লগইন করুন
মুসলিম বাহিনী খান্দামায় পৌঁছার পর ডান বাহুর সেনাপতি খালেদ বিন অলীদের সাথে তাদের মুকাবিলা হয়। তাতে ১২ জন নিহত হওয়ার পর তাদের মধ্যে পালানোর হিড়িক পড়ে যায়। কিন্তু এই সময় খালেদ বাহিনীর দু’জন শহীদ হন, যারা দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তারা হ’লেন হুবাইশ বিন খালেদ বিন রাবী‘আহ এবং কুরয বিন জাবের আল-ফিহরী। হুবাইশ ছিলেন খ্যাতনামা মহিলা উম্মে মা‘বাদের ভাই। কুরয আল-ফিহরী ছিলেন প্রথম মদীনার উপকণ্ঠে হামলাকারী। যিনি অনেকগুলি গবাদিপশু লুট করে নিয়ে আসেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বদরের কাছাকাছি সাফওয়ান উপত্যকা পর্যন্ত তাকে ধাওয়া করেও ব্যর্থ হন’।[1]
এসময় বনু বকরের সেই স্বঘোষিত মহাবীর হিমাস বিন ক্বায়েস ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌঁড়ে এসে স্ত্রীকে বলে ‘শীঘ্র দরজা বন্ধ কর’। স্ত্রী ঠাট্টা করে বলেন, কোথায় গেল তোমার সেই বীরত্ব? ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সে সাড়ে তিন লাইন কবিতা বলল, যা ছিল খুবই সারগর্ভ ও অলংকারপূর্ণ। ‘কবিতা হ’ল আরবদের রেজিষ্টার’(الشِّعرُ دِيوانُ العَرَبِ)। এর মধ্যেই তাদের ইতিহাস ও ঘটনাবলীর রেকর্ড থাকে। সেই সাথে পাওয়া যায় তাদের অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর। যেমন ঐ ভীতিপূর্ণ অবস্থায় আদৌ কবিখ্যাতি নেই এমন একজন সাধারণ আরব ঐ সময়ের অবস্থা বর্ণনা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে চমৎকার কবিতা পাঠ করেছিল, তার তুলনা বিরল। কবিতাটিতে সে স্ত্রীর নিকটে পালিয়ে আসার কৈফিয়ত দিয়ে বলছে,
إنَّكِ لَوْ شَهِدْتِ يَوْمَ الْخَنْدَمَهْ + إذْ فَرَّ صَفْوَانُ وَفَرَّ عِكْرِمَهْ
وَأَبُو يَزِيدَ قَائِمٌ كَالْمُوتَمَهْ + وَاسْتَقْبَلَتْهُمْ بِالسُّيُوفِ الْمُسْلِمَهْ
يَقْطَعْنَ كُلَّ سَاعِدٍ وَجُمْجُمَهْ + ضَرْبًا فَلاَ يُسْمَعُ إلاَّ غَمْغَمَهْ
لَهُمْ نَهِيتٌ خَلْفَنَا وَهَمْهَمَهْ + لَمْ تَنْطِقِي فِي اللَّوْمِ أَدْنَى كَلِمَهْ
(১) ‘যদি তুমি খান্দামায় যুদ্ধের অবস্থা স্বচক্ষে দেখতে, যখন ছাফওয়ান ও ইকরিমা উর্ধ্বশ্বাসে পালাচ্ছিলেন’। (২) ‘কুরাইশের খতীব আবু ইয়াযীদ বহু ইয়াতীম সন্তান নিয়ে বিপর্যস্ত বিধবা মহিলার মত দাঁড়িয়েছিল। আর খান্দামা পাহাড় তাদেরকে উন্মুক্ত তরবারিসমূহ নিয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছিল’। (৩) ‘যেগুলি হাতের বাজু ও মাথার খুলিসমূহ তীব্র আঘাতে কচুকাটা করছিল। তখন কিছুই শোনা যাচ্ছিল না কেবল তাদের গুমগাম শব্দ ছাড়া’। (৪) ‘আমাদের পিছনে তখন কেবলই ছিল তাদের তর্জন-গর্জন ও হুমহাম শব্দ। এমতাবস্থায় তুমি আমাকে তিরষ্কারের কোন কথাই বলতে পারতে না’।[2]
অতঃপর ডান বাহুর সেনাপতি খালেদ বিন অলীদ (রাঃ) আসলাম, সুলাইম, গেফার, মুযায়না, জুহায়না প্রভৃতি আরব গোত্র সমূহকে নিয়ে মক্কার নিম্নভূমি দিয়ে ছাফা পাহাড়ে উপনীত হন। অন্যদিকে বামবাহুর সেনাপতি যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম (রাঃ) মক্কার উপরিভাগ দিয়ে প্রবেশ করে হাজূন (حَجُون) নামক স্থানে অবতরণ করেন। অতঃপর সেখানে তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য তাঁবু প্রস্ত্তত করেন এবং রাসূল (ছাঃ)-এর পতাকা গেড়ে দেন। যে স্থানটিতে এখন ‘বিজয় মসজিদ’(مسجد الفتح) অবস্থিত। একইভাবে আবু ওবায়দাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ) পদাতিক বাহিনী নিয়ে বাত্বনে ওয়াদীর পথ ধরে মক্কায় উপস্থিত হন। অতঃপর সবশেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেখানে পৌঁছে যান (আর-রাহীক্ব ৪০৩-০৪ পৃঃ)।[3]
[2]. যাদুল মা‘আদ ৩/৩৫৭, ইবনু হিশাম ২/৪০৮; ঐ, তাহকীক ক্রমিক ১৬৭৩, সনদ ‘মুরসাল’।
[3]. এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, মক্কার নিম্নভূমি ‘যূ-তুওয়া’ (ذُو طُوَى) পৌঁছলে বিজয়ের স্পষ্ট লক্ষণ দেখে রাসূল (ছাঃ) আল্লাহ প্রদত্ত বিজয়ের এই মহা সম্মান লাভে অত্যন্ত বিনীত হয়ে পড়েন এবং স্বীয় লাল চাদরের এক প্রান্ত ধরে হাওদার মাঝখানে মাথা নীচু করে দেন। যা তাঁর দাড়ি স্পর্শ করে’ (ইবনু হিশাম ২/৪০৫; আর-রাহীক্ব ৪০৩ পৃঃ)। বর্ণনাটির সনদ ‘যঈফ’ (আর-রাহীক্ব, তা‘লীক্ব ১৭২ পৃঃ)।