লগইন করুন
এক মহিলার স্বামী আমার কাছে এসে বললঃ যখন আমি এই মহিলাকে বিয়ে করলাম তখন থেকেই আমাদের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি হয়। এমনকি সে আমাকে খুবই ঘৃণা করতো। আমার একটি কথাও শুনতে প্রস্তুত নয় সে। তার একটিই চাওয়া-পাওয়া যে, সে যেন আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আশ্চর্য বিষয় হল যে আমি বাড়ির বাইরে থাকলে সে খুবই আনন্দে থাকে। আর যখনই আমি বাড়িতে প্রবেশ করি, আর সে আমার চেহারা দেখে তখনই সে রাগে ফেটে পড়ে। ফলে আমি কুরআনের আয়াত মহিলার সামনে তেলাওয়াত করি এরপর সে নিস্তব্ধ হতে লাগল এবং তার মাথা ব্যথা শুরু হল কিন্তু স্বাভাবিকভাবে সে বেহুশ হয়নি। অতঃপর আমি কুরআনের এক ক্যাসেট রেকর্ড করে তাকে দিলাম এবং বললাম যে, এই সূরা পয়তাল্লিশ দিন পর্যন্ত শুনে এরপর আমার কাছে আসবে। সেই ব্যক্তি বলল যে, পয়তাল্লিশ দিন পর যখন তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই আমার কাছে আসতে চাইল তখন তার স্ত্রী বেহুশ হয়ে গেল এবং তার কণ্ঠে জ্বিন বলতে লাগলঃ আমি তোমাকে সব কিছু বলব কিন্তু শর্ত হল যে, তুমি আমাকে সেই আলেমের কাছে নিয়ে যাবে না। সে বলল, আমাকে যাদুর মাধ্যমে এই মহিলার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। যদি তুমি আমার সত্যতা যাচাই করতে চাও তাহলে শয়ন কক্ষে বালিশের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, সেটা আমার কাছে নিয়ে আস। আমি সেই বালিশ উঠিয়ে নিয়ে আসলাম এবং সে বালিশটি খুলতে বলল। যখন আমি বালিশটি খুললাম তখন আমি দেখতে পাই যে, তাতে কাগজের কতক টুকরা যাতে কিছু লেখা রয়েছে। অতঃপর জ্বিন বলল যে, এই কাগজগুলো জ্বালিয়ে দাও আমি আর কখনও আসব না; কিন্তু একটি শর্ত হল, আমি এই মহিলার সামনে প্রকাশ লাভ করে তার সাথে মুসাফাহা করব। তখন সেই ব্যক্তি বলল অসুবিধা নেই।
এরপর তার স্ত্রী বেহুশী থেকে জাগ্রত হয়ে তার হাত সম্মুখে বাড়িয়ে দিল যেন সে কারো সাথে মোসাফাহা করছে। আমি এই সব ঘটনা শোনার পর বললাম তুমি এক বড় ভুল করেছ। তোমার স্ত্রীকে ওর সাথে মোসাফাহার জন্যে অনুমতি দিয়েছ; যা না জায়েয এবং হারাম। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নারীদেরকে পর পুরুষের সাথে মোসাফাহা করা নিষেধ করেছেন।
অতঃপর এক সপ্তাহ পর সেই মহিলা পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়ল। আর সেই ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসল। যখনই আমি আউযুবিল্লাহ পড়লাম মহিলাটি বেহুশ হয়ে পড়ে গেল তারপর (তার প্রতি আসর করা) জিনের সাথে কথোপকথন আরম্ভ হল। আমি বললাম হে মিথ্যাবাদী তুমি ওয়াদা করেছিলে আর দ্বিতীয়বার আসবে না; এরপরও কেন আসলে? জ্বিন বলল আমি সব কিছুই বলব আপনি আমাকে মারবেন না। আমি বললাম ঠিক আছে বল। জ্বিন বলতে লাগল, আমি তাকে মিথ্যা বলেছিলাম যে, আমি আর আসব না। সেই বালিশে আমিই কাগজ রেখেছিলাম যাতে তার বিশ্বাস হয়। আমি বললাম তুমি মহিলার সাথে প্রতারণা করেছ। জ্বিন বলল শেষ পর্যন্ত আমি কি করতে পারি। যাদুর দ্বারা আমাকে এই মহিলার ভিতরে বন্দি করে দেয়া হয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কি মুসলমান?
সেই উত্তর দিল যে, হ্যাঁ। মুসলমানের জন্যে জায়েয নয়, যাদুকরের স্বার্থে কাজ করা বরং এটা হারাম, মহাপাপ ও কবীরা গুনাহ। তুমি কি জান্নাতে যেতে চাও না? জ্বিন বলল হ্যাঁ আমি জান্নাতে যেতে চাই, আমি বললাম তাই যদি চাও তাহলে যাদুকরকে ত্যাগ কর এবং মুসলমানদের সাথে একীভূত হয়ে আল্লাহর ইবাদত কর। কেনানা যাদুর কাজ দুনিয়ার জন্যও অমঙ্গল আর আখেরাতে এর পরিণাম জাহান্নাম। জ্বিন বললঃ আমি কি করে ছাড়তে পারব অথচ যাদুকরের জাল থেকে বের হয়ে আসার সামর্থ আমার নেই।
আমি বললাম এ সবের কারণ তোমার পাপ। আর যদি তুমি নিষ্ঠার সাথে তাওবা কর তবে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَلَنْ يَجْعَلَ اللَّهُ لِلْكَافِرِينَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ سَبِيلًا
অর্থঃ “আল্লাহ তায়ালা কাফেরদেরকে মু'মিনদের উপর কোন সামর্থ রাখেননি।" (সূরা নিসাঃ ১৪১)
জ্বিন বললঃ আমি তাওবা করছি এবং এই মহিলা থেকে বের হয়ে যাচ্ছি এবং আর কোন সময় ফিরে আসব না। এরপর সে ওয়াদা করে বের হয়ে গেল আর ফিরে আসেনি।
সমস্ত প্রশংসার অধিকারী কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালা। আর তাকে ব্যতীত কেউ কারো কল্যাণ ও অকল্যাণ করতে পারে না । মহিলার স্বামী অনেক দিন পর আমার কাছে এসে বলল যে, তার স্ত্রী সম্পূর্ণরূপে সুস্থ।