নবীদের কাহিনী ২৫. হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাক্কী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ষড়যন্ত্র কাহিনী (حكاية المؤامرة)

উল্লেখ্য যে, হিজরতের প্রত্যক্ষ কারণ হিসাবে কুরায়েশদের হত্যার ষড়যন্ত্রে ১৪জন নেতার বৈঠক ও সে বৈঠকে শায়খে ছান‘আর রূপ ধারণ করে ইবলীসের উপস্থিতি বিষয়ে ইবনু ইসহাকের বর্ণনা (ইবনু হিশাম ১/৪৮০-৮১) বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়।[1] উক্ত ঘটনা উপলক্ষে সূরা আনফাল ৩০ আয়াত[2] নাযিল হয় বলাটাও ঠিক নয়। কেননা সূরা আনফাল নাযিল হয়েছিল হিজরতের দেড় বছর পরে বদর যুদ্ধ উপলক্ষে। যা ২য় হিজরীর রামাযান মাসে সংঘটিত হয়। দ্বিতীয়তঃ কাফেরদের গৃহ অবরোধের মধ্য থেকে বের হবার সময় রাসূল (ছাঃ) তাদের দিকে বালু নিক্ষেপ করেন। যা তাদের চোখে ও মাথায় ভরে যায় এবং তিনি এ সময় সূরা ইয়াসীনের ১-৯ আয়াতগুলি বা কেবল ৯ আয়াতটি পাঠ করেন। অতঃপর শয়তান এসে তাদের বলে ‘আল্লাহ তোমাদের নিরাশ করুন! মুহাম্মাদ বেরিয়ে গেছে’।[3] এটির সনদ ‘মুরসাল’। যা গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া কুরায়েশরা কিভাবে জানল যে, ঐ রাতে রাসূল (ছাঃ) হিজরত করবেন। আর আবুবকর (রাঃ) ছিলেন তার নিজের বাড়ীতে। তাহ’লে দু’জন কিভাবে একত্রিত হয়ে ছওর গুহায় চলে গেলেন? অথচ আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে বুঝা যায় যে, আবুবকর (রাঃ)-এর গৃহ থেকেই তাঁরা পৃথক বাহনে করে রওয়ানা হয়েছিলেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, কুরায়েশদের ষড়যন্ত্র কাহিনী যদি সত্য হবে, তাহ’লে রাসূল (ছাঃ)-এর নিজ গোত্র বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিব ছিল কোথায়? সবচেয়ে নিকটতম ব্যক্তি চাচা আববাস, যিনি আক্বাবায়ে কুবরার বায়‘আতে উপস্থিত ছিলেন এবং হিজরতের পর ভাতিজার নিরাপত্তা দানের ব্যাপারে ইয়াছরেবী প্রতিনিধি দলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, তিনি তখন কোথায় ছিলেন? (মা শা-‘আ ৭২-৭৬ পৃঃ)। বরং এটাই সঠিক যে, উপরোক্ত নেতাগণ রক্তপিপাসু দুশমন ছিলেন। আর সে কারণেই রাসূল (ছাঃ) গোপনে হিজরত করেন এবং আলী ইবনু আবী ত্বালিবকে রেখে আসেন। তিনি সেখানে তিন দিন তিন রাত অবস্থান করেন এবং রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে যার যা আমানত ছিল, সব তাদেরকে ফিরিয়ে দেন। অতঃপর তিনি হিজরত করে মদীনায় যান ও রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে মিলিত হন।[4]

[1]. উক্ত ১৪ জন নেতার নাম নিম্নরূপ:

(১) বনু মাখযূম গোত্রের আবু জাহল বিন হিশাম। বনু নওফাল বিন ‘আব্দে মানাফ গোত্রের (২) জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইম (৩) তু‘আইমাহ বিন ‘আদী (৪) হারেছ বিন ‘আমের। বনু ‘আব্দে শামস বিন ‘আব্দে মানাফ গোত্রের (৫) উৎবাহ ও (৬) শায়বাহ বিন রাবী‘আহ (৭) আবু সুফিয়ান বিন হারব। বনু ‘আব্দিদ্দার গোত্রের (৮) নাযার বিন হারেছ। বনু আসাদ বিন আব্দুল ওযযা গোত্রের (৯) আবুল বাখতারী বিন হিশাম (১০) যাম‘আহ ইবনুল আসওয়াদ (১১) হাকীম বিন হেযাম। বনু সাহম গোত্রের (১২) নুবাইহ ও (১৩) মুনাবিবহ ইবনুল হাজ্জাজ। বনু জুমাহ গোত্রের (১৪) উমাইয়া বিন খালাফ (ইবনু হিশাম ১/৪৮১; আর-রাহীক্ব ১৫৯ পৃঃ)।

[2]. وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللهُ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ- ‘স্মরণ কর, যখন (মক্কার) কাফেররা (দারুন নাদওয়াতে বসে) তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল তোমাকে বন্দী করার জন্য অথবা হত্যা করার জন্য অথবা বের করে দেবার জন্য (কিন্তু তারা কিছুই করতে পারেনি)। বস্ত্ততঃ তারা চক্রান্ত করে আর আল্লাহ্ও কৌশল করেন। আর আল্লাহই শ্রেষ্ঠ কৌশলী’ (আনফাল ৮/৩০)।

[3]. ইবনু হিশাম ১/৪৮২-৮৪; আর-রাহীক্ব ১৬৩ পৃঃ।

[4]. আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/১৫৪৬, ৫/৩৮৪ পৃঃ; সনদ হাসান; মা শা-‘আ ৭৭ পৃঃ।