লগইন করুন
(১) যুদ্ধ শুরুর কিছু পূর্বে আবু সুফিয়ান আনছারদের কাছে এই মর্মে পয়গাম পাঠান যে, তোমরা আমাদের ও আমাদের স্বগোত্রীয়দের মাঝখান থেকে সরে দাঁড়াও। আমরা তোমাদের থেকে সরে আসব। তোমাদের সাথে আমাদের যুদ্ধের কোন প্রয়োজন নেই’। কিন্তু আনছারগণ তাদের কূটচাল বুঝতে পেরে তাদেরকে ভীষণভাবে তিরষ্কার করে বিদায় দেন।
(২) প্রথম প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কুরায়েশ পক্ষ দ্বিতীয় পন্থা গ্রহণ করল। ইসলামের পূর্বে আউস গোত্রের অন্যতম নেতা ও পুরোহিত ছিলেন আবু ‘আমের আর-রাহেব’। আউস গোত্র ইসলাম কবুল করলে তিনি মক্কায় চলে যান এবং কুরায়েশদের সঙ্গে মিলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। কুরায়েশদের ধারণা ছিল যে, তিনি ময়দানে উপস্থিত হ’লে আনছাররা ফিরে যাবে। সেমতে তিনি ময়দানে এসে আনছারদের উচ্চকণ্ঠে ডাক দেন ও তাদেরকে ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হ’ল না (যাদুল মা‘আদ ৩/১৭৫)। সংখ্যার আধিক্য ও সরঞ্জামের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও মুসলমানদের ব্যাপারে কুরায়েশরা কিরূপ ভীত ছিল, উপরোক্ত ঘটনায় তার কিছুটা অাঁচ করা যায়।
উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মদীনায় হিজরতের দিন থেকে হোনায়েন যুদ্ধ পর্যন্ত বড় বড় সকল রণাঙ্গনে আবু ‘আমের আর-রাহেব মুসলমানদের বিরুদ্ধে অংশ নেয়। সেই-ই ওহোদের যুদ্ধে গোপনে গর্ত খুঁড়ে রাখে। যাতে পড়ে গিয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আহত হন এবং তিনি মারা গেছেন বলে রটিয়ে দিয়ে মুসলিম বাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালানো হয়। তারই চক্রান্তে ক্বোবায় ‘মসজিদে যেরার’ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারই প্ররোচনায় রোম সম্রাট সরাসরি মদীনায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেন। যা প্রতিরোধ করার জন্য প্রচন্ড দুর্ভিক্ষাবস্থার মধ্যেও রাসূল (ছাঃ)-কে রোম সীমান্ত অভিমুখে ৯ম হিজরীতে ‘তাবূক’ অভিযান করতে হয়। অবশেষে সে খ্রিষ্টানদের কেন্দ্রস্থল সিরিয়ার ক্বিন্নাসরীন এলাকায় আত্মীয়-স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। অথচ তার পুত্র হানযালা ছিলেন বিখ্যাত ছাহাবী এবং ওহোদ যুদ্ধের খ্যাতিমান শহীদ ‘গাসীলুল মালায়েকাহ’। আবু ‘আমের-এর ক্ষোভের কারণ ছিল তার ধর্মীয় নেতৃত্ব হারানো। যেমন ইবনু উবাইয়ের ক্ষোভের কারণ ছিল তার রাজনৈতিক নেতৃত্ব হারানো।
ইতিমধ্যে আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে উৎবাহর নেতৃত্বে কুরায়েশ মহিলারা বাদ্য বাজিয়ে নেচে গেয়ে নিজেদের সৈন্যদের উত্তেজিত করে তুলল। এক পর্যায়ে তারা গেয়ে উঠল,
إنْ تُقْبِلوا نُعانِقْ + ونَفْرِشُ النَّمارِقْ
او تُدْبِروا نُفارِقْ + فِراقَ غيرَ وَامِقْ
‘যদি তোমরা অগ্রসর হও, তবে আমরা তোমাদের আলিঙ্গন করব ও তোমাদের জন্য শয্যা রচনা করব’। ‘আর যদি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো, তবে আমরা পৃথক হয়ে যাব তোমাদের থেকে চিরদিনের মত’।[1] এ কবিতা শুনে তাদের সবাই একযোগে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল।