লগইন করুন
মক্কার নওমুসলিমদের মধ্যে গণীমতের বৃহদাংশ বণ্টন করে দেওয়ায় আনছারদের মধ্যে কিছুটা বিমর্ষভাব দেখা দেয়। কেউ কেউ বলে ফেলেন,لَقِيَوَاللهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَوْمَهُ ‘আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর কওমের সাথে মিশে গেছেন’। কেউ বলেন,إِذَا كَانَتْ شَدِيْدَةٌ فَنَحْنُ نُدْعَى وَيُعْطَى الْغَنِيْمَةَ غَيْرُنَا ‘যখন কঠিন সময় আসে, তখন আমাদের ডাকা হয়। আর গণীমত দেওয়া হয় অন্যদের’ (বুখারী হা/৪৩৩৭)। অন্য বর্ণনায় এসেছে,يُعْطِى قُرَيْشًا وَيَتْرُكُنَا، وَسُيُوفُنَا تَقْطُرُ مِنْ دِمَائِهِمْ ‘তিনি কুরায়েশদের দিচ্ছেন ও আমাদেরকে পরিত্যাগ করছেন। অথচ আমাদের তরবারী থেকে তাদের রক্ত টপকাচ্ছে’ (বুখারী হা/৪৩৩১)।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, খাযরাজ নেতা সা‘দ বিন ওবাদাহর মাধ্যমে এ খবর জানতে পেরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দ্রুত তাদের কাছে গমন করেন এবং সমবেত আনছারদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে হামদ ও ছানার পরে বলেন,يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ مَقَالَةٌ بَلَغَتْنِيْ عَنْكُمْ وَجِدَةٌ وَجَدْتُمُوْهَا عَلَيَّ فِيْ أَنْفُسِكُمْ ‘হে আনছারগণ! তোমাদের কিছু কথা আমার নিকট পৌঁছেছে। তোমাদের অন্তরে আমার বিরুদ্ধে কিছু অসন্তুষ্টি দানা বেঁধেছে’ (আহমাদ হা/১১৭৪৮)।يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ أَلَمْ أَجِدْكُمْ ضُلاَّلاً فَهَدَاكُمُ اللهُ بِى، وَكُنْتُمْ مُتَفَرِّقِينَ فَأَلَّفَكُمُ اللهُ بِى، وَعَالَةً فَأَغْنَاكُمُ اللهُ بِى؟ ‘হে আনছারগণ! আমি কি তোমাদের নিকটে এমন অবস্থায় আসিনি যখন তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে? অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করেন। তোমরা ছিলে বিভক্ত, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। তোমরা ছিলে অভাবগ্রস্ত, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে সচ্ছলতা দান করেন’ (বুখারী হা/৪৩৩০)।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর বর্ণনায় আরও এসেছে যে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন’? তারা বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আনছারগণ! তোমরা কি জবাব দিবে না? তারা বললেন, আমরা আর কি জবাব দেব হে আল্লাহর রাসূল! এসবই তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগ্রহ। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, দেখ তোমরা ইচ্ছা করলে একথাও বলতে পার এবং সেটা বললে তোমরা অবশ্য সত্য কথাই বলবে- সেটা এই যে,أَتَيْتَنَا مُكَذَّباً فَصَدَّقْنَاكَ وَمَخْذُولاً فَنَصَرْنَاكَ وَطَرِيداً فَآوَيْنَاكَ وَعَائِلاً فَآسَيْنَاكَ ‘আপনি আমাদের কাছে এসেছিলেন এমন সময় যখন আপনাকে মিথ্যাবাদী বলা হচ্ছিল। অতঃপর আমরা আপনাকে সত্য বলে জেনেছি। যখন আপনি ছিলেন অপদস্থ, তখন আমরা আপনাকে সাহায্য করেছি। যখন আপনি ছিলেন বিতাড়িত, তখন আমরা আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি। যখন আপনি ছিলেন অভাবগ্রস্ত, তখন আমরা আপনার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছি’।
অতঃপর তিনি বলেন,أَوَجَدْتُمْ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ فِيْ أَنْفُسِكُمْ فِيْ لُعَاعَةٍ مِنَ الدُّنْيَا تَأَلَّفْتُ بِهَا قَوْمًا لِيُسْلِمُوْا، وَوَكَلْتُكُمْ إلَى إسْلاَمِكُمْ ‘হে আনছারগণ! দুনিয়ার এক গোছা ঘাসের জন্য তোমরা মনে কষ্ট নিয়েছ, যার মাধ্যমে আমি লোকদের হৃদয়ে আকর্ষণ সৃষ্টি করতে চেয়েছি, যাতে তারা অনুগত হয়। আর তোমাদেরকে সোপর্দ করেছি তোমাদের ইসলামের নিকট (অর্থাৎ তোমাদের জন্য ইসলামই যথেষ্ট)।أَلاَ تَرْضَوْنَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ أَنْ يَذْهَبَ النّاسُ بِالشّاةِ وَالْبَعِيْرِ وَتَرْجِعُوْا بِرَسُوْلِ اللهِ إلَى رِحَالِكُمْ؟ ‘হে আনছারগণ! তোমরা কি এতে রাযী নও যে, লোকেরা বকরী ও উট নিয়ে চলে যাক, আর তোমরা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে তোমাদের কাফেলায় ফিরে যাও?أَلاَ تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النّاسُ بِالدُّنْيَا، وَتَذْهَبُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَحُوْزُوْنَهُ إِلَى بُيُوْتِكُمْ؟ ‘তোমরা কি এতে খুশী নও যে, লোকেরা দুনিয়া নিয়ে চলে যাক। আর তোমরা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে চলে যাও ও তাঁকে তোমাদের বাড়ীতে আশ্রয় দাও?’ ‘অতএব সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে রয়েছে মুহাম্মাদের জীবন, যদি হিজরত না থাকত, তাহ’লে আমি হ’তাম আনছারদের একজন। যদি লোকেরা বিভিন্ন গোত্র বেছে নেয়, তবে আমি আনছারদের গোত্রে প্রবেশ করব’।اللَّهُمَّ ارْحَمِ الْأَنْصَارَ، وَأَبْنَاءَ الْأَنْصَارِ، وَأَبْنَاءَ أَبْنَاءِ الْأَنْصَارِ ‘হে আল্লাহ! তুমি আনছারদের উপরে রহম কর। আনছারদের সন্তানদের উপর রহম কর এবং তাদের সন্তানদের সন্তানগণের উপর রহম কর’।
রাসূল (ছাঃ)-এর উক্ত হৃদয়স্পর্শী ভাষণ শুনে কাঁদতে কাঁদতে সকলের দাড়ি ভিজে গেল এবং তারা সবাই বলে উঠল,رَضِيْنَا بِرَسُوْلِ اللهِ قَسْمًا وَحَظًّا ‘আমরা সবাই আল্লাহর রাসূলের ভাগ-বণ্টনে সন্তুষ্ট’ (আহমাদ হা/১১৭৪৮ সনদ হাসান)।