাদী করছেন তারা যেহেতু মুসাফির তাই তাদের আর সেই বছর কুরবানী করা জরুরী নয়, তবে চাইলে করতে পারেন। ১০ যিলহজ সূর্যোদয় থেকে শুরু করে ১৩ যিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাদী করা যায়। হজে তামাত্তু ও হজে ক্বীরান হজকারীদের ওপর হাদী প্রদান করা ওয়াজিব।
- হারাম এলাকা তথা মিনা, মুযদালিফা ও মক্কার যে কোনো অংশে পশু যবেহ করা যাবে, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি এখানে যবেহ করেছি এবং মিনার সকল স্থানই যবেহ করার জায়গা, সকল পাহাড়ে ও গিরিপথের কাছে।
- হাদীর পশু পুরুষ অথবা স্ত্রী দুটিই হতে পারে। প্রাণীর বয়স প্রকার: কমপক্ষে দুম্বা- ছয় মাস, ভেড়া- এক বছর, ছাগল- এক বছর, গরু- দু’বছর ও উট- পাঁচ বছর। প্রাণী একচোখ ওয়ালা, অসুস্থ, খোঁড়া পা ওয়ালা, খুবই দুর্বল হওয়া যাবে না।[1]
- উট ও গরু হলে একটা পশু সর্বোচ্চ সাত জনে বা এর কম সংখ্যায় (জোড় বা বিজোড়) অংশ নিতে পারবেন। আর ভেড়া বা ছাগল হলে একজনের জন্য একটা পশু যবেহ করতে হবে। যবেহ করা পশুর মাংস চাইলে নিজে খাওয়া যাবে এবং সাথে করে দেশেও নিয়ে আসা যাবে, যেমনটা করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যবেহ করা পশুর মাংস গরীব ও মিসকীন লোকদের বেশি পরিমাণে বিতরণ করা বাঞ্চণীয়।
- কেউ হাদী করতে না পারলে এর পরিবর্তে তিনি হজের পরবর্তী তিন দিন এবং দেশে ফিরে ৭ দিন (ধারাবাহিকভাবে অথবা ভেঙ্গে ভেঙ্গে) সাওম রাখবেন। মক্কাবাসীদের হাদী করা ওয়াজিব নয়, এমনকি সাওমও রাখতে হবে না।[2]
- হাদী তিন পদ্ধতিতে আদায় করতে পারেন। প্রথমত, ব্যাংকের মাধ্যমে হাদী যবেহ করার ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, আপনার হজ এজেন্সির মাধ্যমে। তৃতীয়ত, নিজে হাট থেকে হাদী কিনে করা যায়। মিনায় তাবু এলাকায় কোথাও হাদী যবাই করা দেখতে পাবেন না। হাদী করার জন্য নির্ধারিত আলাদা জায়গা আছে মু‘আইসিম নামক এলাকায় যা মিনার সীমানার ভিতর অবস্থিত।
- ব্যাংকের মাধ্যমে হাদী করা সবচেয়ে বিশ্বস্ত পন্থা। হজের পূর্বে আল-রাজী ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংক এর বুথে হাদীর জন্য ৪৫০-৫০০ রিয়াল জমা দিয়ে রশিদ বা টিকিট সংগ্রহ করুন। সাধারণত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ১০ যিলহজ সকাল ১০টা থেকে হাদী জবেহ করা শুরু করেন এবং যারা মোবাইল নং দেন তাদের এস.এম.এস এর মাধ্যমে হাদী সম্পন্ন করা নিশ্চিত করেন। মক্কা ও মদীনায় অনেক হাদীর টাকা জমা দেওয়ার ছোট ছোট ব্যাংক বুথ দেখতে পাবেন। হজের একটু আগেভাগেই টিকেট ক্রয় করা উত্তম, নইলে পরে হাদী টিকেট পাওয়া যায় না।
- আপনারা কয়েকজনে আপনার হজ এজেন্সির নেতাকে হাদীর টাকা দিয়ে দিতে পারেন। আপনার হজ এজেন্সি নেতা তিনি মিনায় হাট থেকে হাদী ক্রয় করে জবেহ করার ব্যবস্থা করতে পারেন। আবার আপনি নিজে মিনায় হাটে গিয়ে পশু ক্রয় করে জবেহ করতে পারেন। এমন করলে আপনি কিছু গোস্ত খাওয়ার জন্য নিয়ে আসতে পারেন। তবে সাধারণ হাজীদের পক্ষে হাটে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই প্রথম দুইটির যে কোনো একটি পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
- নিজ হাতে যবেহ করা সুন্নাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজে ৬৩টি উট জবেহ করেছিলেন। যবেহ করার সময় প্রাণীর মুখ থাকবে দক্ষিণ দিকে এবং পশুকে বাম দিকে কাত করে শোয়াতে হবে ও এর পা গুলো ডান দিকে অতঃপর কিবলামুখি হয়ে ছুরি চালাতে হবে।[3]
- যবেহ করার সময় এ দো‘আ পাঠ করুন:
بِسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ، اَللهم مِنْكَ وَلَكَ، اَللهم تَقَبَّلْ مِنِّي.ْ
‘‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্নী’’।
‘‘আল্লাহর নামে, আল্লাহ মহান।হে আল্লাহ! এ প্রাণী আপনার পক্ষ থেকে এবং এর মালিক আপনি। হে আল্লাহ! আমার এটি আপনি কবুল করুন’’।
সতর্কতা: হজের সময় কিছু অসাধু লোক মিনার তাবুতে এসে হাদী করানোর নামে ভূয়া রশিদ দিয়ে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে। হাদী যবেহ না করেই ফোন করে জানিয়ে দেন হাদী হয়ে গেছে! তাই ব্যাংক ছাড়া কারো হাতে এমনি টাকা দিবেন না। আবার কিছু হজ এজেন্সির নেতারাও একই প্রতারণা করেন। তাই আপনার দলের কয়েকজন লোক এজেন্সি নেতার সাথে সরেজমিনে গিয়ে হাদী ক্রয় করা ও যবেহ প্রত্যক্ষ করে অন্যান্য সহযাত্রীদের ফোন করে অবহিত করতে পারেন। হাদী শেষে মিনা অথবা মক্কার পথে রওনা হউন এবং পথিমধ্যে কসর/হলক্ব সেরে ফেলুন।
[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২২৮; ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ২৮৫৭
[3] ইবন মাজাহ