লগইন করুন
উত্তর: বান্দা তার আমলের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য কামনা করবে এবং জান্নাতে পৌঁছার চেষ্টা করবে।
আর যদি বান্দা তার আমলে অন্য কিছুর নিয়ত করে, তবে তাতে নিম্ন লিখিত ব্যাখ্যা রয়েছে।
১) যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্যের নৈকট্য লাভের নিয়ত করে এবং ইবাদাতের মাধ্যমে মানুষের প্রশংসা অর্জনের নিয়ত করে, তাহলে তার আমল বাতিল হয়ে যাবে। এটা শির্কের অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ বলেন,
«أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ»
“আমি সমস্ত শরীকদের চেয়ে শির্ক থেকে অধিক মুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করল, যাতে সে আমার সাথে অন্য কোনো কাউকে শরীক করল, আমি তাকে এবং সে যা শরীক করল, তাকে প্রত্যাখ্যান করব।”[1]
২) যদি আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য ব্যতীত দুনিয়ার কোনো স্বার্থ হাসিলের নিয়ত করে যেমন, নেতৃত্ব লাভ, সম্মান লাভ ইত্যাদি তাহলে তার আমল বাতিল হয়ে যাবে। এ ধরণের আমল তাকে আল্লাহর নৈকট্য দান করবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيۡهِمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ فِيهَا وَهُمۡ فِيهَا لَا يُبۡخَسُونَ ١٥ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَيۡسَ لَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا ٱلنَّارُۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيهَا وَبَٰطِلٞ مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٦﴾ [هود: ١٥، ١٦]
“যে ব্যক্তি পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা করে, হয় আমরা তাদের দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হবে না। এরাই হলো সেসব লোক যাদের জন্য আখেরাতে আগুন ছাড়া অন্য কিছু নেই। তারা দুনিয়াতে যা কিছু করেছিল, সবই বরবাদ করেছে, আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট।” [সূরা হূদ, আয়াত: ১৫-১৬]
প্রথম প্রকার শির্ক এবং এ প্রকার শির্কের মাঝে পার্থক্য এ যে, প্রথম লোকটি আল্লাহর ইবাদাতকাvরী হিসেবে মানুষের প্রশংসা অর্জনের নিয়ত করেছে। আর দ্বিতীয় লোকটি আল্লাহর ইবাদাতকারী হিসেবে মানুষের প্রশংসা অর্জনের নিয়ত করে নি। মানুষের প্রশংসার প্রতি তার কোনো ভ্রুক্ষেপও নেই।
৩) আমল শুরু করার সময় আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিয়ত করেছে; কিন্তু পার্থিব স্বার্থ এমনিতেই চলে আসার সম্ভাবনা থাকে। যেমন, পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে ইবাদাতের নিয়তের সাথে সাথে শারীরিক পরিচ্ছন্নতা অর্জনের নিয়ত করা, সালাতের মাধ্যমে শরীর চর্চার নিয়ত করা, সাওমের মাধ্যমে শরীরের ওজন কমানো ও চর্বি দূর করা এবং হজের মাধ্যমে পবিত্র স্থান এবং হাজীদেরকে দেখার নিয়ত করা। এ রকম করাতে ইবাদাতে ইখলাছের ছাওয়াব কমে যাবে। আর যদি ইবাদাতের নিয়তটাই প্রবল হয়, তা হলে পরিপূর্ণ প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হবে। আর ঐ পরিমাণ মিশ্রিত নিয়ত তার কোনো ক্ষতি করবে না- মিথ্যা ও গুনাহ করার দ্বারা যেমন হয়। হজের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَبۡتَغُواْ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكُمۡۚ﴾ [البقرة: ١٩٨]
“তোমাদের ওপর তোমাদের রবের অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় কোনো পাপ নেই।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৯৮]
আর যদি ইবাদাতের নিয়ত ছাড়া অন্য কোনো নিয়ত প্রবল থাকে তাহলে দুনিয়াতে যা অর্জন করল ছাওয়াব হিসেবে কেবল তাই পাবে, পরকালে ছাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। এ রকম করার কারণে সে ব্যক্তি পাপী হওয়ার আশংকা রয়েছে। কেননা সে আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমে দুনিয়ার নগণ্য স্বার্থের নিয়ত করেছে। এ রকম ব্যক্তির ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنۡهُم مَّن يَلۡمِزُكَ فِي ٱلصَّدَقَٰتِ فَإِنۡ أُعۡطُواْ مِنۡهَا رَضُواْ وَإِن لَّمۡ يُعۡطَوۡاْ مِنۡهَآ إِذَا هُمۡ يَسۡخَطُونَ ٥٨﴾ [التوبة: ٥٨]
“তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে, যারা সাদ্কা বন্টনে আপনাকে দোষারোপ করে। সদকা থেকে কিছু পেলে তারা সন্তুষ্ট হয় এবং না পেলে অসন্তুষ্ট হয়।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৫৮]
আবু দাউদ শরীফে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, একজন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কোনো লোক যদি দুনিয়ার কোনো সম্পদ লাভের আশায় জিহাদে যায় তবে তার ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হবে। লোকটি কয়েকবার প্রশ্ন করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবারই বললেন, সে ব্যক্তি ছাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ»
“যে ব্যক্তি দুনিয়ার কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য হিজরত করবে অথবা কোনো মহিলাকে বিবাহ করার জন্য হিজরত করবে, তার হিজরত তার নিয়ত অনুযায়ীই হবে।”[2]
আর যদি তার কাছে উভয়টি সমান হয় অর্থাৎ ইবাদাতের নিয়ত কিংবা অন্য কোনো নিয়তের কোনোটিই প্রবল না হয়, তাহলেও বিশুদ্ধ কথা হলো সে ছাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। যেমনিভাবে কোনো ব্যক্তি আল্লাহর জন্য এবং অন্যের জন্য ইবাদাত করলে ছাওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে।
মোটকথা অন্তরের নিয়তের ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমেই বান্দা কখনো সিদ্দীকীনের স্তরে পৌঁছে যায় আবার কখনো নিকৃষ্টতম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এ জন্যই কোনো কোনো সালাফে সালেহীন বলেছেন, এখলাছের ব্যাপারে আমি যতটুকু নাফসের সাথে জিহাদ করেছি, অন্য কোনো ব্যাপারে আমার নাফসের সাথে ততটুকু জিহাদ করি নি।আমরা আল্লাহর কাছে নিয়ত ও আমলে ইখলাস কামনা করি।
[2] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: কিতাবু বাদউল অহী; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ইমারাত।