লগইন করুন
ইয়ামনের প্রসিদ্ধ আশ‘আরী গোত্র মুসলমান হয়েই মদীনায় আসে। আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, يَقْدَمُ عَلَيْكُمْ غَداً أَقْوَامٌ هُمْ أَرَقُّ قُلُوباً لِلإِسْلاَمِ مِنْكُمْ ‘তোমাদের নিকট একদল লোক আসবে, যারা ইসলামের ব্যাপারে তোমাদের চাইতে নম্র হৃদয়’। অতঃপর আশ‘আরী প্রতিনিধি দল এল। যাদের মধ্যে আবু মূসা আশ‘আরীও ছিলেন। তারা মদীনায় প্রবেশ করার সময় খুশীতে কবিতা পাঠ করতে থাকেন,غَدًا نَلْقَى الْأَحِبَّةَ * مُحَمَّدًا وَحِزْبَهُ ‘কালকে আমরা বন্ধুদের সাথে মিলিত হব। মুহাম্মাদ ও তাঁর দলের সাথে’। অতঃপর তারা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসলেন এবং পরস্পর মুছাফাহা করলেন। তাদের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম মুছাফাহার রীতি চালু হয়’।[1] আবু মূসা আশ‘আরী তাদের বহু পূর্বেই ৭ম হিজরীতে মুসলমান হয়েছিলেন এবং খায়বরে গিয়ে প্রথম রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন’ (আল-ইছাবাহ, আবু মূসা আশ‘আরী ক্রমিক ৪৯০১)। তিনি অত্র প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পুনরায় আসাটা অসম্ভব নয়।
وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللهِ أَفْوَاجًا ‘এবং তুমি মানুষকে দেখছ তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে (ইসলামে) প্রবেশ করছে’ (সূরা নছর ১১০/২)-এর ব্যাখ্যায় ইকরিমা ও মুক্বাতিল বলেন, এর মধ্যে ইয়ামনী প্রতিনিধিদলের দিকে (বিশেষভাবে) ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা এদের প্রায় ৭০০ লোক মুসলমান হয়ে কেউ আযান দিতে দিতে, কেউ কুরআন পাঠ করতে করতে, কেউ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতে বলতে মদীনায় এসে উপস্থিত হয়েছিল। যাতে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) খুবই খুশী হন। কিন্তু ওমর ও আববাস (রাঃ) কাঁদতে থাকেন।[2] আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খুশী হয়ে বলেন,أَتَاكُمْ أَهْلُ الْيَمَنِ، أَضْعَفُ قُلُوْبًا وَأَرَقُّ أَفْئِدَةً، الْفِقْهُ يَمَانٍ، وَالْحِكْمَةُ يَمَانِيَةٌ ‘তোমাদের নিকট ইয়ামনবাসীরা এসে গেছে। এদের অন্তর বড়ই দুর্বল, হৃদয় খুবই নরম। বুঝশক্তি ইয়ামনীদের এবং প্রজ্ঞা ইয়ামনীদের’।[3] রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) ৭ম হিজরীতে মুসলমান হয়ে সর্বপ্রথম খায়বরে এসে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন (আল-ইছাবাহ, আবু হুরায়রা ক্রমিক ১০৬৭৪)।
উল্লেখ্য যে, খ্যাতনামা ছাহাবী আবু মূসা আশ‘আরী ছিলেন এই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। তিনি ৭ম হিজরী সনে ৫০-এর অধিক লোক নিয়ে মদীনায় আগমনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। কিন্তু তাদের নৌকা ঝড়ের কবলে পড়ে তাদেরকে নাজাশীর হাবশায় নামিয়ে দেয়। সেখানে তাঁদের সঙ্গে হযরত জা‘ফর ইবনে আবু তালেবের সাক্ষাৎ হয়। ফলে জাফরের সঙ্গে তাঁরা মদীনায় আসেন। অতঃপর সেখান থেকে খায়বরে গিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন (আল-ইছাবাহ ক্রমিক ৪৯০১)। ঐ সময় খায়বর বিজয় সবেমাত্র শেষ হয়েছিল এবং রাসূল (ছাঃ) তখনও সেখানে অবস্থান করছিলেন।
হযরত আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাতকালে প্রতিনিধিদলের দু’জন সদস্য, যারা আমার চাচাতো ভাই ছিল, তাদের একজন বলল, আল্লাহ আপনাকে বিরাট এলাকার শাসন ক্ষমতা দান করেছেন। আমাকেও আপনি একটি এলাকার শাসনকর্তা নিযুক্ত করুন। অপর ভাইটিও অনুরূপ দাবী করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে বললেন,إِنَّا وَاللهِ لاَ نُوَلِّى عَلَى هَذَا الْعَمَلِ أَحَدًا سَأَلَهُ وَلاَ أَحَدًا حَرَصَ عَلَيْهِ، وفى رواية : ومَنْ أَرَادَهُ ‘আমরা আল্লাহর কসম, এমন কাউকে আমাদের শাসনকার্যে নিযুক্ত করি না, যে ব্যক্তি তা চেয়ে নেয় বা তার লোভ করে বা তার আকাংখা করে’।[4] আলোচ্য প্রতিনিধি দলটি সম্ভবতঃ ৯ম হিজরীতে আগমন করে। যারা পূর্বের প্রতিনিধি দলের দাওয়াতে ইসলাম কবুল করেছিলেন।
[শিক্ষণীয় : (১) দ্বীনী ভালোবাসাই হ’ল প্রকৃত ভালোবাসা। যা মানুষকে পরস্পরে নিকটতম বন্ধুতে পরিণত করে। (২) সালামের সাথে পরস্পরে মুছাফাহা করতে হবে। (৩) খুশীতে সুন্দর কবিতা এবং উত্তম দো‘আ পাঠ করা যাবে। (৪) ইসলামে নেতৃত্ব বা কোন পদ চেয়ে নেওয়া নিষিদ্ধ]
[2]. কুরতুবী, তাফসীর সূরা নছর। তিনি ‘ইবনু আববাস’ এবং তানতাভী ‘আববাস’ বলেছেন। সম্ভবত আববাসই সঠিক। কেননা তখন ইবনু আববাসের বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছরের মত (জন্ম : হিঃ পূঃ ৩, মৃঃ ৬৮ হিঃ; আল-ইছাবাহ, ইবনু আববাস ক্রমিক ৪৭৮৪)।
[3]. বুখারী হা/৪৩৯০, মুসলিম হা/৫২; মিশকাত হা/৬২৫৮; কুরতুবী হা/৬৫০৩।
[4]. বুখারী হা/৭১৪৯; মুসলিম হা/১৭৩৩; মিশকাত হা/৩৬৮৩ ‘নেতৃত্ব ও পদমর্যাদা’ অধ্যায়।