লগইন করুন
অতঃপর এ শেষ সময়ে এমন দুটি ঘটনা সংঘটিত হয় যার দ্বারা এটা অনুমান করা মোটেই কঠিন নয় যে, ইসলামের এ বীর মুজাহিদেরা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্যে কেমন প্রস্তুত ছিলেন এবং আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করার জন্য কত আকাঙ্ক্ষিত ছিলেন।
কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, ‘আমি ঐ মুসলিমগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম যাঁরা ঘাঁটি হতে বাইরে এসেছিলেন। আমি দেখি যে, মুশরিকদের হাতে মুসলিম শহীদের নাক, কান ইত্যাদি কাটা হচ্ছে। এ দেখে আমি থমকে দাঁড়ালাম। তারপর সামনে এগিয়ে দেখি যে, একজন মুশরিক, যে ভারী বর্ম পরিহিত ছিল, শহীদদের মাঝ হতে গমন করছে এবং বলতে বলতে যাচ্ছে, ‘কাটা বকরীদের নরম হাড়ের মতো ঢেরী লেগে গেছে।’ আরো দেখি যে, একজন মুসলিম তার পথে ওঁৎ পেতে রয়েছেন। তিনিও বর্ম পরিহিত ছিলেন। আমি আরো কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে তাঁর পিছনে রয়ে গেলাম। তারপর দাঁড়িয়ে গিয়ে মুসলিম ও কাফিরটিকে চোখের দৃষ্টিতে ওজন করতে লাগলাম।
এমনিভাবে যতটুকু প্রত্যক্ষ করলাম তাতে ধারণা হল যে, মুশরিকটি দেহের বাঁধন ও সাজসরঞ্জাম উভয় দিক দিয়েই মুসলিমটির উপরে রয়েছে। এ পর্যায়ে আমি দুজনের পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে অপেক্ষা করতে লাগলাম। অবশেষে উভয়ের মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে গেল এবং মুসলিমটি মুশরিকটিকে তরবারীর এমন আঘাত করলেন যে, ওটা তার পা পর্যন্ত কেটে চলে গেল। মুশরিক দু’টুকরা হয়ে পড়ে গেল। তারপর মুসলিমটি নিজের চেহারা খুলে দিলেন এবং বললেন, ‘ভাই কা‘ব (রাঃ)! কেমন হল? আমি আবূ দুজানাহ (রাঃ)।’[1]
যুদ্ধ শেষে কিছু মুসলিম মহিলা জিহাদের ময়দানে পৌঁছেন। আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, ‘আমি ‘আয়িশাহ বিনতু আবূ বাকর (রাঃ) এবং উম্মু সুলায়েম (রাঃ)-কে দেখি যে, তাঁরা পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত কাপড় উঠিয়ে নিয়ে পিঠের উপর পানির মশক বহন করে আনছেন এবং পানি বের করে কওমের (আহতদের) মুখে দিচ্ছেন।’[2] উমার (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, ‘উহুদের দিন উম্মু সালীত্ব (রাঃ) আমাদের জন্যে মশক ভরে ভরে পানি আনছিলেন।’[3]
এ মহিলাদের মধ্যে একজন উম্মু আয়মানও (রাঃ) ছিলেন। তিনি পরাজিত মুসলিমগণকে যখন দেখলেন যে, তাঁরা মদীনায় ঢুকে পড়তে চাচ্ছেন তখন তিনি তাদের চেহারায় মাটি নিক্ষেপ করতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘তোমরা এ সূতা কাটার ফিরকী গ্রহণ কর এবং আমাদেরকে তরবারী দিয়ে দাও।’[4] এরপর তিনি দ্রুতগতি যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছেন এবং আহতদেরকে পানি পান করাতে শুরু করেন। তাঁর উপর হিববান ইবনু অরকা তীর চালিয়ে দেয়। তিনি পড়ে যান এবং তিনি বিবস্ত্র হয়ে যান, এ দেখে আল্লাহর শত্রু হো হো করে হেসে ওঠে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এটা খুব কঠিন ঠেকে এবং তিনি সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে একটি পালকবিহীন তীর দিয়ে বলেন, (اِرْمِ بِهِ) ‘এটা চালাও।’ সা‘দ (রাঃ) ওটা চালিয়ে দিলে ওটা হিব্বানের গলায় লেগে যায় এবং সে চিৎ হয়ে পড়ে যায় ও সে বিবস্ত্র হয়ে যায়। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমন হাসেন যে, তাঁর দাঁত দেখা যায় এবং তিনি বলেন,
(اِسْتِقَادَ لَهَا سَعْدٌ، أَجَابَ اللهُ دَعْوَتَهُ)
‘সা‘দ (রাঃ) উম্মু আয়মান (রাঃ)-এর বদলা নিয়ে ফেলেছে। আল্লাহ তাঁর দুআ কবুল করুন।’[5]
[2] সহীহুল বুখারী, ১ম খন্ড ৪০৩ পৃঃ, ২য় খন্ড, ৫৮১ পৃঃ।
[3] সহীহুল বুখারী, ১ম খন্ড ৪০৩ পৃঃ।
[4] সূতা কাটা আরব মহিলাদের বিশিষ্ট কাজ ছিল। এ জন্য সূতা কাটার ফিরকী আরব মহিলাদের ঐরূপ বিশিষ্ট আসবাব পত্র ছিল যেরূপ আমাদের দেশে চুড়ি। এ স্থলে উল্লেখিত বাকরীতির ভাবার্থ ঠিক ওটাই,
[5] আসসীরাতুল হালবিয়্যাহ, ২য় খন্ড ২২ পৃঃ।