লগইন করুন
উহুদের অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক পরিস্থিতি মুসলিমগণের সুখ্যাতি ও শক্তি সামর্থ্যের উপর দারুণ প্রতিক্রিয়ার সূচনা করে। এতে তাঁদের মনোবলের জোয়ার ধারায় কিছুটা ভাটার সৃষ্টি হয়ে যায় এবং এর ফলে বিরুদ্ধবাদীগণের অন্তর থেকে ক্রমান্বয়ে মুসলিম ভীতি হ্রাস পেতে থাকে। এ প্রেক্ষাপটে মুসলিমগণের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমস্যাদি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হতে থাকে এবং বিভিন্ন দিক থেকে মদীনার উপর বিপদাপদ ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়ে যায়। ইহুদী, মুনাফিক্ব এবং বেদুঈনগণ প্রকাশ্য শত্রুতায় লিপ্ত হয় এবং মুসলিমগণকে অপমান করার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। তাদের এ চক্রান্ত ও শত্রুদের উদ্দেশ্য ছিল এমনভাবে ইসলামের মূলোৎপাটন করে ফেলা যাতে কোনদিনই মুসলিমগণ আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। উহুদের পর দুই মাস অতিক্রান্ত হতে না হতেই এ লক্ষে বনু আসাদ গোত্র মদীনা আক্রমণের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।
অন্যদিকে চতুর্থ হিজরীর সফর মাসে ‘আযাল এবং ক্বারাহ গোত্র এমন এক চক্রান্তমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যার ফলে ১০ জন সাহাবীকে শাহাদতের পেয়ালা পান করতে হয়। অধিকন্তু, এ সফর মাসেই বনু ‘আমির প্রধান হীন চক্রান্ত ও শঠতার মাধ্যমে ৭০ জন সাহাবী (রাযি.)-কে শহীদ করে। এ ঘটনাকে ‘বীরে মাউনাহর ঘটনা’ বলা হয়। ঐ সময়ে বনু নাজিরও প্রকাশ্যে শত্রুতা আরম্ভ করে দেয়। এমনকি ৪র্থ হিজরীর রবিউল আওয়াল মাসে তারা নাবী কারীম (ﷺ)-কে হত্যার জন্যও চেষ্টা করে। এদিকে বনু গাতফানের সাহস এতই বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় যে, চতুর্থ হিজরীর জমাদাল উলা মাসে মদীনা আক্রমণের সময়সূচি নির্ধারণ করে বসে।
মূল কথা হচ্ছে, উহুদ যুদ্ধে মুসলিমগণের যে মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছিল তারই প্রেক্ষাপটে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের একের পর এক নানা বিপদাপদের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু নাবী কারীম (ﷺ) তাঁর অসাধারণ প্রজ্ঞা প্রসূত পরিচালনার মাধ্যমে সকল প্রকার চক্রান্ত, শঠতা ও বৈরিতা অতিক্রম করে পুনরায় গৌরব ও মর্যাদার সু্উচ্চ আসনে মুসলিমগণকে প্রতিষ্ঠিত করতে পুরোপুরি সক্ষম হন। এ ব্যাপারে নাবী কারীম (ﷺ)-এর সর্ব প্রথম পদক্ষেপ ছিল হামরাউল আসাদ পর্যন্ত মুশরিকগণের পশ্চাদ্ধাবন করা। এ পদক্ষেপের ফলে নাবী কারীম (ﷺ)-এর সৈন্যদলের মর্যাদা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
কারণ, এ পদক্ষেপ এতই গুরুত্ব ও বীরত্বপূর্ণ ছিল যে, এর ফলে প্রতিপক্ষগণ, অর্থাৎ মুশরিক, মুনাফিক্ব ও ইহুদীগণ একদম স্তম্ভিত ও হতবাক হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলে কারীম (ﷺ) আরও এমন সব সামারিক পদক্ষেপ অবলম্বন করেছিলেন যা শুধু মুসলিমগণের হৃতগৌরব পুন: প্রতিষ্ঠায় সাহায্যই করে নি, বরং তার বৃদ্ধিপ্রাপ্তিতেও প্রভূত সাহায্য করেছিল। পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে এ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে।