লগইন করুন
উত্তর: প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিস্তারিতভাবে এর উত্তর দিতে চাই। উসীলার অর্থ হচ্ছে কোনো উদ্দেশ্যে পৌঁছার জন্যে মাধ্যম গ্রহণ করা। উসীলা দু’প্রকার।
(১) শরী‘আত সম্মত সঠিক উসীলা। তা হলো শরী‘আত সম্মত সঠিক পন্থায় লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে পৌঁছার চেষ্টা করা।
(২) শরী‘আত বহির্ভূত উসীলা:
প্রথম প্রকারের উসীলা আবার কয়েক প্রকার।
(ক) আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর মাধ্যমে উসীলা গ্রহণ করা: এটি দু’ভাবে হতে পারে।
(১) সাধারণভাবে আল্লাহর নামগুলো উল্লেখ করে দো‘আ করা। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দো‘আয় বলেছেন,
«اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ نَاصِيَتِي بِيَدِكَ مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي»
“হে আল্লাহ আমি আপনার বান্দা এবং আপনার এক বান্দা ও বান্দীর পুত্র। আপনার হাতে আমার কর্তৃত্ব, আমার প্রতি আপনার নির্দেশ প্রতিফলন যোগ্য। আমার প্রতি আপনার ফায়সালা ন্যায়নিষ্ঠ। আপনার সেই সমস্ত নামের প্রত্যেকটির উসীলায় আমি প্রার্থনা জানাচ্ছি, যেগুলো আপনি নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন অথবা তা আপনার কোনো সৃষ্টিকে জানিয়েছেন, অথবা কুরআনে তা নাযিল করেছেন, অথবা আপনার অদৃশ্য জ্ঞানে তা সংরক্ষিত করে রেখেছেন। আপনি আমার জন্য কুরআনকে হৃদয়ের উর্বরতা স্বরূপ করুন---------।[1]
এখানে আল্লাহর প্রতিটি নামের উসীলায় আল্লাহর কাছে দো‘আ করা হয়েছে।
(২) আল্লাহর নির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করে নির্দিষ্ট প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার জন্য তাঁর কাছে দো‘আ করা: যেমন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সালাতে পঠিতব্য দো‘আ শিক্ষা দেওয়ার আবেদন জানালে তিনি নিম্নের দো‘আটি শিক্ষা দিলেন,
«اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّك أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ»
“হে আল্লাহ! আমি আমার আত্মার ওপর অবিচার করেছি। আপনি ছাড়া গুনাহ ক্ষমা করার কেউ নেই। তাই আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং রহম করুন। আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াময়।”[2]
এখানে আল্লাহর দু’টি নাম। যথা: ‘গাফূর’ এবং ‘রাহীম’ এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত কামনা করা হয়েছে।
(খ) আল্লাহর গুণাবলীর মাধ্যমে উসীলা গ্রহণ করা: এটি দু’ভাবে হতে পারে। (১) এভাবে বলবে যে, হে আল্লাহ! আপনার সুন্দর নামগুলোর মাধ্যমে এবং উন্নত গুণাবলীর মাধ্যমে প্রার্থনা করছি। এরপর প্রত্যেকেই নিজ নিজ প্রয়োজন উল্লেখ করবে।
(২) নির্দিষ্ট কোনো গুণাবলীর উসীলা দিয়ে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রার্থনা করা। যেমন, হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
«اللَّهُمَّ بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ وَقُدْرَتِكَ عَلَى الْخَلْقِ أَحْيِنِي مَا عَلِمْتَ الْحَيَاةَ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا عَلِمْتَ الْوَفَاةَ خَيْرًا لِى»
“হে আল্লাহ! আপনার ইলম এবং মাখলুকের উপর আপনার ক্ষমতার উসীলা দিয়ে এ দো‘আ করছি যে, আমার জীবিত থাকা যদি আমার জন্য কল্যাণকর হয়, তাহলে আমাকে জীবিত রাখুন। আর যদি জানেন যে, আমার মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণর, তাহলে আমাকে মৃত্যু দান করুন।”[3]
এখানে ইলম ও কুদরত- এ দু’টি গুণের মাধ্যমে উসীলা দেওয়া হয়েছে। আর এটি প্রার্থনার সাথে খুবই সংগতিপূর্ণ।
(গ) আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনয়নের মাধ্যমে উসীলা দেওয়া: এভাবে বলবে যে, হে আল্লাহ! আমি আপনার ওপর এবং আপনার রাসূলের ওপর ঈমান এনেছি। এ ঈমানের উসীলায় আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তা‘আলা ঈমানের উসীলা দিয়ে দো‘আ করার নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন,
﴿إِنَّ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفِ ٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ لَأٓيَٰتٖ لِّأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩٠ ٱلَّذِينَ يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمۡ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هَٰذَا بَٰطِلٗا سُبۡحَٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ١٩١ رَبَّنَآ إِنَّكَ مَن تُدۡخِلِ ٱلنَّارَ فَقَدۡ أَخۡزَيۡتَهُۥۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ١٩٢ رَّبَّنَآ إِنَّنَا سَمِعۡنَا مُنَادِيٗا يُنَادِي لِلۡإِيمَٰنِ أَنۡ ءَامِنُواْ بِرَبِّكُمۡ فََٔامَنَّاۚ رَبَّنَا فَٱغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرۡ عَنَّا سَئَِّاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ ٱلۡأَبۡرَارِ ١٩٣﴾ [ال عمران: ١٩٠، ١٩٣]
“নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্যে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে (তারা বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করোনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদেরকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। হে আমাদের রব! নিশ্চয় তুমি যাকে জাহান্নমে নিক্ষেপ করলে তাকে অপমানিত করলে, আর যালেমদের জন্যে তো কোনো সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের রব! আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহ্বানকারীকে ঈমানের প্রতি আহ্বান করতে যে, তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আন, তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব! অতঃপর আমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা কর এবং আমাদের সকল দোষ-ত্রুটি দূর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের সাথে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯০-১৯৩]
এখানে গুনাহ মাফ, দোষ-ত্রুটি দূর করা এবং নেক লোকদের সাথে যেন মৃত্যু হয় তার জন্য ঈমানের উসীলা দিয়ে দো‘আ করা হয়েছে।
(ঘ) সৎ আমলের উসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দো‘আ করা: এখানে তিন ব্যক্তির ঘটনাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তারা রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে একটি গুহার ভিতরে আশ্রয় নিয়েছিল। উপর থেকে একটি পাথর গড়িয়ে পড়ে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেলে গুহা থেকে তাদের বের হওয়া অসম্ভব হয়ে গেল। অতঃপর তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ সৎ আমল তুলে ধরে আল্লাহর কাছে দো‘আ করেছিল। একজন পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করার উসীলা দিল, দ্বিতীয় ব্যক্তি অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার উসীলা দিল এবং তৃতীয়জন তার চাকরের বেতন পূর্ণভাবে প্রদান করার উসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দো‘আ করা আরম্ভ করল। তারা প্রত্যেকেই দো‘আয় বলেছিল, হে আল্লাহ! আমি যদি এ আমলটুকু আপনার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে আপনি আমাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। এভাবে দো‘আ করার পর পাথরটি সরে গেল এবং তারা গুহা থেকে বের হয়ে আসল।
এ ঘটনাটিতে সৎ আমলকে উসীলা ধরে দো‘আ করার কথা প্রমাণিত হয়।
(ঙ) নিজের অবস্থা আল্লাহর কাছে তুলে ধরে উসীলা দেওয়া: অর্থাৎ দো‘আকারী যে অবস্থায় রয়েছে, তা আল্লাহর কাছে তুলে ধরবে। যেমন, মূসা আলাইহিস সালাম বলেছিলেন,
﴿رَبِّ إِنِّي لِمَآ أَنزَلۡتَ إِلَيَّ مِنۡ خَيۡرٖ فَقِيرٞ﴾ [القصص: ٢٤]
“হে আমার রব! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ২৪]
যাকারিয়া আলাইহিস সালাম নিজের দুর্বলতাকে তুলে ধরে উসীলা দিয়েছেন। আল্লাহ তার কথা উল্লেখ করে বলেন,
﴿قَالَ رَبِّ إِنِّي وَهَنَ ٱلۡعَظۡمُ مِنِّي وَٱشۡتَعَلَ ٱلرَّأۡسُ شَيۡبٗا وَلَمۡ أَكُنۢ بِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِيّٗا ٤﴾ [مريم: ٤]
“তিনি বললেন, হে আমার রব! আমার অস্থি বয়স-ভারাবনত হয়েছে, বার্ধক্যে মস্তক সুশুভ্র হয়েছে, হে আমার রব আপনাকে ডেকে আমি কখনো বিফল মনোরথ হইনি।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৪]
উসীলার যে সমস্ত প্রকার উপরে বর্ণিত হয়েছে, তার সবই বৈধ।
(চ) সৎকর্মশীলদের দো‘আর উসীলা দেওয়া: সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দো‘আ চাইতেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, জুমু‘আর দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবারত অবস্থায় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, গাছপালা শুকিয়ে যাচ্ছে, পশুপাল পিপাসায় মারা যাচ্ছে। আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য দো‘আ করুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় হাত উঠালেন এবং তিনবার বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করুন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বার থেকে নামার আগেই বৃষ্টি বর্ষিত হলো এবং তাঁর দাড়ি মুবারক বেয়ে