লগইন করুন
আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, সোমবার দিবস ফজর ওয়াক্তে আবূ বাকর (রাঃ)-এর ইমামতে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) যখন সালাতরত ছিলেন এমন সময় নাবী কারীম (ﷺ) আয়িশা (রাঃ)-এর ঘরের পর্দা সরিয়ে সালাতরত সাহাবীগণ (রাঃ)-এর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। অতঃপর মৃদু হাসলেন। এদিকে আবূ বাকর (রাঃ) নিজ পায়ের পিছনে ভর দিয়ে পিছনে দিকে সরে গেলেন এবং কাতারে সামিল হলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সালাতে শরীক হওয়ার জন্য ইচ্ছা করছেন। আনাস (রাঃ) আরও বর্ণনা করেছেন যে, (হঠাৎ নাবী কারীম (ﷺ) সম্মুখ ভাগে প্রকাশিত হওয়ায়) সালাতরতগণ এতই আনন্দিত হয়েছিলেন যে, সালাতের মধ্যেই একটি পরীক্ষায় নিপতিত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল (অর্থাৎ নাবী কারীম (ﷺ)-কে তাঁর শারীরিক অবস্থাদি জিজ্ঞাসার জন্য সালাত ভঙ্গ করে দেয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাতের ইশারায় সালাত সম্পূর্ণ করে নিতে বলেন এবং ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে পর্দা নামিয়ে ফেলেন।[1]
এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোন ওয়াক্ত সালাতের জামাতে শরীক হতে পারেন নি। সকাল গড়িয়ে যখন চাশতের সময় হল তখন নাবী কারীম (ﷺ) তাঁর কন্যা ফাত্বিমাহ (রাঃ)-কে ডেকে নিয়ে তাঁর কানে কানে কিছু কথা বললেন। পিতার কথা শুনে কন্যা কাঁদতে লাগলেন। এরপর তিনি আবারও কন্যার কানে কানে কিছু কথা বললেন, পিতার কথায় কন্যা এবার হাসতে লাগলেন। আয়িশা (রাঃ)-এর বর্ণনা আছে যে, পরে আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ফাত্বিমাহ (রাঃ) বললেন যে, নাবী কারীম (ﷺ) আমাকে প্রথমবার কানে কানে বললেন যে, এ অসুখেই তাঁর ওফাত প্রাপ্তি ঘটবে। এ জন্যেই আমি কাঁদলাম। দ্বিতীয়বার তিনি আমাকে কানে কানে বললেন যে, নাবী কারীম (ﷺ)-এর পরিবারবর্গের মধ্য থেকে সর্বপ্রথম আমি তাঁর অনুসরণ করব। এ কারণে আমি হাসলাম।[2]
অধিকন্তু নাবী কারীম (ﷺ) ফাত্বিমাহ (রাঃ)-কে এ শুভ সংবাদও প্রদান করেন যে, তুমি হবে মহিলা জগতের নেত্রী।[3]
ওই সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে কষ্টকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন তা দেখে ফাত্বিমাহ (রাঃ) কোন চিন্তা ভাবন না করেই চিৎকার করে উঠলেন ‘হায় আব্বাজানের কষ্ট! নাবী কারীম (ﷺ) বললেন, আজকের পরে তোমার আববার আর কোন কষ্ট নেই।[4]
নাবী কারীম (ﷺ) হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-কে ডেকে নিয়ে চুম্বন করলেন এবং তাঁদের সম্পর্কে ভাল উপদেশ দিলেন। পবিত্র বিবিগণকে আহবান জানালেন এবং ওযায ও নসীহত করলেন।
এদিকে প্রত্যেক মুহূর্তে রোগ যন্ত্রণা বৃদ্ধি পেয়ে চলছিল এবং সে বিষের প্রতিক্রিয়াও প্রকাশ পেতে আরম্ভ করেছিল যা তাঁকে খায়বারে খাওয়ানো হয়েছিল। সে সময় তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে সম্বোধন করে বললেন,
(يَا عَائِشَةُ، مَا أَزَالُ أَجِدُ أَلَمَ الطَّعَامِ الَّذِيْ أَكَلْتُ بِخَيْبَرَ، فَهٰذَا أَوَانٌ وَجَدْتُ اِنْقِطَاعَ أبْهَرِيْ مِنْ ذٰلِكَ السَّمِّ)
‘হে আয়িশা! খায়বারে যে খাদ্য আমি খেয়েছিলাম তার যন্ত্রণা এখন আমি সামনে উপলব্ধি করছি। এ মুহূর্তে আমি উপলব্ধি করছি যে, এ বিষের প্রভাবে আমার শিরা উপশিরা সমূহের জীবন কর্তিত হচ্ছে।[5]
তখন তাঁর চেহারার উপর চাদর ফেলে দেয়া হল। যখন তাঁর পেরেশানী দূর হলো তখন তার চেহারা মুবারক থেকে তা সরিয়ে নিলেন। তারপর তিনি বললেন, এরূপই হয়। এটি ছিল তাঁর সর্বশেষ কথা ও মানুষের জন্য অসীয়ত : (তিনি বললেন), (لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الْيَهُوْدِ وَالَّنصَارٰى، اِتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ـ يَحْذِرُ مَا صَنَعُوْا ـ لَا يَبْقِيَنَّ دِيْنَانِ بِأَرْضِ الْعَرَبِ) আল্লাহর অভিসম্পাত ইয়াহূদ ও নাসারাদের প্রতি। তারা তাদের নাবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করেছে। তারা যা তৈরি করেছে। তাত্থেকে লোকেরা যেন সতর্কতা অবলম্বন করে। আরব ভূখন্ডে আর কখনো এ দু’টি ধর্ম অবশিষ্ট থাকবে না।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবীগণ (রাঃ)-কে উপদেশ প্রদান করে বললেন,(الصَّلَاةُ، الصَّلَاةُ، وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ)
অর্থ : সালাত, সালাত এবং তোমাদের অধীনস্থ (অর্থাৎ দাসদাসী)! এ শব্দগুলো নাবী কারীম (ﷺ) বারবার পুনরাবৃত্তি করেন।[6]
[2] বুখারী ২য় খন্ড ৬৩৮ পৃঃ।
[3] কতকগুলো বর্ণনা সূত্রে জানা যায় যে, কথাবার্তা এবং শুভ সংবাদ দেওয়ার এ ঘটনা পবিত্র জীবনের শেষ দিনের নয় বরং শেষ সপ্তাহের মধ্যে ঘটেছিল। দ্র: রহামাতুল্লিল আলামীন ১ম খন্ড ২৮২ পৃঃ।
[4] সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৬৪১ পৃঃ।
[5] সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৬৩৭ পৃঃ।
[6] সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৬৩৭ পৃঃ।