লগইন করুন
রোমক সাম্রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের আরব গবর্ণর ফারওয়া বিন ‘আমর-এর রাজধানী ছিল মা‘আন (مَعَان)। জর্ডান, সিরিয়া ও ফিলিস্তীনের সংশ্লিষ্ট এলাকা তাঁর শাসনাধীনে ছিল। মুবারকপুরী বলেন, ৮ম হিজরীর জুমাদাল ঊলা মাসে সংঘটিত মুতার যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর অপূর্ব বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তিনি ইসলামের সত্যতার উপরে বিশ্বাসী হন এবং ইসলাম কবুল করেন। অতঃপর উপঢৌকন হিসাবে একটি সাদা খচ্চর সহ রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে একজন দূত প্রেরণ করেন।
এ খবর জানতে পেরে রোম সম্রাট তাকে ডেকে পাঠান। অতঃপর তাকে ইসলাম ত্যাগ অথবা মৃত্যু দু’টির একটা বেছে নেওয়ার এখতিয়ার দেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দানের জন্য তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। কিন্তু খাঁটি মুমিন ফারওয়া বিন ‘আমর (রাঃ) ইসলাম ত্যাগের বদলে মৃত্যুকেই বেছে নেন। অতঃপর তাঁকে যেরুযালেম নগরীর ‘আফরা’ (عَفْراء) নামক ঝর্ণার পাড়ে শূলে বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।
শূলের মঞ্চে পৌঁছে ফারওয়া (রাঃ) নিম্নোক্ত কবিতা পাঠ করেন,
أَلاَ هَلْ أَتَى سَلْمَى بِأَنَّ حَلِيلَهَا * عَلَى مَاءِ عَفْرَا فَوْقَ إحْدَى الرَّوَاحِلِ
عَلَى نَاقَةٍ لَمْ يَضْرِبِ الْفَحْلُ أُمَّهَا * مُشَّذَّبَةٌ أَطْرَافُهَا بِالْمَنَاجِلِ
‘ওহে! আমার স্ত্রী সালমা কি আসবে এমন উটে সওয়ার হয়ে, যে এখনো গর্ভবতী হয়নি? একারণে যে তার স্বামী ‘আফরা ঝর্ণার তীরে তীক্ষ্ণধার শূলের একটি কাঠের উপরে অবস্থান করছে’।
অতঃপর হত্যার উদ্দেশ্যে আগত লোকদের উদ্দেশ্যে তিনি নিম্নের কবিতাটি পড়েন,
بَلِّغْ سَرَاةَ الْمُسْلِمِينَ بِأَنَّنِي * سَلْمٌ لِرَبِّي أَعْظُمِي وَمَقَامِي
‘মুসলিম নেতাদের কাছে তোমরা খবর পৌঁছে দিয়ো যে, আমি আমার অস্থিসমূহ ও মেরুদন্ডসহ আমার প্রতিপালকের প্রতি অনুগত’।[1]
ফারওয়া বিন ‘আমর ও অন্যান্য নও মুসলিমদের বিরুদ্ধে রোমক সম্রাটের এহেন নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিবাদে এবং রোমকদের ভীত করার জন্য আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মৃত্যুর মাত্র দু’দিন পূর্বে উসামা বিন যায়েদ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে শামের তুখূম, বালক্বা, দারূম প্রভৃতি এলাকা ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট করার নির্দেশ দেন। যার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ঐ অঞ্চলের আরব ও নও মুসলিমদের সাহস দেওয়া। মদীনা থেকে বেরিয়ে তিন মাইল যেতেই রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যু আসন্ন সংবাদ পেয়ে অগ্রগমন স্থগিত হয়ে যায়। পরে আবুবকরের খেলাফতের শুরুতে তারা পুনরায় গমন করেন এবং অভিযান শেষে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসেন’।[2]
[শিক্ষণীয় : মুসলমান সবকিছু ত্যাগ করতে পারে। কিন্তু ঈমান ত্যাগ করতে পারেনা]
[2]. আর-রাহীক্ব ৪৬৩ পৃঃ; ইবনু হিশাম ২/৬৪১-৪২। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : সারিইয়া ৮৯।