বৃষ্টির পানি ঝরতে থাকল এবং এক সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকল। পরবর্তী জুমু‘আয় সেই ব্যক্তি অথবা অন্য এক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! পানিতে সব কিছু ডুবে যাচ্ছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, আল্লাহর কাছে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার জন্য দো‘আ করুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’হাত উঠালেন এবং বললেন,أَلّلهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশে-পাশের উঁচু ভূমিতে বৃষ্টি বর্ষণ কর, আমাদের উপরে নয়’ -এ বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশের এক পাশের দিকে ইঙ্গিত করার সাথে সাথে আকাশ পরিস্কার হয়ে গেল। মানুষেরা সূর্যের আলোতে বের হয়ে আসল।[4]
আরো অনেক ক্ষেত্রে সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিশেষভাবে দো‘আ চেয়েছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বললেন যে, তাঁর উম্মতের সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবে এবং বিনা আযাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি এও বললেন যে, তারা ঐ সমস্ত লোক, যারা ঝাড়-ফুঁক করে না, চিকিৎসার জন্য লোহা গরম করে দাগ দেয় না এবং পাখি উড়িয়ে নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা করে না; বরং তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে। এ কথা শুনে উকাশা ইবন মিহসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন, আল্লাহ যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। এটাও এক প্রকার উসীলা। দো‘আ কবুল হওয়ার আশা করা যায় এমন কোনো সৎ ব্যক্তির কাছে গিয়ে তার কাছে দো‘আ চাওয়া এবং তার দো‘আর উসীলা গ্রহণ করা জায়েয আছে। কোনো মুসলিম যদি তার মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতে তার জন্য দো‘আ করে, তবে ফিরিশতাগণ আমীন বলতে থাকেন।
(২) অবৈধ উসীলা:
শরী‘আত সম্মত নয়, এমন জিনিসের মাধ্যমে উসীলা গ্রহণ করা অবৈধ। কেননা এ সমস্ত বিষয়ের মাধ্যমে উসীলা দেওয়া বিবেক এবং শরী‘আত সম্মত নয়। যেমন মৃত ব্যক্তির কাছে দো‘আ চাওয়ার মাধ্যমে উসীলা গ্রহণ করা। এধরণের উসীলা দেওয়া জায়েয নেই। কারণ, মৃত ব্যক্তির কাছে দো‘আ চাওয়া একটি জঘণ্য মুর্খতাপূর্ণ কাজ। কেননা মানুষ যখন মারা যায়, তার আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। কোনো মৃত ব্যক্তির পক্ষে কারও জন্য দো‘আ করা সম্ভব নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষেও মারা যাওয়ার পর কারও জন্য দো‘আ করা সম্ভব নয়। তাই সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাঁর কাছে এসে দো‘আ চান নি। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর আমলে যখন অনাবৃষ্টি দেখা দেয়, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আপনার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত থাকাকালে তাঁর উসীলা দিয়ে আমরা আপনার কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করতাম এবং আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি প্রদান করতেন। এখন আমরা নবীর চাচার উসীলায় আপনার কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করছি। আমাদেরকে বৃষ্টি প্রদান করুন। তারপর আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দাঁড়ালেন এবং দো‘আ করলেন। মৃতের কাছে দো‘আ চাওয়া যদি বৈধ হতো, তা হলে কোনো ক্রমেই তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাদ দিয়ে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে দো‘আ চাওয়া বৈধ মনে করতেন না। কারণ, আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দো‘আর চেয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দো‘আ কবূল হওয়া অধিক উপযোগী। মোটকথা মৃত ব্যক্তির উসীলা দিয়ে দো‘আ করা জায়েয নেই।
অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানের উসীলা দেওয়াও জায়েয নেই। কারণ, আল্লাহর কাছে তাঁর সম্মান থাকা দো‘আকারীর জন্য কোনো উপকারে আসবে না। দো‘আকারীর জন্য এমন বিষয়ের উসীলা দেওয়া উচিৎ, যা তার কাজে আসবে। সুতরাং এভাবে বলা উচিৎ যে, হে আল্লাহ! আপনার প্রতি এবং আপনার রাসূলের প্রতি আমার ঈমান আনয়নের বিনিময়ে আমাকে ক্ষমা করুন। এ জাতীয় অন্যান্য শরী‘আত সম্মত বিষয়ের উসীলা দেওয়া বৈধ।
[2] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল আজান।
[3] আবু দাউদ, অধ্যায়: কিতাবুস সুন্নাহ।
[4] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ইস্তিস্কিার সালাত।