লগইন করুন
এই হলো উহুদ যুদ্ধে জয়-পরাজয় পর্যালোচনা। ঐতিহাসিকগণ এ যুদ্ধের যথেষ্ট পর্যালোচনা করেছেন যে এ যুদ্ধে জয়লাভ হয়েছে না পরাজয় হয়েছে? এ যুদ্ধে মুশরিকরা তাদের সপক্ষে ভাল কিছু করতে পেরেছিল এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। অধিকন্তু যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ মূলত তাদের হাতেই ছিল। অন্যপক্ষ নিজেদের কর্মদোষে মুসলমানদেরই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বেশি। হ্যাঁ মুমিদিনের একটি দলের মনমানসিকতা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছিল এবং যুদ্ধের হাল কুরাইশদের পক্ষেই ছিল। তবে এমন কতক বিবেচ্য বিষয় রয়েছে যার বলে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি না যে, মুশরিকদের বিজয় হয়েছিল। যেমন আমরা বলতে পারি, মাক্কী বাহিনী মুসলমি শিবিরের দখল নিতে পারে নি এবং ব্যাপক ও কঠিন বিপদের মুহূর্তেও মাদানী বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করে মদিনায় পালিয়ে যায় নি বরং তারা অত্যন্ত বীরত্বের সাথে নেতৃত্ত্বের কেন্দ্রে একত্রিত হয়। আর ততাদের হাত এমন ভেঙ্গে পড়েনি যে, মাক্বী বাহিনী তাদেরকে পশ্চাদ্ধাবন করতে পারে এবং মদিনা বাহিনীর একজন সৈন্যও মাক্বী বাহিনীর হাতে বন্দী হয় নি। কাফিররা মুসলিমদের থেকে কোন গনীমতের মালও সংগ্রহ করতে পারেনি। মুসলিম সৈন্যবাহিনী তাদের শিবিরে অবস্থান করেছে; কিন্তু মুশরিকরা তৃতীয় দফায় যুদ্ধের জন্য সেখানে অবস্থান করেনি এমনকি জয়লাভকারী বাহিনীর যে সাধারণ নীতি আছে, তারা যুদ্ধ ময়দানে এক, দু বা তিনদিন অবস্থান করবে- মাক্কী বাহিনী তাও করেনি। বরং তারা দ্রুত প্রত্যাবর্তন করে এবং মুসলমানদের পূর্বেই তারা যুদ্ধ ময়দান পরিত্যাগ করে। পরে মুশরিক বাহিনী যথাসাধ্য চেষ্টা করেও নারী ও ধনসম্পদ লুণ্ঠনের জন্য মদিনাদে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়নি। অথচ স্পষ্ট বিজয়ের এটা অন্যতম লক্ষণ।
সবকিছু পর্যালোচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি যে, মক্কার কুরাইশদের পক্ষে বিজয় লাভ না হলেো এটা সম্ভব হয়েছিল যে, যুদ্ধের পট পরিবর্তনের পর মুসলিমদের সীমাহীন ও যথেষ্ট ক্ষতি সাধনের পরও রেহাই পেয়ে যায়। তবে এটাকে মুশরিকদের বিজয় কক্ষনোই বলা যায় না। বরং আবূ সুফইয়ানের দ্রুত পলায়ন করা ও প্রত্যাবর্তন করা থেকে এটা সহজেই অনুমান করা যায় যে, তৃতীয় দফায় যুদ্ধ করলে তার বাহিনীর নিদারুন ক্ষতি হওয়ার ব্যাপারে সে খুবই ভীত ছিল। আর বিশেষ করে গাযওয়ায়ে হামরাউল আসাদ আবূ সুফইয়ানের স্বীয় অবস্থান হতে আরো ভালোভাবে বোঝা যায়।
এরূপ অবস্থায় আমরা এ যুদ্ধকে এক দলের বিজয় ও অন্য দলের পরাজয় না বলে অমীমাংসিত যুদ্ধ বলতে পারি, যাতে উভয় দল নিজ নিজ সফলতা ও ক্ষয়-ক্ষতির অংশ লাভ করেছে। অতঃপর যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন এবং নিজেদের শিবিরকে শত্রুদের অধিকারে ছেড়ে দেয়া ছাড়াই যুদ্ধ করা হতে বিরত হয়েছে। আর অমীমাংসিত যুদ্ধ তো এটাকেই বলা হয়। এদিকে আল্লাহ তা‘আলা ইঙ্গিত করে বলেছেন :
(وَلاَ تَهِنُوْا فِيْ ابْتِغَاء الْقَوْمِ إِن تَكُوْنُوْا تَأْلَمُوْنَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُوْنَ كَمَا تَأْلَمونَ وَتَرْجُوْنَ مِنَ اللهِ مَا لاَ يَرْجُوْنَ) [النساء: 104]
এ (শত্রু) কওমের পশ্চাদ্ধাবনে দুর্বলতা দেখাবে না, কেননা যদি তোমরা কষ্ট পাও, তবে তোমাদের মত তারাও তো কষ্ট পায়, আর তোমরা আল্লাহ হতে এমন কিছু আশা কর, যা তারা আশা করে না। [আন-নিসা (৪) : ১০৪]
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষতি সাধনে ও ক্ষতি অনুভব করণে এক সেনা বাহিনীকে অন্য সেনা বাহিনীর সাথে উপমা দিয়েছেন। যার মর্মার্থ হল, দু্ই পক্ষেরই অবস্থান সমপর্যায়ের ছিল। উভয় পক্ষই এমন অবস্থায় ফিরে এসেছে যে, কেউ কারোরই উপর জয়ী হতে পারে নি।