আর-রাহীকুল মাখতূম তাবুক যুদ্ধ - নবম হিজরীর রজব মাসে (غـــزوة تبـــوك في رجب سنة ٩هـ) আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ)
আবূ বাকর (রাঃ)-এর হজ্জ পালন (حَجُّ أَبِيْ بَكْرٍ ):

নবম হিজরীর হজ্জ (আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর নেতৃত্বে) এ সালের (৯ম হিজরী) যুল ক্বাদাহ কিংবা যুল হিজ্জাহ মাসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মানাসিকে হজ্জ (হজ্জের বিধি বিধান) কায়েম করার উদ্দেশ্যে আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-কে আমিরুল হজ্জ (হজ্জযাত্রী দলের নেতা) হিসেবে প্রেরণ করেন। এরপর সূরাহ বারাআতের (তাওবার) প্রথমাংশ অবতীর্ণ হয় যাতে মুশরিকদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিনামা সমতার ভিত্তিতে শেষ করে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তাঁর পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে ঘোষণা প্রদানের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আলী (রাঃ)-কে প্রেরণ করেন। যেহেতু রক্ত এবং সম্পদ সংশ্লিষ্ট অঙ্গীকার বা চুক্তিনামার প্রশ্নে এটাই ছিল আরবের নিয়ম, সেহেতু এমনটি করতে হয় (সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজেই ঘোষণা করবে কিংবা পরিবারের কোন সদস্যের মাধ্যমে তা করানো হবে। পরিবার বহির্ভূত কোন ব্যক্তির মাধ্যমে প্রদত্ত ঘোষণা স্বীকৃত হতো না।) আবূ বাকর (রাঃ)-এর সঙ্গে আলী (রাঃ)-এর সাক্ষাত হয় আরয অথবা জাজনান নামক উপত্যকায়। আবূ বাকর জিজ্ঞেস করলেন নির্দেশদাতা, না নির্দেশ প্রাপ্ত? আলী (রাঃ) বললেন, না, বরং নির্দেশ প্রাপ্ত।

অতঃপর দু’ জনই সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। আবূ বাকর (রাঃ) সকল লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে হজ্জ পালন করেন। ১০ই যুল হিজ্জাহ কুরবানী দিবসে আলী বিন আবূ ত্বালিব (রাঃ) জামরার (কংকর নিক্ষেপের স্থান) নিকট দাঁড়িয়ে সমবেত জনতার মাঝে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশিত বিষয়ে ঘোষণা প্রদান করেন, অর্থাৎ অঙ্গীকারকারীগণের সকল অঙ্গীকারের বিলুপ্তি ঘোষণা প্রদান করেন এবং এ সকল বিষয় চূড়ান্ত করার জন্য চার মাস মেয়াদের কথা বলা হয়। যাদের সঙ্গে কোন চুক্তি ছিল না তাদেরকেও চার মাসের সময় দেয়া হয়। তবে যে মুশরিকগণ মুসলিমগণের সঙ্গে অঙ্গীকার পালনে কোন প্রকার ত্রুটি করে নি, কিংবা মুসলিমগণের বিরুদ্ধে অন্য কাউকেই সাহায্য প্রদান করে নি, তাদের অঙ্গীকার নামা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত বলবত রাখা হয়।

আবূ বাকর (রাঃ) একদল সাহাবায়ে কেরামের মাধ্যমে ঘোষণা প্রদান করেন যে, আগামীতে কোন মুশরিক খানায়ে কা‘বাহর হজ্জ করতে পারবে না এবং কোন উলঙ্গ ব্যক্তি কা‘বাহ ঘর তাওয়াফ করতে পারবে না।

এ ঘোষণা ছিল মূর্তিপূজার জন্য শেষ অশনি সংকেত অর্থাৎ এর পর থেকে মূর্তি পূজার আর কোন সুযোগই রইল না।[1]

[1] এ হজ্জের বিস্তারিত বিবরণের জন্য দ্রষ্টব্য: সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ২২০ ও ৪৫১ পৃঃ, ২য় খন্ড ৬২৬ ও ৬৭১ পৃঃ. যাদুল মা‘আদ ৩য় খন্ড ২৫ ও ২৬ পৃঃ, ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ৫৪৩-৫৪৬ পৃঃ, এবং সূরাহ বারাআতের প্রথমাংশের তফসীর।