লগইন করুন
সালামাহ বিন আকওয়া’ (রাঃ) বলেছেন যে, নাবী কারীম (ﷺ)-এর সঙ্গে একত্রে খায়বার অভিমুখে পথ চলতে থাকলাম। রাতের বেলা আমরা চলছিলাম। এক ব্যক্তি ‘আমিরকে বললেন, ‘হে ‘আমির! তোমার কিছু অসাধারণ কথা কাহিনী আমাদের শুনাচ্ছ না কেন? ‘আমির ছিলেন একজন কবি। এ কথা শুনে তিনি বাহন থেকে অবতরণ করলেন এবং নিজ সম্প্রদায়ের প্রশংসা সম্পর্কে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। কবিতার চরণগুলো ছিল নিম্নরূপ :
اللهم لولا أنت ما اهتديـنا ** ولا تَصدَّقْنا ولا صَلَّيـنـا
فاغـفر فِدَاءً لك ما اقْتَفَيْنا ** وَثبِّت الأقدام إن لاقينـا
وألْـقِينْ سكـينة عــلينا ** إنا إذا صِــيحَ بنا أبينــا
وبالصياح عَوَّلُوا عــلينا **
অর্থ : হে আল্লাহ! যদি তুমি অনুগ্রহ না করতে তাহলে আমরা হিদায়াত পেতাম না, সদকাহ করতাম না, সালাত আদায় করতাম না, আমরা তোমার নিকট উৎসর্গকৃত হলাম, তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও। যতক্ষণ আমরা তাকওয়া অবলম্বন করি এবং যদি যুদ্ধ করি তখন আমাদের কদম মযবুত করে রেখ এবং আমাদের উপর শান্তি বর্ষণ কর। যখন আমাদের ভয় প্রদর্শন করা হয় তখন যেন আমরা অটল হয়ে যাই এবং চ্যালেঞ্জকালীন অবস্থায় আমাদের প্রতি লোকেরা আস্থা রেখেছেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ কবিতা আবৃত্তিকারী কে?’
লোকেরা বললেন, ‘‘আমির বিন আকওয়া।’
নাবী কারীম বললেন, ‘আল্লাহ তার উপর রহম করুন।’
সম্প্রদায়ের একজন বললেন, ‘এখন তো তাঁর শাহাদত কার্যকর হয়ে গেল। আপনি তাঁর অস্তিত্বের মাধ্যমে আমাদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ কেন দিলেন না।[1]
সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) জানতেন যে যুদ্ধের সময় রাসূলে কারীম (ﷺ) কারো জন্য বিশেষভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তার অর্থই ছিল তাঁর শহীদ হওয়ার ব্যাপারে সুনিশ্চিত হওয়া।[2] খায়বার যুদ্ধে আমেরের ব্যাপারে এ সত্যটি প্রমাণিত হয়েছিল। এ জন্যই সাহাবীগণ আল্লাহর নাবী (ﷺ)-এর দরবারে আরয করলেন যে কেন তাঁর দীর্ঘায়ুর জন্য প্রার্থনা করা হল না যাতে আমরা তাঁর অস্থিত্বের দ্বারা ভবিষ্যতে আরও উপকৃত হতে পারতাম।
খায়বারের সন্নিকটে সাহাবা নামক উপত্যকায় নাবী (ﷺ) আসরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর সামান পত্র চাইলেন। কিন্তু শুধু আনা হল ছাতু এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশে তা মাখানো হল। নাবী (ﷺ) এবং সাহাবাবৃন্দ (রাযি.) সে খাবার খেলেন। এরপর নাবী কারীম (ﷺ) মাগরিব সালাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। অবশ্য সালাতের প্রস্তুতি হিসেবে শুধু কুলি করলেন। সাহাবীগণও (রাঃ) কুলি করলেন। অতঃপর নতুনভাবে অযু না করে সালাত আদায় করলেন।[3] পূর্বের অজুকেই যথেষ্ট মনে করলেন। অতঃপর এশা ওয়াক্তের সালাতও আদায় করলেন।[4]
অগ্রযাত্রার এক পর্যায়ে মুসলিম বাহিনী খায়বারের এত নিকটে গিয়ে উপস্থিত হলেন যে, সেখান থেকে শহর পরিস্কারভাবে দেখতে পাওয়া গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাহিনীকে থেমে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করায় তারা থেমে গেলেন। অতঃপর তিনি এ পর্যায়ে প্রার্থনা করলেন,
اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظْلَلْنَ ، وَرَبَّ الأَرَضِينِ السَّبْعِ وَمَا أَقْلَلْنَ ، وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضْلَلْنَ ، وَرَبَّ الرِّيَاحِ وَمَا ذَرَيْنَ ، فَإِنَّا نَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذِهِ الْقَرْيَةِ وَخَيْرَ أَهْلِهَا ، وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ أَهْلِهَا وَشَرِّ مَا فِيهَا، اقدموا بسم الله
অর্থঃ হে আল্লাহ্! সপ্ত আকাশ এবং যার উপর এর ছায়া রয়েছে তাদের প্রভু এবং সপ্ত জমিন ও যাদের সে উঠিয়ে রয়েছে তাদের প্রভু এবং শয়তানসমূহ এবং যাদেরকে তারা ভ্রষ্ট করেছে তাদের প্রতিপালক আমরা আপনার নিকট এ বসতির মঙ্গল, এর বাসিন্দাদের মঙ্গল এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তার মঙ্গল প্রার্থনা করছি। এ বসতির অনিষ্টতা, এখানে বসবাসকারীদের অনিষ্টতা এবং এখানে যা কিছু আছে তার অনিষ্টতা হতে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (এরপর বললেন) চল, আল্লাহ্র নামে সামনে অগ্রসর হও।[5]
[2] সহীহুল মুসলিম ২য় খন্ড ১১৫ পৃঃ।
[3] সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৬০৩ পৃঃ।
[4] মাগাযী আলওয়াকেদ্দী, খায়বার যুদ্ধ ১১২ পৃঃ।
[5] ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ৩২২ পৃঃ