কোন ভুল থাকলে সেটি রিপোর্ট করার জন্য অনুগ্রহ করে লগইন করুন।
লগইন করুন
লগইন করুন
হজ সফরে সহজ গাইড হজ মুহাম্মাদ মোশফিকুর রহমান
১০ যিলহজ: বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা
- ১০ই জিলহজের দিনটি হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনটিকে হজের বড় দিন হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এ দিনে ৪টি কাজ সম্পাদন করতে হবে; প্রথমত বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা (রমি করা), দ্বিতীয়ত হাদী বা পশু জবেহ করা, তৃতীয়ত কসর/হলক্ব করা, চতুর্থত তাওয়াফুল ইফাদাহ করা ও সা‘ঈ করা।[1]
- জামরাত এলাকা দিয়ে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে যবেহ করতে নিয়ে যাচ্ছিলেন ও শয়তান তাঁকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল এবং তিনি শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করেছিলেন। জামরাতে শয়তান বাঁধা আছে বলে যে কেউ কেউ ধারণা করে তা মোটেই ঠিক নয়। আবার অনেকে জামরাতকে বড় শয়তান, ছোট শয়তান নামে ডাকে যা সঠিক নয়। জামারাত এলাকা মিনার সীমানার মধ্যে পড়ে। কংকর নিক্ষেপ বা রামি করা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বায়তুল্লাহ তাওয়াফ, সাফা মারওয়া সা‘ঈ ও জামরাতে কংকর নিক্ষেপ আল্লাহর যিকির কায়েমের উদ্দেশ্যে।’’ হাদীসে আরও এসেছে ‘‘আর তোমার কংকর নিক্ষেপ, সে তো তোমার জন্য সঞ্চিত করে রাখা হয়”।[2]
- সূর্যোদয়ের আগেই তালবিয়াহ পাঠরত অবস্থায় মিনার উদ্দেশ্যে মুযদালিফা ত্যাগ করুন। এসময়ও রাস্তায় প্রচুর গাড়ির ভীড় হয়। অনেক সময় রাস্তায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়ে যাওয়ার কারণে বাস আর মিনায় ঢ়ুকতে দেওয়া হয় না। তাই এখান থেকে ১০-১৫কি:মি: হাঁটার মন-মানসিকতা রাখুন। আসলে এখান থেকে মিনা হয়ে জামরাতে হেঁটে যাওয়াই উত্তম। তবে সবসময় দলবদ্ধ হয়ে থাকুন, কারণ এখানে অনেক লোক হারিয়ে দলছাড়া হয়ে যায়। যখন মুহাসসার উপত্যকা পার হবেন তখন একটু তাড়াতাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করুন তবে শান্ত ও সুস্থিরভাবে চলুন-কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটাই করেছেন। আর আপনি যদি বাসে থাকেন, তবে বাস তার নিজস্ব গতিতেই যাবে। জামরাত যাওয়ার পথে যদি আপনার মিনার তাবু সামনে এসে যায় তবে তাবুতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ও কিছু খাওয়া দাওয়া করে তারপর জামরাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তালবিয়াহ বেশি বেশি করে পাঠ করা অব্যাহত রাখুন, কারণ তালবিয়াহ পাঠ এর সময় শেষ হয়ে আসছে। এসময় দলনেতা একটি পতাকা নিয়ে সকলকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলে উত্তম হয়।[3]
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য উঠার ১-২ ঘন্টার মধ্যে কংকর মেরেছিলেন। সে হিসাবে সূর্য পশ্চিমে ঢলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কংকর নিক্ষেপ করা সুন্নাত। অবশ্য সূর্য উঠা থেকে শুরু করে ১১ যিলহজ সুবহে সাদিক পর্যন্ত কংকর মারা জায়েয। বর্তমানে যেহেতু ৩০ লক্ষাধিক হাজীর সুন্নাত সময়ের মধ্যে কংকর মারা দুঃসাধ্য ও অনেকের পক্ষে কষ্টকর তাই একটু দেরী করে ও খবর নিয়ে কম ভিড়ের সময়ে কংকর নিক্ষেপ করতে যাওয়া উত্তম।[4]
- নারী, বালক, অসুস্থ্য ও বৃদ্ধরা যারা মুযদালিফা থেকে মধ্যরাতে মিনায় চলে এসেছেন তারা ১০ তারিখ সূর্য উঠার আগেই কংকর নিক্ষেপ করতে পারেন। তবে এ সময়ে রাস্তায় বিপরীতমুখী প্রচণ্ড ভীড় থাকার কারণে তাদের আবার জামরাত থেকে মিনায় ফিরে আসা কঠিন ব্যাপার হয়ে যায়। সাধারণত দেখা যায় বিকেল বেলায় বা রাতে জামরাত ফাঁকা থাকে। এ সময়ে নারী, বালক, অসুস্থ্য ও বৃদ্ধদের কংকর নিক্ষেপ করা সহজ হয়।[5]
