আর-রাহীকুল মাখতূম তাবুক যুদ্ধ - নবম হিজরীর রজব মাসে (غـــزوة تبـــوك في رجب سنة ٩هـ) আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ)
যুদ্ধের কারণ (سَبَبُ الْغَزْوَةِ):

মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ ছিল সত্য মিথ্যা এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্যকারী যুদ্ধ। এ যুদ্ধের পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর রিসালাত সম্পর্কে আরববাসীগণের মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কিংবা সন্দেহের আর কোন অবকাশই রইল না। এ কারণে, পরিস্থিতির মোড় সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে গেল। এবং মানুষ আল্লাহর দ্বীনে দলে দলে প্রবিষ্ট হতে থাকল। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ ‘প্রতিনিধি প্রেরণ’ অধ্যায়ে উপস্থাপিত হবে এবং ‘বিদায় হজ্জ’ সম্পর্কিত আলোচনায়ও এ সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করা সম্ভব হবে। যাহোক, আলোচ্য সময়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলতে আর তেমন কিছুই ছিল না। ফলে মুসলিমগণ শরীয়তের শিক্ষা বিস্তার এবং ইসলামের প্রচার প্রসারে একনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ লাভ করেন।

ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এমনি এক পর্যায়ে মদীনার উপর এমন এক শক্তির দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হচ্ছিল যা কোন কারণ ব্যতিরেকেই মুসলিমগণকে এখানে সেখানে ত্যক্ত বিরক্ত করে চলছিল। ইতিহাসে এরা রোমক বা রোমীয় নামে পরিচিত। তদানীন্তন পৃথিবীতে এরা ছিল সর্বাধিক সৈন্য সম্পদে সমৃদ্ধ। ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, এ বিরক্তিকর কাজ আরম্ভ করে শোরাহবীল বিন ‘আমর গাসসানী নাবী কারীম (ﷺ)-এর দূত হারিস বিন উমাইর আযদীকে (রাঃ) হত্যা করার মাধ্যমে। তাছাড়া এ হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যায়দ বিন হারিসাহ (রাঃ)-এর অধিনায়কত্বে যে সৈন্যদল প্রেরণ করেছিলেন এবং যাঁরা মুতাহ নামক স্থানে রোমক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন সে কথাও ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু এ সৈন্যদল সে আত্মগর্বী অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম হন নি। অবশ্য এর ফলে দূরের ও নিকটের আরব অধিবাসীদের উপর মুসলিমগণের প্রভাব প্রতিপত্তির একটি অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি হয়ে যায়।

বস্তুত আরব গোত্রসমূহের উপর মুসলিমগণের প্রভাব প্রতিফলিত হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে সৃষ্ট সচেতনতা এবং রোমকদের নাগপাশ থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য সৃষ্ট সংকল্পের ব্যাপারটিকে উপেক্ষা করা তাদের পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভব ছিল না। এ ব্যাপারে রোমকদলে যে ভয় ছিল তা ক্রমে ক্রমে সীমান্তের দিকে সম্প্রসারিত হচ্ছিল। বিশেষ করে আরব ভূখন্ডের সীমান্তবর্তী শাম রাজ্যের জন্য তারা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে শক্তি সঞ্চয়ের পূর্বেই ইসলামী শক্তিকে সম্পূর্ণরূপে পিষ্ট করে দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করলেন রোমক সম্রাট যাতে রোম সাম্রাজ্যের সংলগ্ন আরব এলাকা থেকে ভবিষ্যতে কোন ফেতনা কিংবা হাঙ্গামার সম্ভাবনা না থাকে।

উপরোক্ত কারণসমূহের প্রেক্ষাপটে মুতাহ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর একটি বছর পূর্ণ হতে না হতেই রোম সম্রাট রোম সাম্রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্য থেকে এবং অধীনস্থ আরব গোত্রসমূহ অর্থাৎ গাসসান পরিবার ও অন্যান্য বিভিন্ন গোত্র থেকে সৈন্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিল এবং এক রক্তক্ষয়ী ও চূড়ান্ত ফয়সালাকারী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকল।