লগইন করুন
নাবী কারীম (ﷺ) পারস্য সম্রাট কিসরার (খসরু) নিকট একটি পত্র প্রেরণ করেন। এ প্রত্রের বিষয়বস্তু ছিল নিম্নরূপ :
(بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ . مِنْ مُحَمَّدٍ رَّسُوْلِ اللهِ إِلٰى كِسْرٰى عَظِيْمِ فَـارِسٍ، سَـلَامٌ عَلٰى مَنْ اِتَّبَعَ الْهُدٰي، وَآمَنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ، وَشَهِدَ أَنَّ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، وَأَدْعُوْكَ بِدِعَايَةِ اللهِ، فَإِنِّيْ أَنَا رَسُوْلُ اللهِ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً، لِيُنْذِرَ مَنْ كَانَ حَيًّا وَيَحِقُّ الْقَوْلُ عَلٰى الْكَافِرِيْنَ، فَأََسْلِمْ تَسْلَمْ، فَإِنْ أَبِيْتَ فَإِنَّ إِثْمَ الْمَجُوْسِ عَلَيْكَ).
বিসমিল্লাহির রমানির রাহীম
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে পারস্য সম্রাট কিসরার প্রতি।
সে ব্যক্তির উপর সালাম যে হেদায়াতের অনুসরণ করবে, আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ উপাসনার যোগ্য নেই। আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আপনাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান করছি। কারণ, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতির জন্য প্রেরিত, যাতে পাপাচারের খারাপ পরিণতি সম্পর্কে জীবিতদের সতর্ক করে দেয়া যায় এবং কাফিরদের নিকট সত্য প্রকাশিত হয় (অর্থাৎ দলিল প্রমাণাদি পুরোপুরি কার্যকর থাকে) অতঃপর তুমি ইসলাম গ্রহণ কর তাহলে নিরাপদে থাকবে। আর যদি তা অস্বীকার কর তাহলে তোমার উপর অগ্নি পূজকদের পাপও বর্তিবে।
এ পত্র বহনের দূত হিসেবে নাবী কারীম (ﷺ) আব্দুল্লাহ বিন হুযাফাহ সাহমীকে মনোনীত করেন। তিনি এ পত্রখানা বাহরাইনের প্রধানের নিকট সমর্পণ করেন। কিন্তু এ কথাটা জানা নেই যে, বাহরাইনের শাসনকর্তা এ পত্রখানা তার নিজস্ব লোক মারফত কিসরার নিকট পাঠিয়েছিলেন, না আব্দুল্লাহ বিন হুযাফা সাহমীকেই প্রেরণ করেছিলেন। যাহোক, যখন এ পত্রখানা কিসরাকে পড়ে শোনানো হয় সে তা ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে দাম্ভিকতার সঙ্গে বলল, ‘আমার প্রজাদের অন্তর্ভুক্ত একজন নিকৃষ্ট দাস তার নিজ নাম আমার নামের পূর্বে লিখেছে।’
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কিসরার এ ঔদ্ধত্যের কথা অবগত হলেন তখন বললেন, ‘আল্লাহ যেন তার সাম্রাজ্যকে ছিন্ন ভিন্ন করে বিনষ্ট করে ফেলেন।’ এবং যা তিনি বললেন বাস্তবক্ষেত্রে তাই কার্যকর হয়ে গেল।
অতঃপর কিসরা তার ইয়ামানের গভর্ণর বাজানকে এ বলে লিখল যে, ‘দুজন কর্মঠ এবং শক্তিশালী লোক পাঠিয়ে হিজাযের সেই লোককে আমার দরবারে হাজির কর।’ কিসরার নিদের্শানুযায়ী বাজান দু’ ব্যক্তিকে মনোনীত করল এবং তাদের হতে একটি পত্র রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর নিকট প্রেরণ করল। পত্রে রাসূলে কারীম (ﷺ)-কে কিসরা প্রাসাদে উপস্থিত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
যখন তারা মদীনা গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সামনে উপস্থিত হল তখন তাদের একজন বলল, ‘সম্রাট কিসরা ইয়ামানের গভর্নর বাজানের নিকট একটি পত্রের মাধ্যমে নির্দেশ প্রদান করেছেন একজন লোক পাঠিয়ে আপনাকে কিসরা প্রাসাদে হাজির করার জন্য। বাজান প্রধান সে নির্দেশ পালনার্থে আপনার নিকট আমাদের প্রেরণ করেছেন। অতএব, আপনি আমাদের কিসরা প্রাসাদে চলুন। সঙ্গে সঙ্গে উভয়েই ধমকের সুরে কথাবার্তাও বলল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘আগামী কাল সাক্ষাত কর।’
এদিকে মদীনায় যখন এ চিত্তাকর্ষক ঘটনা সংঘটিত হচ্ছিল তখন কিসরা প্রাসাদে খসরু পারভেজের পরিবারে তার বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহের অগ্নিশিখা প্রচন্ডবেগে প্রজ্জ্বলিত হচ্ছিল। এর ফলশ্রুতিতে কায়সারের সৈন্য দলের হাতে পারস্য সৈন্যদের পর পর পরাজয়ের পর খসরুর ছেলে শিরওয়াই পিতাকে হত্যা করে সিংহাসনে আরোহণ করে। এ ঘটনা সংঘটিত হয় ৭ম হিজরীর ১০ই জুমাদাল উলা মঙ্গলবার রাত্রে।[1] ওহীর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হন।
পরবর্তী প্রভাতে যখন পারস্য প্রতিনিধিদ্বয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরবারে উপস্থিত হল তখন তিনি তাদেরকে এ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেন। তারা বলল, ‘বুদ্ধি-সুদ্ধি কিছু আছে কি? এ আপনি কী বললেন? এ থেকে অনেক কিছু সাধারণ কথাও আমরা আপনার অপরাধগুলোর অন্তর্ভুক্ত গণনা করেছি। তবে কি আপনার এ কথা বাদশাহর নিকট লিখে পাঠাব?’
নাবী (ﷺ) বললেন, ‘হ্যাঁ, তাকে আমার এ সংবাদ জানিয়ে দাও এবং এ কথাও বলে দাও যে আমার দ্বীন ও আমার শাসন ঐ পর্যন্ত পৌঁছবে যেখানে কিসরা পৌঁছেছে, বরং তার চাইতেও অগ্রসর হয়ে ঐ জায়গায় গিয়ে থামবে যার আগে উট এবং ঘোড়ার পা যাবে না। তোমরা উভয়ে তাকে এ কথাও বলে দিবে যে, যদি সে মুসলিম হয়ে যায় তাহলে তার আয়ত্ত্বাধীনে যা কিছু সমস্তই তাকে দিয়ে দেয়া হবে এবং তাকে তোমাদের জাতির জন্য বাদশাহ করে দেয়া হবে।’
এরপর তারা দুজন মদীনা থেকে যাত্রা করে বাজানের নিকট গিয়ে পৌঁছল এবং তাকে বিস্তারিতভাবে সব কিছুই অবহিত করল। কিছু সময় পরে এ মর্মে একটি পত্র এল যে, শিরওয়াইহ আপন পিতাকে হত্যা করেছে। শিরওয়াইহ তার পত্র মাধ্যমে এ উপদেশও প্রদান করল যে, যে ব্যক্তি সম্পর্কে আমার পিতা তোমাদের পত্র লিখেছিল পুনরায় নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তাঁকে উত্তেজিত করবে না।’
এ ঘটনার ফলে বাজান এবং তার পারসীয়ান বন্ধুগণ (যারা ইয়ামানে অবস্থান করছিল) মুসলিম হয়ে গেল।[2]
[2] আল্লামা খূযরী ‘মোহযারাত ১ম খন্ড ১৪৭ পৃঃ, ফাতহুলবারী ৮ম খন্ড ১২৭-১২৮ পৃ: এবং রহমাতুল্লিল আলামীন দ্রঃ।