- অসুস্থ্য ও বৃদ্ধ নারী-পুরুষ, শিশু-বালকদের পক্ষ থেকে অন্য যে কেউ তার প্রতিনিধি হিসাবে রমি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতিনিধি ব্যক্তি সেই বছর হজ আদায়কারী হতে হবে এবং প্রথমে তার নিজের কংকর নিক্ষেপ করবেন ও তারপর অন্যের কংকর নিক্ষেপ করবেন। আজকাল অনেককে দেখা যায়; বিশেষ করে নারীরা ক্ষীণ শারিরীক দুর্বলতা ও অসুস্থতার অজুহাতে রমি করতে না গিয়ে অন্যকে নিযুক্ত করেন ও তাবুতে ঘুমিয়ে সময় পার করেন। এমনটি করা অনুচিত। নিজের কংকর নিজে মারা উত্তম। একেবারে চলতে অপারগ বা ওখানে গেলে পরে আরও অসুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা আছে বা জামরাতে প্রচণ্ড লোকের ভীড়-এমন গুরুতর ওজর ছাড়া সকলেরই জামরাতে যাওয়া উচিত।
- এবার পায়ে হেঁটে জামরাত এলাকায় যান। হাঁটতে হাঁটতে তালবিয়াহ পাঠ করতে থাকুন। বর্তমানে কংকর নিক্ষেপের সুবিধা উন্নত করা হয়েছে। এখন আপনি এখানে নিচতলা/দ্বিতীয় তলা/তৃতীয় তলা/চতুর্থ তলা থেকেও কংকর নিক্ষেপ করতে পারবেন।
- জামরাতের যে কোনো এক ফ্লোরে লিফট অথবা এস্কেলেটরে উঠে এরপর পায়ে হেঁটে বড় জামরাহর কাছে আসুন। আপনি যেহেতু মিনার খাইফ মসজিদের দিক থেকে জামরাতে ঢুকেছেন সেহেতু পথে আপনি প্রথমে ছোট জামরাহ (জামরাতুল সুগরা) ও তারপর মধ্যম জামরাহ (জামরাতুল উস্তা) অতিক্রম করবেন এবং অতঃপর সবশেষে পৌঁছাবেন বড় জামরাহর (জামরাতুল ‘আকাবাহর) কাছে। সোজাসুজি বড় জামরাহর দিকে কংকর মারতে না গিয়ে চারদিকে খানিকটা ঘোরা ফেরা করে ভিড় কম এমন একটি জায়গা খুঁজে বের করুন। বড় জামরার কাছে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তালবিয়াহ পাঠ বন্ধ করে দেবেন। তালবিয়াহ পাঠ এখানেই শেষ।
- যদি সম্ভব হয় জামরাকে সামনে রেখে কা‘বাকে বামে ও মিনাকে ডানে রেখে অথবা যে কোনোভাবে সুবিধামত দাঁড়িয়ে ডান হাত উচু করে আলাদা আলাদাভাবে ৭টি কংকর একে একে নিক্ষেপ করুন এবং প্রতিবার নিক্ষেপের শুরুতে বলুন: اَللهُ أَكْبَرُ ‘‘আল্লাহু আকবার’’
‘‘আল্লাহ মহান’’।
- জামরার হাউজ বা বেসিনে বুক লাগিয়ে অথবা ২-৩ মিটার দূরত্ব থেকে জামরায় রমি করুন। কংকরগুলো যেন জামরার দেওয়ালে আঘাত করে অথবা জামরার বেসিনের মধ্যে পড়ে সেটা নিশ্চিত করুন। যদি কোনো কংকর বেসিনের মধ্যে না পড়ে তবে তার পরিবর্তে আবার একটি কংকর নিক্ষেপ করুন। সে কারণে সঙ্গে অতিরিক্ত কংকর নিয়ে নেবেন। কংকর যদি জামরার দেওয়ালে লেগে বা বেসিনের মধ্য থেকে ছিটকে বাইরে পরে যায় তাতে সমস্যা নেই। কংকর আংগুল দিয়ে যে কোনভাবে ধরে নিক্ষেপ করা যাবে। এজন্য নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। নিজের কংকর নিক্ষেপ হয়ে গেলে ঠিক একই নিয়মে অন্যের কংকর নিক্ষেপ করতে পারেন। খুশু-খুজুর সাথে কংকর নিক্ষেপ করুন।
- বড় জামরাহে কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব।
- কংকর নিক্ষেপ শেষে তাকবীরে তাশরিক পড়া শুরু করুন এবং ১৩ যিলহজ আসরের সালাত পর্যন্ত চলবে এ তাকবীর। প্রতি ফরয সালাতের পর উচ্চস্বরে এ তাকবীর পড়ুন।
اَلله أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، لاَ إِلهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ
‘‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ’’।
‘‘আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য’’।
- রমি করা শেষে এখানে দাঁড়িয়ে দো‘আ করার কোনো নিয়ম হাদীসে পাওয়া যায় না। জামরাহ থেকে বের হয়ে এস্কেলেটর বা লিফট দিয়ে মক্কার দিকে নেমে পড়ুন। এবার হাদী বা পশু জবাই এর জন্য মু‘আইসম বা অন্য কোনো স্থান যেখানে আপনি আগে থেকেই নির্ধারণ করেছেন সেখানে চলে যাবেন।
আর যদি ব্যাংকে টাকা দিয়ে থাকেন, তাহলে আর আপনার কোনো করণীয় নেই। আপনি মাথা মুণ্ডিয়ে কিংবা চুল ছোট করে হালাল হয়ে যাবেন।
[1] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৯৪৫
[2] আবু দাউদ-১৬১২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪৮
[3] আবু দাউদ, দারেমী
[4] সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ৩০১৩
[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৯০
[2] আবু দাউদ-১৬১২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪৮
[3] আবু দাউদ, দারেমী
[4] সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ৩০১৩
[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৯০